ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১

বিজ্ঞানীরা কি এবার মেনে নেবেন মহানবী (সাঃ) এর চন্দ্র বিভাজনের ঘটনা?

প্রকাশিত: ১২:০১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বিজ্ঞানীরা কি এবার মেনে নেবেন মহানবী (সাঃ) এর চন্দ্র বিভাজনের ঘটনা?

ইসলাম ধর্মে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার ঘটনা একটি আলোচিত বিষয়। হাদিসে উল্লেখ রয়েছে যে, মক্কার মুশরিকদের সামনে আল্লাহর নিদর্শন প্রদর্শন করার জন্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইশারায় চাঁদ দুই ভাগ হয়ে যায়। এ ঘটনাটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুজিজা হিসেবে বিবেচিত হয়। সম্প্রতি নাসার তোলা চাঁদের ছবি এবং গবেষণায় চাঁদের ভূপৃষ্ঠে ফাটলের অস্তিত্বের প্রমাণ মেলার পর, অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—এ কি ইসলামের ঐতিহাসিক ঘটনার সত্যতার বৈজ্ঞানিক স্বীকৃতি?

ইতিহাসে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার ঘটনা: তাফসীরে মারিফুল কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী, চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার ঘটনাটি ঘটেছিল মক্কার মিনা প্রান্তরে, নবুয়ত প্রাপ্তির নবম বছরে। মক্কার মুশরিকরা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আল্লাহর নিদর্শন দেখানোর দাবি করলে, তার হাতের ইশারায় চাঁদ দুই ভাগ হয়ে যায়। হাদিস অনুযায়ী, চাঁদের একটি অংশ ছিল পাহাড়ের উপরে এবং অপর অংশ ছিল নিচে। পরে চাঁদ আবার জোড়া লেগে যায়। নবীজি তখন সাহাবীদের এই ঘটনার সাক্ষী থাকতে বলেন।

কুরআনের সূরা আল-কামারে (৫৪:১-২) আল্লাহ বলেছেন: "কেয়ামত আসন্ন এবং চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছে। তারা যদি কোনো নিদর্শন দেখে, মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, 'এ তো চিরাচরিত জাদু।'"

বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ: নাসার তোলা চন্দ্রপৃষ্ঠের ছবিতে ফাটলের চিহ্ন দেখা যায়। নাসার ২০১৯ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, চাঁদে যে ফাটলের দাগ রয়েছে, তা উল্কাপিণ্ডের আঘাতে সৃষ্টি হয়েছে। তবে কিছু ফাটলের প্রকৃতি এমন, যা উল্কাপিণ্ড বা বাইরের কোনো আঘাতে হওয়া সম্ভব নয়। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, চাঁদের টেকটনিক প্লেটের নড়াচড়ার ফলেও এমন ফাটল সৃষ্টি হতে পারে।

এছাড়া মিশরীয় গবেষক আবু ঈসা ২০২০ সালে তার গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেন, চাঁদের ফাটলগুলোর বয়স সর্বোচ্চ ১৩৮৮ বছর হতে পারে, যা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশার সময়ের সাথে মিলে যায়। তিনি আরও বলেন, এই ফাটলের গভীরতা এবং বিস্তার এমন যে, তা চাঁদের কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছেছে।

ঐতিহাসিক প্রমাণ: চাঁদের দ্বিখণ্ডিত হওয়ার ঘটনাটি শুধু মক্কার মানুষই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের লোকেরাও দেখেছে বলে ঐতিহাসিক প্রমাণ রয়েছে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফির এক প্রতিবেদনে পাঁচজন সাধুর এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

ভারতের কেরালার রাজা চেরামান পেরুমল এই ঘটনা দেখে মুগ্ধ হন। পরবর্তীতে তিনি আরব ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা জানতে পারেন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। নবীজি তার নাম রাখেন তাজউদ্দিন।

বিশ্বাস বনাম বিজ্ঞান: অনেক গবেষক এই ঘটনাকে রূপক বা ভবিষ্যতের কোনো ঘটনার প্রতীক হিসেবে দেখেন। তবে সহি হাদিসের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বেশিরভাগ মুসলিম গবেষক বিশ্বাস করেন যে, চাঁদের দ্বিখণ্ডিত হওয়ার ঘটনা ইতোমধ্যে ঘটেছে এবং এটি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে আল্লাহ ঘটিয়েছেন।

বিজ্ঞান এখনো এই ঘটনার পূর্ণ সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে চাঁদের ফাটলের দাগ এবং ইসলামের ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র অনেকের মনে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, "তিনি তার নিদর্শন দেখান; যারা বিশ্বাস করতে চায়, তারা তা গ্রহণ করে।" এই ঘটনাও হয়তো সেই নিদর্শনেরই একটি।

রাজু

×