
ছবি: সংগৃহীত
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক আবহে নতুন মোড় দেখা দিয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও, বর্তমান সময়ে এই সম্পর্কে কিছুটা চিড় ধরেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এর পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে আসছে শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়া এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাস্তবতা।
দীর্ঘ ১৭ বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তবে ভারতের সরকার তাকে আশ্রয় দিলেও, তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন আর দেশটির তেমন কোনো আগ্রহ নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসিনার রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা এখন প্রায় শূন্য। তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি হওয়া এবং বাংলাদেশের জনগণের ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সেই দাবিকে আরো জোরালো করেছে।
বাংলাদেশ এখন নতুন কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিগন্তে পা রাখছে। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক মহলে দেশের ভাবমূর্তি নতুনভাবে গড়ে উঠছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের বর্তমান প্রশাসন শেখ হাসিনার সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বজায় রাখাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক টানাপোড়েনও মোদি সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি এবং বর্তমান রিপাবলিকান প্রশাসনের বাণিজ্যিক চাপ সামাল দিতেই হিমশিম খাচ্ছে নয়াদিল্লি। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে. ডি. ভান্সের সদ্য সমাপ্ত ভারত সফরও মূলত এই ইস্যু ঘিরেই আয়োজিত হয়েছে। যদিও অনেকেই আশা করেছিলেন, এই সফরে বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ আসবে, বাস্তবে তা হয়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সফর মোদি সরকারের জন্য একটি কূটনৈতিক বার্তা। ভারত এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারসাম্য রক্ষার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। শেখ হাসিনা বা তার দলীয় রাজনীতিকে গুরুত্ব না দিয়ে, তারা ভবিষ্যতের বাংলাদেশের সাথে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়তেই বেশি আগ্রহী। এতে একদিকে যেমন ভারত নিজস্ব কূটনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে, অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশের জনগণের প্রত্যাশার প্রতিও সম্মান জানানো হবে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার প্রতি ভারত সরকারের আগ্রহের অভাব মূলত রাজনৈতিক বাস্তবতা, কূটনৈতিক ভারসাম্য এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক চাপে মোদি সরকারের কৌশলগত অবস্থান। পরিবর্তিত এই ভূরাজনীতিতে ভারতের সিদ্ধান্ত, দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এক নতুন দিকনির্দেশনা দিচ্ছে।
আসিফ