
ছবি : সংগৃহীত
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, কেবলমাত্র একটি শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। তাঁর মতে, এমনকি যদি ফেরেশতা দিয়েও নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়, তবুও তারা একা ভালো নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না। কারণ, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা, যা অনেকটা একটি অর্কেস্ট্রা দলের মতো কাজ করে। এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দল, অন্তর্বর্তী সরকার, এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য।
বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে যারা রয়েছেন, সাইফুল হক তাঁদের প্রতি আস্থা রেখে বলেন, তারা যদি আন্তরিক হন এবং কোনো রাজনৈতিক পক্ষপাত থেকে মুক্ত থেকে কাজ করেন, তাহলে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, দেশের জনগণ দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা তৈরির কাজ সম্পন্ন করেছে এবং ডিসেম্বরকে সামনে রেখে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রশাসনিক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। তিনি জানান, কমিশনকে তাঁদের দলের পক্ষ থেকে ৩১টি লিখিত প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে, যার অধিকাংশই নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং কমিশনের সংশ্লিষ্টতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এছাড়া কিছু মৌখিক প্রস্তাবনাও কমিশনের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া হয়েছে, যা একটি অর্থবহ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
সাইফুল হক বলেন, তাঁদের সুপারিশের মধ্যে অন্যতম হলো মনোনয়ন ফি সর্বোচ্চ ৫০০০ টাকায় সীমিত রাখা এবং নির্বাচনী ব্যয়ের সীমা ১০ লক্ষ টাকার মধ্যে রাখা। বর্তমানে যেভাবে ভোটারপ্রতি ১০ টাকা হিসাব করে যে বিশাল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে, তা একটি অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক সংস্কৃতি গড়ে তুলছে। এই টাকার খেলা পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাকে কলুষিত করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, এখন নির্বাচনের মাঠে প্রবেশ করছে টাকাওয়ালা, দুর্বৃত্ত, মাফিয়া ও প্রভাবশালী মহল, যারা নির্বাচনকে একটি ব্যবসায়িক বিনিয়োগ হিসেবে দেখে। কিন্তু দেশের মানুষ এখন এসবের বাইরে গিয়ে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিকে দেখতে চায়—যে তাদের অধিকার, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও প্রয়োজনের প্রতিনিধিত্ব করবে।
তিনি বলেন, দেশের আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি সমান সুযোগের পরিবেশ—একটি ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’—নিশ্চিত করতে হবে। যেখানে সকল রাজনৈতিক দল এবং অংশীজনরা সমান সুযোগ পাবে প্রচার, সংগঠন ও নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিতে হবে, প্রয়োজনে কিছু অপ্রিয় সিদ্ধান্তও গ্রহণ করতে হবে, যা হয়তো সকলের পছন্দ নাও হতে পারে, কিন্তু গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার জন্য যা অপরিহার্য।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন যেন কোনো রাজনৈতিক চাপ, হুমকি বা রক্তচক্ষুর পরোয়া না করে তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব দৃঢ়তা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে পালন করে। এদেশের জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কমিশনের ভূমিকা হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাইফুল হক আশা প্রকাশ করেন যে, এই নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন উদাহরণ হয়ে উঠবে—যা শুধু দেশের জনগণের নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও গ্রহণযোগ্যতা পাবে। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং সব রাজনৈতিক দলকে একযোগে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।
---
আঁখি