ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

সংস্কার ছাড়া নির্বাচন চাওয়া ফ্যাসিবাদের অংশ: সারোয়ার তুষার

প্রকাশিত: ০৮:৪১, ১২ এপ্রিল ২০২৫

সংস্কার ছাড়া নির্বাচন চাওয়া ফ্যাসিবাদের অংশ: সারোয়ার তুষার

সংস্কার ছাড়া নির্বাচন চাওয়াকে “ফ্যাসিবাদের অংশ” বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার। সম্প্রতি এক টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, “সংস্কার ছাড়া নির্বাচন চাওয়াটা ফ্যাসিবাদের অংশ, সেই কারণে যে বাংলাদেশে সাংবিধানিকভাবে একটি স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামো সব সময় বিরাজ করেছে। তার মধ্য দিয়েই এখানে কখনো কখনো নির্বাচন এসেছে, কিন্তু সেই নির্বাচনী ব্যবস্থাটাকে আমরা নিরঙ্কুশ করতে পারিনি। বারবার তা হোচট খেয়েছে।”

তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, “১৯৯৫ সালে প্রথম প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হলো, তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বিএনপি তা মানেনি। পরে আন্দোলনের ফলে তারা বাধ্য হয় মানতে। এরপর ২০০১ থেকে ২০০৬ বিএনপি ক্ষমতায় এসে নিজেদের পছন্দের বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে বসাতে সংবিধান সংশোধন করে। এর প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ লাঠি-বৈঠা নিয়ে আন্দোলনে নামে। এর ফলেই আসে ‘ওয়ান-ইলেভেন’। অর্থাৎ, ৯০ সালের পর থেকে নির্বাচন নিরঙ্কুশ নয়।”

সারোয়ার তুষার বলেন, “নির্বাচিত সরকারের হাত ধরেই বারবার অনির্বাচিত সরকার এসেছে বাকশাল, ৯৫-এর প্রশ্নবিদ্ধ সরকার, ওয়ান-ইলেভেন এমনকি আওয়ামী লীগের গত ১৩ বছরের সরকারও এই প্রক্রিয়ার ফসল।”

তিনি আরো বলেন, “এটি শুধু আমাদের কথা নয়, সংবিধান বিশেষজ্ঞ আকবর আলী খানও বলেছেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ভিতরেই স্বৈরতন্ত্রের বীজ রোপিত আছে, যা ১৯৭২-এর সংবিধানের মধ্যেই প্রোথিত।”

নির্বাচনকে ‘নির্বাচনী স্বৈরতন্ত্র’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “এই ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন হলেও তা গণতান্ত্রিক নয়। আমরা বলেছি, রাষ্ট্র সংস্কার না করে নির্বাচন চাপিয়ে দেওয়া মানে এক ধরনের ফ্যাসিবাদী অবস্থান নেওয়া।”

আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বিএনপি যখন বলে আগের মতো আন্দোলন করবে, তখন প্রশ্ন আসে,সেই আন্দোলনের ফল কী হয়েছিল? আমরা তো সেই আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। আমরা বলেছি, বিচার ও সংস্কারের মধ্যে দিয়ে সরকার যে টাইম ফ্রেম দিয়েছে, সেই টাইম ফ্রেম অনুযায়ী কার্যক্রম হচ্ছে কি না, সেটা দেখতে চাই।”

সারোয়ার তুষার বলেন, “এই মুহূর্তে যদি সরকার বলে—ডিসেম্বরেই নির্বাচন দিতে হবে—এই ভাষা ব্যবহার যখন করা হয়, তখন প্রশ্ন আসে, জনগণ কি এই সরকারকে পাঁচ বছর দেখতে চায়? জরিপে অংশগ্রহণকারী ২-৩ হাজার লোকের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ যুক্তিসংগত নয়। তাই আমরা বলেছি, গণভোট হোক।”

তিনি বলেন, “গণভোট গণতন্ত্রের চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা। সেখানে বোঝা যাবে-জনগণ কি চায়। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন, না সংস্কার শেষে নির্বাচন। অনেকগুলো মৌলিক প্রশ্ন সামনে এসেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সেই সৎ সাহস কি রাজনৈতিক দলগুলোর আছে? আমি বিশ্বাস করি, জনগণের কাছে যাওয়ার মতো সাহস আমাদের সকলের থাকা উচিত।”

এনসিপির অপর নেতা সার্জিস আলাম অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে পাঁচ বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান—এমন মন্তব্য সম্পর্কে সারোয়ার তুষার বলেন, “ওটা আমাদের দলের অবস্থান নয়। ইউনূস সাহেব একজন সর্বজনগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। তিনি একটি নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন, সেটা শেষ করে বিদায় নেবেন-এই প্রত্যাশা করি।”

ডিসেম্বরে নির্বাচনের জন্য এনসিপির প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা তো মাত্র ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করেছি। আমাদের অনেকগুলো কমিটি আছে প্রায় ৪৫০টি। সেগুলো জাতীয় নাগরিক পার্টিতে অন্তর্ভুক্ত হবে। নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবো এবং খুব দ্রুতই সম্পন্ন করতে পারবো বলে বিশ্বাস করি।

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/yebct7sv

আফরোজা

আরো পড়ুন  

×