
বিশিষ্ট রাজনীতিক ও ইসলামী চিন্তাবিদ অধ্যাপক গোলাম আযমের পুত্র আমান আজমী জানিয়েছেন, তার পিতার ওপর এক মিছিলে হামলার সময় তাকে রক্ষা করতে গিয়ে দুইজন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছিলেন।
অমান আজমী তার শৈশব স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন,১৯৭০ সালের ১৮ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে জামাতের সমাবেশে গোলাম আযমের ওপর হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমি আব্বার পেছনে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আব্বা সেদিন আমাকে না করে দেন। পরে জানি, সমাবেশে আব্বাকে আক্রমণ করা হয়েছিল এবং তাকে রক্ষা করতে গিয়ে দুইজন শহীদ হন।”
তিনি আরও বলেন, “ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা স্টেডিয়ামের উপর থেকে রড, লাঠি ও ঢিল নিক্ষেপ করেছিল। তখন আব্বাকে ঘিরে নিয়ে নেতাকর্মীরা নিরাপদে গাড়িতে তুলে বাসায় ফেরত আনেন।”
এই ঘটনার পরে, গোলাম আযম আহত নেতাকর্মীদের নিজ হাতে সেবা করেছেন বলেও জানান আমান আজমী। তিনি বলেন, “আব্বা নিজ হাতে সেবা করতেন, দেখাশোনা করতেন। আমাদের বাড়ির পাশে একটি টিনের ঘরে অনেক আহত নেতাকর্মী কয়েকদিন পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছিলেন।”
ঘটনাগুলোর পটভূমিতে তিনি বলেন, ৬৯ সালে ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা গ্রহণের পর গভর্নর এমএন হুদা তার পিতাকে মন্ত্রী করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু গোলাম আযম তা বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেন, কারণ তিনি সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সমালোচনার স্বাধীনতা হারাতে চাননি।
১৯৭০ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশজুড়ে যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছিল, তখন ইয়াহিয়া খান মার্শাল ল’ জারি করে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। সেই সময় গভর্নর মনায়েম খানকে অপসারণ করে নতুন গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ এমএন হুদাকে।
এ প্রসঙ্গে গোলাম আযমের পুত্র আমান আজমী বলেন, “আমি স্পষ্ট মনে করতে পারি, গভর্নর এমএন হুদা শপথ নেওয়ার একদিন পর আমাদের বাসায় এসেছিলেন। আমাদের বাসা তখন টিনের ছিল, পাশেই চাচার একটি পাকাবাড়ি ছিল। গভর্নর সাহেব চাচার বসার ঘরেই বসেন। চারদিক সাজানো, বেশ আনুষ্ঠানিক পরিবেশ। অনেক মোটরসাইকেলসহ উনি এসেছিলেন, আব্বা তাকে চাচার ড্রইংরুমে রিসিভ করেন।”
তিনি আরও বলেন, “তখন তো বুঝিনি কী আলোচনা হচ্ছে। পরে জেনেছি, গভর্নর সাহেব আব্বাকে বলেছিলেন—‘আপনি আমার উপদেষ্টা হোন, মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করুন। উপদেষ্টার কোনো আনুষ্ঠানিক পদ না থাকায় আপনি যেকোনো একটি মন্ত্রণালয় গ্রহণ করুন, কিন্তু আমার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করুন।’”
কিন্তু অধ্যাপক গোলাম আযম বিনয়ের সঙ্গে সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, “আমি তো রাজনীতি করি দ্বীন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে। সরকার যদি দ্বীনবিরোধী কোনো কাজ করে, আমি তো তার সমালোচনা না করে পারবো না। মন্ত্রী হলে সেটা আর করা যাবে না।”
এমন কথার পর গভর্নর এমএন হুদা কিছুটা বিমর্ষভাবেই বিদায় নেন।
সবশেষে আমান আজমী বলেন, “৭০-এর ১২ই নভেম্বর এক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর যখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির ছিল। তবে সেটিই ছিল পাকিস্তানের শেষ এবং একমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচন, যেটাতে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়।”
সূত্র:https://tinyurl.com/4jbjzk8x
আফরোজা