ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

জামায়াতের নিবন্ধন এখনো কেন আটকে আছে!

প্রকাশিত: ০৭:৩৮, ১২ এপ্রিল ২০২৫

জামায়াতের নিবন্ধন এখনো কেন আটকে আছে!

ছবি : সংগৃহীত

শেখ হাসিনার পতনের পর আট মাস পেরিয়ে গেলেও জামাতে ইসলামীর নিবন্ধন মামলা এখনো সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ঝুলে রয়েছে। এই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দলটি জাতীয় নির্বাচনে নিজস্ব প্রতীকে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই মামলার দীর্ঘসূত্রতা জামাত নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক হতাশা সৃষ্টি করেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও কেন দলটি তাদের নিবন্ধন ফিরে পাচ্ছে না।  

 

এই মামলাটি একটি সার্টিফিকেট আপিল হিসেবে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে। আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরের মতে, মামলাটি সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সাথে জড়িত হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ শুনানির প্রয়োজন। তবে একাধিক প্রতিবন্ধকতার কারণে শুনানি সম্পন্ন হতে পারছে না। একপক্ষের আইনজীবীর বিদেশে অবস্থান এবং শুনানির মাঝে একজন বিচারপতির দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হওয়ায় প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হয়েছে। যদিও শুনানির অর্ধেকের বেশি সম্পন্ন হয়েছে, তবুও চূড়ান্ত রায় পেতে আরো সময় লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে।  

২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক জামাতে ইসলামীকে নিবন্ধন দেওয়া হলেও ২০১৩ সালে হাইকোর্ট তা বাতিল করে। জামাত নেতাদের দাবি, এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল। দলটি ১৯৭৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে সরাসরি অংশ নিতে পারেনি। ২০১৮ সালে তারা বিএনপির প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়। দলটির ৬১ জন সদস্য জাতীয় সংসদে দায়িত্ব পালন করেছেন, যা তাদের রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা প্রমাণ করে।  

 

জামাতে ইসলামীর নেতারা আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তারা আশা প্রকাশ করেছেন যে শীঘ্রই আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাবেন। আগামী ২২ ও ২৩ মে মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা দলটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ মোড় হতে পারে। তবে এই দীর্ঘসূত্রতা দলের অভ্যন্তরে হতাশা বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেক নেতাকর্মী মনে করছেন, রাজনৈতিক চাপই এই বিলম্বের মূল কারণ।  

 

এই মামলার চূড়ান্ত রায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। যদি জামাতে ইসলামী নিবন্ধন ফিরে পায়, তাহলে তারা পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারবে, যা বর্তমান রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করবে। অন্যদিকে, নিবন্ধন না পেলে দলটিকে জোট রাজনীতির দিকে ঝুঁকতে হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই মামলার ফলাফল শুধু জামাতের ভবিষ্যৎই নির্ধারণ করবে না, বরং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশের গতিপথও পরিবর্তন করতে পারে।  

  

জামাতে ইসলামীর নিবন্ধন মামলা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও আইনি ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে দলটি ভবিষ্যতে কী ভূমিকা রাখতে পারবে। এই প্রক্রিয়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক বহুলতার পরীক্ষা হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। সকল পক্ষের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

সূত্র:https://youtu.be/Asbto4H5VJ4?si=e8Oocbo8Kf5y18Hq

আঁখি

আরো পড়ুন  

×