
ছবি: সংগৃহীত
পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রদলের কাউন্সিলে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নিষিদ্ধ সংগঠন রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা।
জানা যায়, গত ২০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রদলের কাউন্সিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী দায়িত্ব পালন করেছেন । এতে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে রাবি শাখা ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মীও কাজ করেছেন। তবে এতে নিষিদ্ধ সংগঠন রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতার প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। একই মঞ্চে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীনের সঙ্গে তার ছবিও রয়েছে ।
হঠাৎ দলবদলকারী এই ছাত্রলীগ নেতা হলেন রাবি সৈয়দ আমীর আলী হল শাখার ছাত্রলীগের সহসভাপতি শাহাদাত হোসেন। কমিটির পাতায় নাম থাকা সত্বেও এ পদের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও হল শাখার একাধিক নেতা তার পদের বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুসহ একাধিক নেতার সঙ্গে ফুলেল শুভেচছা বিনিময়ের একাধিক ছবি তিনি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তিনি তা ফেসবুক থেকে সরিয়েও নেন। বাবুর সাথে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে দেখাও করেছেন তিনি। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা জেবর আলীর নির্বাচনী প্রচারণাতেও সম্মুখ সারিতে ছিলেন তিনি। তাছাড়া গত বছরের ১৬জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সরাসরি আন্দোলনে নামার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। এই ছাত্রলীগ নেতাকে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান আশ্রয় দিয়েছেন বলেও অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি রাবি শাখা ছাত্রদলের একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন।
তবে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে ওই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, 'কোচিং সেন্টার পরিচালনা করার কারণে বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগকে যেন চাঁদা দিতে না হয়, এজন্য তাদের সাথে লিঁয়াজো করে চলতে হয়েছে। আর আমি ছাত্রলীগের কোন পদে ছিলাম না। তবে তাদের সাথে আমার কোচিং সেন্টার পরিচালনার জন্য মেলামেশা ছিল। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আমার আত্মীয়, তাই তার নির্বাচনে সহযোগিতা করেছি।'
অভিযোগ অস্বীকার করলেও তার পক্ষে যথাযথ কারণ দেখাতে পারেননি তিনি। তবে বিএনপির সদস্যপদ পূরণের রশিদ দেখিয়েছেন।বর্তমানে ছাত্রদলের কাউন্সিলে দায়িত্ব পালন ও দল পাল্টানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, 'আমি আগে থেকেই ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম। তবে ব্যবসায়িক কারণে ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে লিঁয়াজো করে চলতে হতো। আমি পাবনায় একটা কাজে গিয়ে শাখা ছাত্রদলের নেতাদের সাথে দেখা করে দায়িত্ব পালন করেছি।
অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান মিঠু বলেন, 'আমি রাজনীতি করি। ক্যাম্পাসে এসে অনেকেই আমার সাথে ছবি তুলে। আর পাবনার ঘটনায় শাহাদাত তার ব্যক্তিগত কাজে গিয়েছিল।আমাদের সফরসঙ্গী বা দলের অংশ হিসেবে যায় নাই। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক হিসেবে পরিচয় দিলে তার সাথে কথা হয়। মঞ্চে নাসির ভাইয়ের সাথে অনেকই ছবি তুলেছে। তাই হয়তো শাহাদাতও ছবি তুলেছে।'
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, 'শাহাদাত যে ছেলেটি নিয়ে কথা আসছে সে উক্ত কাউন্সিল-২০২৫ এর সফর সঙ্গী না। সে পাবনা থাকায় রাবি যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল মিঠুর ক্যাম্পাসের ছোট ভাই হিসাবে দেখা করতে এসে তার পাশে বসে এবং আমাদের ব্যস্ততার মাঝে কোন এক সময় কারণ ছাড়াই ছবি তুলে ফেলে। সে স্টেজে ছিল না। ছবি তুলেই নেমে গেছে। আমি এসব জানার পর মিঠুর কাছে জবাব চাই। জবাবে মিঠু বলে সে আওয়ামী লীগ নেতাদের দায়েরকৃত নাশকতা মামলার ১৫ নং আসামী। এছাড়াও সে ছেলেটি নলখালা ইউনিয়ন কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক। এজন্য পাবনা থাকায় সে দেখা করতে চাইলে তাকে দেখা করতে বলি। কিন্তু সে উপচে পড়া ভিড়ের সুযোগে আমাদের না জানিয়ে কয়েকটি ছবি তুলে ফেলছে।
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের কোন দায়িত্বশীল নেতার সাড়া পাওয়া যায়নি।
আসিফ