
আওয়ামী লীগের অধীনে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে ভুল সিদ্ধান্ত মনে করেন না জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আওয়ামী লীগের অধীনে গত নির্বাচনে অংশ নেয়া ভুল ছিল না। আমাদের ১০-১১টা সিট কোন ম্যাটার করে না। আমরা থাকি বা না থাকি, তার জন্য বৈধতা বা অবৈধতা কিছুই ছিল না।আমরা কোন সময়ই তাদের দোসর ছিলাম না।”
সাক্ষাৎকারে দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরে জিএম কাদের বলেন, “আমি অনেকবার এটা বলেছি। সমস্ত দলের বড় বড় যারা, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইন্টারেস্টেড, বিদেশী শক্তি যারা ছিলেন,তাদের সকলের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে। সবাই বলেছিলেন, আমি যতটুকু খবর পেয়েছি, আমাকে যতটুকু মেসেজ দিয়েছিলেন,তাতে এই নির্বাচন যাই আর না যাই, হবে এবং যে নির্বাচন হবে, তারা তাকে গ্রহণ করবেন। আমার মনে হয় কেউ এটাতে 'নো' বলেননি। পরবর্তীতে আমরা এই সরকারকে বর্জন করব,এটা কেউই বলেননি। এবং আসলেই করেননি। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরেও, আমরা থাকি বা না থাকি, আমাদের ১০-১১টা সিট কোন ম্যাটার করে না। তার জন্য বৈধতা বা অবৈধতা কিছুই ছিল না।”
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে তিনি বলেন, “সব সরকার, দেশের সকল সরকার এই সরকারের সঙ্গে নির্বাচন-পরবর্তী সমস্ত কার্যক্রম চালিয়ে গেছে। অনেকে হয়তো প্রকাশ্যভাবে তাদেরকে কনগ্র্যাচুলেট করেনি, কিন্তু তাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সবই চালিয়ে গেছে। কাজেই, এগুলো যারা বলেন,তারা আমার ধারণা ভুল করে বলেন না, ইচ্ছা করেই বলেন, আমাদেরকে রাজনীতি থেকে কোনঠাসা করার একটা পায়তারা।”
তিনি বলেন, “আমরা রাজনীতিতে ২০২৪ সালের নির্বাচনে না গেলে সঙ্গে সঙ্গে সরকার পতন হয়ে যাবে,এটা যারা বলেন, আমি মনে করি, এনারা কি সুস্থ মস্তিষ্কে চিন্তা করে বলেন, নাকি জাস্ট আমাদেরকে গালাগালি করার জন্য বলেন,এটি আমার ধারণা।”
আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রচলিত সমালোচনার জবাবে জিএম কাদের বলেন, “আমার পাশের বাসায় আওয়ামী লীগ থাকতো, এজন্য আমি আওয়ামী লীগের দোসর হয়ে গেলাম! একসঙ্গে আমাদের সঙ্গে বিএনপিও ছিল, অন্যান্য দলও ছিল। এটা সবসময় যে আমরা একাই ছিলাম-তা না। আমি তো ২০১৪ সালে ছিলাম না। আমাদের দলের প্রায় ৯০ শতাংশ লোক, ২৭০ জন, নির্বাচন থেকে বয়কট করে চলে এসেছিলাম। তার পরবর্তীকালে আমাকে টেকনোক্র্যাট মিনিস্টার অফার দিয়েছিল, আমি সেটাও নেইনি।”
২০১৮ সালের নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা ও আওয়ামী লীগের বিরোধিতার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, “২০১৮ সালে তো আমরা সবাই ছিলাম। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ডকুমেন্টসহ আমি সংসদে বলেছি, আমি বাইরে আর্টিকেল লিখেছি। ডকুমেন্টসহ আমি জনগণের সামনে এসব তুলে ধরেছি। তার দুর্নীতির ডকুমেন্ট, পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি, বিভিন্ন পাওয়ার প্রজেক্ট, গ্যাস সেক্টরের দুর্নীতিসহ মানুষের নানা অপকর্ম-আমি এসব তুলে ধরেছি।”
তিনি বলেন, “আমি তাদেরকে বলেছিলাম, তারা বাংলাদেশের ডেমোক্রেসির জায়গায় ‘আওয়ামীক্রেসি’ চালু করছেন। এবং আমি এটাও বলেছিলাম, বাংলাদেশের জনগণ আপনাদেরকে কিছু করতে হবে না। আপনি কত শক্তিশালী, সেটাও আমি জানি। আপনাকে ১৬ কোটি মানুষ একটা করে ঢিল দিলে, আপনারা শেষ হয়ে যাবেন এবং ক্ষমতা থেকে চলে গেলে একদিনও দাঁড়াতে পারবেন না।”
তিনি দাবি করেন, “এই কথাগুলো কিন্তু পেপারে এসেছে, টেলিভিশনেও এসেছে। সমস্ত কথাগুলো সঠিক হয়েছে‘আওয়ামীক্রেসি’ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ গভর্নমেন্ট অফ দ্য আওয়ামী লীগ, বাই দ্য আওয়ামী লীগ, ফর আওয়ামী লীগ,এটা কোনো ডেমোক্রেসি না। এগুলো আমি বলেছি, আওয়ামী লীগের মুখের সামনেই বলেছি।”
সরকারের একনায়কতান্ত্রিক চরিত্র তুলে ধরে জিএম কাদের বলেন, “কর্তৃত্ববাদী সরকার, একদলীয় সরকার কায়েম করছেন। এই সরকার টিকবে না, টিকতে পারে না,এসব কথা আমার বক্তব্য। আমার চেয়ে কঠোরভাবে আওয়ামী লীগের কেউ কেউ সমালোচনা করেনি।”
তিনি বলেন, “কাজেই এখন যারা কথা বলছেন,আমরা কোন সময়ই তাদের দোসর ছিলাম না।”
সূত্র:https://tinyurl.com/4rrj6yp4
আফরোজা