
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় নাগরিক পার্টি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল নির্বাচন ও রাষ্ট্র সংস্কারের যেসব দাবি তুলে ধরছে, তা উপেক্ষা করে কি জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব? —এসএ টিভির এক টক শোতে এ প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, সাংবাদিক ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবু সাঈদ খান গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, “দাবি তো করতেই পারে। তারা নির্বাচনের মাধ্যমে সেই দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারে। কিন্তু বর্তমান সরকারের মাধ্যমে তা সম্ভব কি না—এটাই প্রশ্ন। কারণ, এই সরকার সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছে এবং এটি একটি সংবিধানসম্মত সরকার। তাই সংবিধান লঙ্ঘন করে কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার তাদের নেই।”
তিনি বলেন, একটি দেশের সংবিধান কত বড় বা কত ভালো, সেটিই গণতন্ত্রের মানদণ্ড নয়। বরং গণতন্ত্র চর্চাই আসল। উদাহরণ দিয়ে বলেন, “আমেরিকার সংবিধান মাত্র ৩০-৩২ পৃষ্ঠার, তবুও তারা তা নিয়ে তেমন উদ্বিগ্ন নয়। ব্রিটেনে তো লিখিত সংবিধানই নেই, তবুও তারা সুশাসন নিশ্চিত করছে। ভারতের সংবিধান বহু পুরনো, কিন্তু তারা প্রয়োজনে ১৮০-১৯০ বার সংশোধনী এনেছে।”
আবু সাঈদ খান আরও বলেন, “বাংলাদেশ একটি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সেই মুক্তিযুদ্ধের অর্জনই হচ্ছে সংবিধান। এটিকে সম্মান জানানো, সংরক্ষণ করা এবং সমুন্নত রাখা নতুন প্রজন্মের দায়িত্ব।”
তিনি ১৯৪৭, ১৯৭১ এবং ২০২৪ সালকে একসাথে তুলনা করাকে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অসম্মান বলে উল্লেখ করেন। “একটি জাতির স্বাধীনতা বারবার হয় না। আমাদের স্বাধীনতা এসেছে একবারই, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। তাই ২০২৪ সালেই সব অর্জন হয়েছে বলা ঠিক নয়,”—বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “যারা এই ধরনের ভাবনা বা প্রশ্ন তুলে, তাদের মধ্যে কিছু দল আছে যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল। তাদের অবস্থান বিবেচ্য বিষয় নয়, কিন্তু কষ্টকর বিষয় হচ্ছে—এই প্রজন্মের মধ্যেই যদি মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে তা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য চিন্তার বিষয়।”
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা এবং রাজনৈতিক জটিলতা নিরসন নিয়ে আবু সাঈদ খান বলেন, “এটি সরকারের মুন্সিয়ানার বিষয় নয়, বরং নিরপেক্ষভাবে তারিখ ঘোষণা করা জরুরি। সরকারকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। এই সরকার কোন দলের হয়ে কাজ করতে পারবে না।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এটা কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে জনগণের দৃষ্টিতে এ সরকারকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। যদি কোনও দলের প্রতি পক্ষপাত দেখায়, তাহলে সরকার বিতর্কিত হয়ে যাবে।”
সবশেষে তিনি বলেন, “সরকারের উচিত জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। এবং সেই সিদ্ধান্ত হতে হবে স্টেকহোল্ডার তথা রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে।”
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=OIoTMj8Q0f4
আবীর