ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

ধীরে ধীরে বিশ্বের সব মুসলমানকে নিঃশেষ করার চেষ্টা করবে ॥ আব্বাস

শোডাউন করে গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদ বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ১০ এপ্রিল ২০২৫

শোডাউন করে গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদ বিএনপির

গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরোচিত গণহত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার প্রতীকী লাশ নিয়ে বিএনপি রাজধানীতে র‌্যালি করে

ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসন ও গণহত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ঢাকায় বিশাল বিক্ষোভ র‌্যালি করেছে বিএনপি। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে র‌্যালিটি শুরু হয়। এটি কাকরাইল, মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার মোড় হয়ে কাওরানবাজার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

এ সময় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ফিলিস্তিনে যে নারকীর অত্যাচার-হত্যা হচ্ছে, তা দেখে আমাদের মনে হতে পারে যে শুধু তাদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। আসলে বিষয়টি তা নয়, এক সময় তারা ধীরে ধীরে বিশ্বের সব মুসলমানকে নিঃশেষ করার চেষ্টা করবে। 
র‌্যালির আগে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি যৌথভাবে আয়োজিত এই কর্মসূচি পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে র‌্যালিপূর্বক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস বক্তব্য রাখেন।
র‌্যালির প্রারম্ভিক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, মুসলিম বিশ্বের যেসব মোড়ল দেশ নিজেদের রাজত্ব বাঁচানোর জন্য নিজেরা নেতৃত্ব দিচ্ছে না তাদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ নেমে পড়বে। তারা নেতৃত্ব দিলে এবং মুসলিম বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ  থাকলে ফিলিস্তিনে এই অবস্থা হতো না।
তিনি বলেন, একজন ছাত্র ভাই বলেছে, যদি বর্ডার থাকত তাহলে আমরা ফিলিস্তিনে যুদ্ধ করার জন্য নেমে পড়তাম। আমি তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতে চাই, যদি আজকে সুযোগ হতো, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, আল্লাহর রহমতে বিশ্বের যে কোনো দেশে গিয়ে যুদ্ধ করতাম।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এই প্রতিবাদ মিছিল অস্বাভাবিক রকম বড় হয়েছে। এই মিছিলে শুধু বিএনপি নেতাকর্মী নয়, ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাইয়েরা অংশ নিয়েছেন। আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমি নিজেও অনেকদূর থেকে আজকের এই র‌্যালিতে অংশ নিতে এসেছি। এই মিছিলে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্য একটা। কারণ, সশরীরে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের জন্য কিছু করতে পারছি না।
মির্জা আব্বাস দাবি করেন, ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় যেমন জিয়াউর রহমান ভূমিকা রেখেছিলেন, তিনি বেঁচে থাকলে আজ ফিলিস্তিনের পক্ষে কার্যকর উদ্যোগ নিতেন। ইসরাইল এমন সহিংসতা চালানোর সাহস পেত না।
দলটির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ফিলিস্তিনে যুগের পর যুগ ধরে নৃশংস হত্যাকা- চলছে। নারী-পুরুষ কেউ রেহাই পাচ্ছে না। এটা সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধ।
দেশের সাধারণ মানুষ, দলমত, নির্বিশেষে ফিলিস্তিনের পক্ষে উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, বুদ্ধিজীবীদের থেকে তেমন কোনো অবস্থান দেখা যাচ্ছে না। জাতিসংঘও নিষ্ক্রিয়, এটি ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিশ্বের কয়েকটি পরাশক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনে বহু আগেই ফিলিস্তিনে গণহত্যা শুরু হয়েছে। আজ ফিলিস্তিনের মানুষ নিজেদের দেশেই পরবাসী। অথচ মুসলিম বিশ্বের মোড়লদের কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই। তারা মুখ খুলছে না, অবস্থান নিচ্ছে না।
এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, আব্দুস সালাম পিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, আব্দুস সালাম আজাদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম নীরব, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, জাতীয়তাবাদী যুবদল সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। বিএনপির নেতারা এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ইসরাইলের নির্মম হামলার নিন্দা জানান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানান।
কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দুপুরের পর থেকেই নয়াপল্টনে জড়ো হতে শুরু করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা, মাথায় ফিতা বেঁধে ও নানান ধরনের প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে তারা ‘গাজা হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করো’, ‘ফিলিস্তিনের পক্ষে, বর্বরতার বিরুদ্ধে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতারা বলছেন, ফিলিস্তিনে শিশু ও সাধারণ মানুষের ওপর অব্যাহত হামলার প্রতিবাদে এই কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্ববাসীকে জাগ্রত করতেই বিএনপির এই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ। কর্মসূচি ঘিরে নয়াপল্টনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও।
চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল ॥ স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, ফিলিস্তিনের গাজায় বোমা হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির ব্যানারে এ মিছিলে হাজারো নেতাকর্মী ও সমর্থক অংশ নেন। 
চট্টগ্রাম মহানগরীর জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদ মাঠে বিকেলে জড়ো হন বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। সেখানে নেতারা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হন। মিছিলটি ওয়াসা, কাজির দেউড়ি হয়ে নুর আহমদ সড়কের নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। 
বিএনপির কর্মসূচি উপলক্ষে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কারণ দুদিন আগে এমনই কর্মসূচির নামে উচ্ছৃঙ্খল কিছু লোকজন বাটা, কেএফসিসহ বিভিন্ন দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে বৃহস্পতিবারের বিএনপির মিছিলটি ছিল শান্তিপূর্ণ। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর আচরণের খবর পাওয়া যায়নি।

×