
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী তৈরি হওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টি
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী তৈরি হওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টি। এখনো দল গোছানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতারা। আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি রয়েছে দলটির। আগামী নির্বাচন নিয়ে বড় রাজনৈতিক দলের চাপ থাকলেও এনসিপি মৌলির সংস্কারের আগে নির্বাচন চায় না। তাদের দাবি, কোনো ধরনের মৌলিক পরিবর্তন ছাড়া নির্বাচনের দিকে গেলে সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন সংস্কার না হলে নিবন্ধনের জন্যও আবেদন করবে না দলটি। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কার না হলে সে নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অংশগ্রহণ করবে কি-না, সেটাও বিবেচনাধীন থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিকের সঙ্গে বৈঠক করেছে এনিসিপি। বৈঠক শেষে নাহিদ ইসলাম বলেন, মাঠ প্রশাসন আমাদের কাছে মনে হয়েছে নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। বিভিন্ন জায়গায় এনসিপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চলছে, সেই জায়গায় প্রশাসন নিশ্চুপ। সেই বিষয়গুলো আমরা বলেছি। প্রশাসন বিএনপির পক্ষে রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে যে চাঁদাবাজি চলছে, সেখানেও প্রশাসন নিশ্চুপ। এই ধরনের প্রশাসন থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য একটি নিরপেক্ষ প্রশাসন, আমলাতন্ত্র ও পুলিশ আমাদের ঠিক করতে হবে।
নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন। আমরা সেটিতে প্রাথমিক সমর্থন দিয়েছি। কিন্তু কী কী কাজ করে নির্বাচনে যাচ্ছি, সেটি বিবেচনাধীন।
এদিকে নির্বাচন কমিশনে দল নিবন্ধনের সময় আরও তিন মাস বাড়ানোর জন্য গত ১৭ এপ্রিল আবেদন করেছে এনসিপি। বিষয়টি নিয়ে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সংস্কার সময়ন্বক কমিটির কো-অর্ডিনেটর সারোয়ার তুষার বলেন, মৌলিক সংস্কার ও নতুন দল নিবন্ধনের জন্য আবেদনের সময়সীমা ন্যূনতম ৯০ দিন বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছে। তাদের একটি প্রতিনিধিদল ইসির সঙ্গে দেখা করে উদ্বেগের বিষয়গুলো তুলে ধরবে।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ দলের নিবন্ধন ইস্যুতে জনকণ্ঠকে বলেন, যে নিবন্ধন প্রথা রয়েছে আমরা মনে করি এটা ফ্যাসিবাদী প্রথা। ফ্যাসিস্ট গভর্নমেন্ট ও ওয়ান ইলেভেনের ভারতীয় দোসর গভর্নমেন্টের প্রবর্তিত জিনিস। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের প্রতিটা নাগরিকের নির্বাচন করার অধিকার আছে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট যে নির্বাচন প্রথা চালু করছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী পাঁচ পার্সেন্ট, ১০০টা জেলা কমিটি লাগবে, উপজেলা কমিটি লাগবে, অফিস লাগবে; এটা একটা ফ্যাসিবাদের লক্ষণ আমরা এই কালো আইন বাতিল চাই।
নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন শিশির জনকণ্ঠকে বলেন, যখনই নির্বাচন হোক, আমাদের প্রস্তুতি আছে। ডিসেম্বরে হোক কিংবা জুনে হোক আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে আমাদের জাতীয় নাগরিক কমিটি ৪০০ উপজেলা কমিটি দিয়েছি। আমাদের ফিটনেস আছে। ইনশা আল্লাহ আমরা পারব। সবার প্রথম আমরা নির্বাচন কমিশনের সংস্কার চাই। আমরা নিবন্ধন নামের প্রথা কালো আইন বাতিল চাই। আমরা ৩০০ আসনে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখনো কোথাও প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়নি। সময় হলেই আমরা সব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করব।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, আমরা বরাবরই দাবি করে আসছি, জাতীয় নির্বাচনের আগে আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাই। একই সঙ্গে গণপরিষদ নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে দাবি করছি।
জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন আগাতে চাই না, পেছাতেও চাই না। জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী জনগণ যখন চায়, তখন হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
সারাদেশে কমিটি দেওয়ার বিষয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ডা. জাহিদুল বারী জনকণ্ঠকে বলেন, এনসিপির কমিটিগুলো দ্রুত দিয়ে দেব, আমাদের কেবল কেন্দ্রীয় কমিটি হয়েছে, এখনো কোনো জেলা কমিটি হয়নি। জেলা কমিটিগুলো খুব দ্রুত দিতে পারব বলে আশা করি।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা শহীদ পরিবার এবং দেশের জনগণের প্রত্যাশা যেটা, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা; আমরা এর জন্য পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা কর্মসূচিতে যাব। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, সেকেন্ড রিপাবলিক ঘোষণা, গণপরিষদ ও জাতীয় পরিষদ নির্বাচন একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হওয়া আমাদের মূল দাবি।