ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১ বৈশাখ ১৪৩২

দেশে দেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিলাসী জীবন, অর্থের উৎস কী?

প্রকাশিত: ১৪:৪৫, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

দেশে দেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিলাসী জীবন, অর্থের উৎস কী?

ছবি: সংগৃহীত।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর পর দেশত্যাগে বাধ্য হন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতারা। বর্তমানে দলটির বহু সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতা দেশের বাইরে, বিশেষত ভারতে আশ্রয় নিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন।

ভারতের কলকাতার রাজারহাট, নিউটাউন, সল্টলেক, তপসিয়া, বেহালা, যাদবপুর, গড়িয়াহাট, দমদম ও বারাসাতসহ অভিজাত এলাকায় অনেক নেতা ভাড়া ফ্ল্যাট কিংবা নিজস্ব অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করছেন। 

জাতীয় একটি দৈনিকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বর্তমানে স্ত্রীসহ থাকছেন নিউটাউনের ডিএলএফ প্লাজায়। তাঁর সব খরচ বহন করছেন ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, যিনি পাশের একটি ফ্ল্যাটেই বসবাস করছেন।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তাঁর পরিবার নিউটাউনের রোজ ডেল গার্ডেনের ১১সি ফ্ল্যাটে থাকছেন বলে জানা গেছে। তাকে কলকাতার বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও ইফতার মাহফিলে অংশ নিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম পরিবারসহ থাকছেন নিউটাউনের অভিজাত টাটা হাউসিংয়ের এভিনিউ ডি’র দুটি ফ্ল্যাটে। 

দলীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, কলকাতায় অবস্থান করছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম (তপসিয়া), জাহাঙ্গীর কবির নানক (সল্টলেক), সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন ও তাঁর ছেলে শেখ তন্ময়, নজরুল ইসলাম বাবু, নিক্সন চৌধুরী, বাহাউদ্দিন বাহার, জাহাঙ্গীর আলম, মৃণাল কান্তি দাস, পংকজ দেবনাথ, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সেলিম মাহমুদ, হাবিবে মিল্লাত ও আজমত উল্লা খানসহ অনেকে।

অনেক নেতার সন্তানদের ভারতের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে ভর্তি করানো হয়েছে এবং কেউ কেউ ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। কেউ কেউ ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্যও আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, আবদুর রহমান, রেজাউল করিম, শফিকুর রহমান চৌধুরী, খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ অনেকে বর্তমানে যুক্তরাজ্যের লন্ডন, নিউবেরি পার্ক, সেন্টার লন্ডনসহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছেন। হাসান মাহমুদের ছেলে লন্ডনে পড়াশোনা করছেন এবং তিনি নিজেও পরিবারসহ সেখানে অবস্থান করছেন। সাইফুজ্জামান চৌধুরী বিদেশে ৬২০টি বাড়ির মালিক বলে সিআইডির একটি সূত্র জানিয়েছে।

সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বর্তমানে দিল্লিতে অবস্থান করছেন। স্ত্রী চিকিৎসার জন্য সেখানেই রয়েছেন বলে জানা গেছে। সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিক—যিনি শেখ রেহানার দেবর—তিনি কলকাতা ও দিল্লির মধ্যে চলাফেরা করছেন।

দলীয় নেতাদের দাবি, পলাতক নেতারা ভারতে থাকলেও কোনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন না। ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং কেউ অপরাধে জড়িত না থাকলে তাদের বিরক্ত করা হয় না। অনেকের সঙ্গে ভারতের রাজনৈতিক মহলের যোগাযোগও রয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, “আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। ফলে তাদের অনেক নেতা-মন্ত্রী বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন, যা নিয়ে আজ তারা বিদেশে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন।”

পলাতক নেতাদের অনেকেই গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কবে দেশে ফিরতে পারবেন তা তারা নিজেরাও জানেন না। কেউ পরিবার ও ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন, আবার কেউ রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=kA2z11-YUWQ

সায়মা ইসলাম

×