ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

ড. ইউনূস গণঅভ্যুত্থানের ফসল, নেতা নন: ফরহাদ মজহার

রাবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

ড. ইউনূস গণঅভ্যুত্থানের ফসল, নেতা নন: ফরহাদ মজহার

ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গণঅভ্যুত্থানের ফসল কিন্তু নেতা নন বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘ড. ইউনূস মহা ভুল করেছেন। তিনি আমাদের জুলাই আন্দোলনের ঘোষণাপত্র দিতে দেননি। আমাদের হাতে কোনো বিপ্লবী দলিল নেই। আগামী দিনে এর ফলাফল জনতাকে ভোগ করতে হবে।’

আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে সেন্টার ফর হেরিটেজ স্টাডিজ সভার আয়োজনে ‘গণঅভ্যুত্থান: বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র না থাকায় আমরা দুর্বল হয়েছি উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘এই অভ্যুত্থানের গণ অভিপ্রায় হচ্ছে গণসার্বভৌমত্ব। এর প্রথম ধাপ হবে সংবিধানে গণসার্বভৌমত্ব উল্লেখ করা। কিন্তু আমরা হাসিনার সংবিধানটাই ছুড়ে ফেলতে পারিনি। এর বদলে আমরা করেছি কয়েকটি সংস্কার কমিশন। এর নেতৃত্বে যারা ছিলেন, তারা অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। কমিশনগুলো জনগণের কাছে থেকে কথা শোনেনি। এতে আমরা ক্রমশ দুর্বল হয়েছি। ফলে যারা আপনাদের অশান্তিতে রেখেছে , আপনারা তাদের বিচার করতে পারবেন না। তাই গণসার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাষ্ট্রে নতুন স্বাধীন গঠনতন্ত্র লাগবে।’

রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে বাতিল করে জনগণের সার্বভৌমত্বকে মূল্যায়ন করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বাহাত্তরের সংবিধান বাংলাদেশের জনগণ প্রণয়ন করেনি। যারা পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়ণের জন্য নির্বাচিত হয়েছিল, তাঁরাই আমাদের ওপর তাদের সেই সংবিধান চাপিয়ে দিয়েছিল। একাত্তরের ১০ এপ্রিলের ঘোষণাপত্রে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার বাদ দিয়ে  তারা ‘সমাজতন্ত্র, বাঙালী জাতীয়তাবাদ’সহ ৪টি মূলনীতি করেছিল। রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে আমাদের অধিকার আছে, আমরা কী চাই সেটা পরিষ্কার করে বলা। আমরা এই সংবিধানকে বাতিল করে জনতার অভিপ্রায়ের নতুন গঠনতন্ত্র চাই।’

গণসার্বভৌমত্বের নতুন সংবিধানে ৩টি বিষয় উল্লেখ করার দাবি জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘প্রথমত রাষ্ট্র এমন আইন বা নীতি প্রণয়ন করতে পারবে না, যাতে জনগণের ব্যক্তিস্বার্থ ও মর্যাদা নষ্ট হয়। দ্বিতীয়ত, প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংস করবে এমন আইন বা নীতি রাষ্ট্র গ্রহণ করতে পারবে না। তৃতীয়ত, রাষ্ট্র এমন কোনো আইন বা নীতি গ্রহণ করতে পারবে না, যেন জীবন ও জীবিকা ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।’

পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও সেখানে ধর্মের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আধুনিক জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রে ইসলামের খোঁজ করি। আধুনিক রাষ্ট্র ক্যাপিটাল দিয়ে চলে। আমরা সারাক্ষণ ক্যাপিটালের অধীনে থাকি। পুঁজিবাদের অধীনে থেকে ধর্ম প্রতিষ্ঠা হবে না। আগামী দিনের লড়াই হবে এই পুঁজির বিরুদ্ধে। এই লড়াইয়ে জাতীয়তাবাদে বিভক্ত করে আলাদা হওয়া যাবে না। কারণ দুনিয়াতে জাতীয়তাবাদের যুগ শেষ হয়ে গিয়েছে।’  

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসঊদ। প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব, বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী।

আসিফ

×