
সংগৃহীত
জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেছেন, “বিএনপির একটা শংকা হচ্ছে, যত ইলেকশন দেরি হবে, বিএনপির মাঠ পর্যায়ে জনপ্রিয়তা তত কমবে।” সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
সারোয়ার তুষার বলেন, “তার কারণ হচ্ছে, বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা,যদিও কেন্দ্র থেকে একটা আন্তরিকতা দেখা যায়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ কেন্দ্র একটি আন্তরিক ভূমিকা রাখছে,তবুও সারা দেশে যেভাবে বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো ঘটছে, তাতে একটা উদ্বেগ আছে। এসব ঘটনা এত নিরবিচ্ছিন্নভাবে ঘটছে যে, বাস্তবতা হচ্ছে এগুলো মহামারি আকারে রূপ নিয়েছে।”
তিনি বলেন, “ফলে বিএনপির দিক থেকে একটা উদ্বেগ আছে যে, ইলেকশন দেরিতে হলে তাদের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে থাকবে। কারণ, ইন দ্য মিনটাইম জামায়াতে ইসলামী কাজ করছে, এনসিপি নতুন দল হিসেবে এন্ট্রি নিয়েছে, গণঅধিকার পরিষদও সক্রিয়। ফলে এবারের ইলেকশন ‘গিভেন’ না। তারেক রহমান দুই-তিন মাস আগেই বলেছিলেন, এবার অনেক সুইং ভোট, অনেক হিসাব থাকবে। সেসব হিসেব থেকেই বিএনপির এই উদ্বেগ।”
সরকারের বক্তব্য প্রসঙ্গে সারোয়ার তুষার বলেন, “দেখুন, সরকার কিন্তু এটা বলেনি যে ডিসেম্বরে ইলেকশন হবে না। তারা বলছে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে যে কোনো সময় হবে—ডিসেম্বরও তো পড়ে এর মধ্যে।
আমাদের দিক থেকে বক্তব্য হচ্ছে, ডিসেম্বরে ইলেকশন করুক, উই ডোন্ট হ্যাভ এনি প্রবলেম। তবে আমরা যে কথাগুলো বলছি, এসিওরেন্স চাইছি কারণ এবারের ইলেকশনের এজেন্ডা হচ্ছে—সংস্কারের ভিত্তিতে নির্বাচন হবে। কিন্তু এই নির্বাচনটা করে ফেলাটাই এক ধরনের সংস্কার।”
সারোয়ার তুষার বলেন, “অনেকে বলছেন, নির্বাচিত সরকার এসে সংস্কার করবে। কিন্তু এটা নিয়ে দুই স্তরের সমস্যা আছে—একটা হচ্ছে কমিটমেন্ট, আরেকটা হচ্ছে পদ্ধতিগত।কিছু সংস্কার তো এই সরকার অধ্যাদেশ দিয়েই করতে পারে—যেগুলো সংবিধানের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। পরবর্তী সরকার এসে সেগুলোকে অনুমোদন করবে।আর সংবিধান যেহেতু একটি মৌলিক নথি, আপনি এটা সংসদে গিয়ে সরাসরি পরিবর্তন করতে পারবেন না। সংবিধান সংস্কার করতে হলে গণভোট করতে হবে অথবা গণপরিষদ নির্বাচনে যেতে হবে—যেটা আমাদের জাতীয় ঐক্যমঞ্চের স্প্রেডশিটে বলা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের প্রস্তাব খুবই সহজ—আগামী নির্বাচিত বডি একযোগে গণপরিষদ এবং আইনসভা হিসেবে কাজ করবে। পৃথিবীর অনেক দেশে এটা ঘটেছে। এই অঞ্চলেও অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে।দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বিএনপির কাছ থেকে আমরা এ বিষয়ে খুব ইতিবাচক সাড়া পাইনি। তারা যে যুক্তি দিচ্ছে, তা ধোপে টেকে না। তারা বলছে, এটা তো একেবারে নতুন দেশ নয়, নতুন সংবিধান নয়—তাহলে কেন লাগবে?
আমরা বলছি, পৃথিবীতে অনেক দেশ আছে যারা প্রয়োজনে চার-পাঁচবার গণপরিষদ নির্বাচন করেছে। যদি মনে হয় এই কনস্টিটিউশনে আর কিছু হচ্ছে না, তাহলে করতেই হবে।”
তিনি বলেন, “৩১ দফার মধ্যে সংবিধানের প্রসঙ্গ তো স্পষ্টভাবে এসেছে। সেই সংবিধান কমিশন তো এখনো হয়নি। ফলে অন্তত একটি দফা তো বিএনপির বাতিল।
এই ৩১ দফা ফ্যাসিবাদের সময় এসেছে এবং বিএনপি এখন যেভাবে সংস্কারের ক্রেডিট নেওয়ার চেষ্টা করছে, সেটা ইতিহাসকে সরলীকরণ।
আমরা তো গণতন্ত্র মঞ্চ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এবং অনেক অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আমরা জানি কিভাবে সংস্কার প্রক্রিয়াটি এসেছে—প্রথমে গণতন্ত্র মঞ্চের ১৪ দফা, তারপর বিএনপির ২৭ দফা, তারপর ৩১ দফা, আবার গণতন্ত্র মঞ্চের নিজস্ব ৩১ দফা।বিএনপি এখন বলছে, তারা সবার আগে সংস্কার বলেছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এ সমস্ত ছোট ছোট দলই আগে সংবিধান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিএনপি আগে কখনও এসব প্রশ্ন তোলে নাই।”
সারোয়ার তুষার বলেন, “গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্রচিন্তা, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, যাসদ (রব ভাইয়ের দল)—সবাই কিন্তু ৭২-এর সংবিধান নিয়ে অনেক সমালোচনামূলক প্রশ্ন তুলেছে।
মূল সমস্যা হচ্ছে—এক ব্যক্তির হাতে সকল ক্ষমতা। এটা শুধু গত ১৬ বছরে না, বরং ৭২-এর সংবিধানের গোড়ার সমস্যা। এখানে প্রধান নির্বাহীকে কোনোভাবেই আটকে রাখার ব্যবস্থা নেই।
ইলেকশন কমিশন ভাগ্য নির্ধারণ করে না। প্রধান নির্বাহীর হাতে কতটা ক্ষমতা, তার ইনটেনশন কী—সেই অনুযায়ী নির্বাচন পরিবর্তন হয়।”
তিনি বলেন, “মূল সংস্কারটাই যদি বিএনপি বিরোধিতা করে, তাহলে অন্য সব সংস্কারে একমত হয়েও লাভ নেই।
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ কতদিন থাকবে, নারী আসন কয়টা থাকবে, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল থাকবে কি না, নিয়োগ কে দেবে—এসব হচ্ছে খুবই মৌলিক প্রশ্ন।
যদি নিয়োগ আপনার হাতে থাকে, আপনি প্রধান নির্বাহী হন, তাহলে আপনি বললেন—আমি তো বিচার বিভাগের সংস্কার চাই, দুদকের সংস্কার চাই, ইসি সংস্কার চাই—কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ যদি আপনার হাতেই থাকে, তাহলে সংস্কার টিকবে না।
সুতরাং, ফান্ডামেন্টাল সংস্কার হচ্ছে সংবিধান সংস্কার। এতে বিএনপি সম্মত না হলে, সংস্কারের দাবিও অমূলক হয়ে যায়।”
সূত্র:https://tinyurl.com/3brvznpj
আফরোজা