ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

ভোট দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয় না, আসে লুটেরা শ্রেণি : ফরহাদ মজহার

প্রকাশিত: ২৩:২৬, ১১ এপ্রিল ২০২৫

ভোট দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয় না, আসে লুটেরা শ্রেণি : ফরহাদ মজহার

ছবি: সংগৃহীত

কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, ভোটের মাধ্যমে নয়, বরং কমিউনিটি ও এলাকা যখন সচেতন ও সংগঠিত হয়, তখনই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভিত্তি গড়ে ওঠে। তিনি বলেন, ‘‘ভোটে কেবল লুটেরা মাফিয়া শ্রেণির উত্থান ঘটে, কিন্তু একটি শক্তিশালী কমিউনিটি হলে জনগণের ইচ্ছা ও কল্যাণই প্রাধান্য পায়।’’

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাজধানীর মিরপুরে শাহ আলী মাজার প্রাঙ্গণে জুলাই কমিউনিটি অ্যালায়েন্স মিরপুর আয়োজিত ‘গণমানুষের জাগ্রত জুলাই’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

ফরহাদ মজহার বলেন, ‘‘গণতন্ত্র তখনই প্রতিষ্ঠা পায়, যখন মানুষ বুঝে যে কমিউনিটি সবচেয়ে বড় শক্তি। উন্নয়ন হবে কমিউনিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। তারা ভালো-মন্দ বুঝে, তাদের চাওয়া অনুযায়ী এলাকা গড়ে উঠবে।’’

ধর্মীয় সহাবস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ বা অন্য যে ধর্মেই মানুষ থাকুক না কেন, তারা আমাদের সমাজেরই অংশ। মাজার সেই বার্তাই দেয়—মানুষই সর্বোচ্চ সত্য। মাজারে যেসব গান হয়, যে সংস্কৃতির চর্চা হয়, তার একটাই ভাষা—মানুষ।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘মানুষ নশ্বর, কিন্তু তার রেখে যাওয়া আমল ও কর্মই জীবনের মূল্য বহন করে। মাজার আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, জীবন ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু আমল চিরস্থায়ী।’’

অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘‘জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের সদস্য ও আহতদের কষ্টের কথা শুনলে আমরা গভীরভাবে ব্যথিত হই। এই বেদনা জাতির কাছে গুরুত্বপূর্ণ; যতদিন এই বেদনা মনে থাকবে, জাতি সঠিক পথে থাকবে।’’

তিনি স্বীকার করেন, শহীদ পরিবারগুলোর পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় সরকার শতভাগ সফল হতে পারেনি। ‘‘রিসোর্স ও পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা থাকলেও আমাদের আন্তরিকতার ঘাটতি ছিল না,’’ বলেন ফারুকী।

তিনি জানান, জুলাই যাদুঘর নির্মাণ করা হচ্ছে ব্যতিক্রমধর্মী আঙ্গিকে। সেখানে দর্শনার্থীরা যেন ‘জুলাই-আগস্টের বেদনা’ অনুভব করতে পারেন, সেই চেষ্টাই থাকবে। ‘‘যাদুঘর দেখে বের হয়ে আসার সময় দর্শনার্থীর পা যেন ভারী হয়ে আসে—এই অনুভবই আমাদের লক্ষ্য,’’ বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শহীদ মো. নাদিমের স্ত্রী তাবাসসুম আক্তার নিহা ও শহীদ মেহেরুন নেছা তানহার বাবা মোশাররফ হোসেন। তাঁরা বলেন, ‘‘আমাদের প্রিয়জনদের রক্তের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে, অথচ এখনও বিচার হয়নি, পুনর্বাসন হয়নি। ৫৫ বছর বয়সী কেউ একজন এখন আমাদের হয়রানি করছে।’’

অনুষ্ঠানে আরও ছিল গরিব-অসহায়দের জন্য মেডিকেল ক্যাম্প, গ্রাফিতি প্রদর্শনী, আন্দোলনের ছবি ও খবরের কাগজ প্রদর্শনী, কবিতা পাঠ, আহতদের স্মৃতিচারণ, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, ভাবগানের আসর ও বইমেলা।

জুলাই কমিউনিটি অ্যালায়েন্স মিরপুরের প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মদ রোমেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আন্দোলনে আহত মাহফুজুর রহমান, আবুল বাসার সোহেল, সম্মুখ সারির যোদ্ধা আলী নুর, কবি নকিব মুকশি, হাসনাত শোয়েব, তৌফিক হাসান, হুমায়ুন শফিক, উদয় হাসান ও মিলন হোসেন।   

আসিফ

আরো পড়ুন  

×