
‘শাহবাগ বনাম বাংলাদেশ’-এভাবেই বর্তমান রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় প্রেক্ষাপটকে ব্যাখ্যা করলেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। এক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে তিনি শাহবাগ আন্দোলন ও সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলিকে রাষ্ট্রবিরোধী ও গণবিরোধী হিসেবে উল্লেখ করেন।সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “এই শাহবাগ বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ধ্বংস করেছে।”
তিনি দাবি করেন, ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবিতে শাহবাগে জাদুঘরের সামনে তিন দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। তাঁর ভাষায়, “এই পাঁচ দফার প্রথমটি ছিল,প্রতিদিন যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে, তার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। এবং মামলা থেকে শুরু করে নিষ্পত্তি-৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। একইসাথে মিথ্যা ধর্ষণ মামলার অভিযোগকারীকেও সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।”
দ্বিতীয় দাবিতে তিনি বলেন, জুলাই, শাপলা ও পিলখানা গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার শুরু করতে হবে এবং ‘এই গণহত্যাকারী দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।’ তাঁর ভাষায়, “২০১৩ সালে দিল্লির স্পন্সর প্রেসক্রিপশনে বিদেশি টাকায় শাহবাগে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম মব তৈরি করে রাষ্ট্রের আইন, আদালত, প্রশাসন—সব ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।”
শরিফ ওসমান হাদি অভিযোগ করেন, “তিন স্তরের নিরাপত্তা নিয়ে রাষ্ট্রের স্পন্সরশিপে তারা নিচে গিয়ে বিরিয়ানি খেয়ে বলেছে,‘বিচার চাই না, ফাঁসি চাই।’ আদালত রায় দিচ্ছে একরকম, আর তারা বলছে অন্যরকম। এটি রাষ্ট্রদ্রোহিতা।”
তিনি আরও বলেন, শাহবাগ আন্দোলনে শ্রমিক পাঠাতে গার্মেন্টস মালিকদের বাধ্য করা হয়েছে, ট্রেড লাইসেন্সের ভয় দেখানো হয়েছে, নির্দিষ্ট কর্পোরেট হাউসগুলোর নাম ধরে ধরে বলা হয়েছে কারা খাবার দেবে—তা না হলে ‘রাজাকার’ ঘোষণা দিয়ে পরদিন তাদের অফিসে হামলা হয়েছে। তাঁর ভাষায়, “এই ইতিহাসের নিকৃষ্টতম স্টেট স্পন্সরড সন্ত্রাস।”
তিনি দাবি করেন, “শাহবাগের একটি সুষ্ঠু তদন্ত কমিশন গঠন করা দরকার। যেমন পিলখানা নিয়ে তদন্ত কমিশন হয়েছে, তেমনি শাপলা নিয়েও হওয়া উচিত। কারণ শাহবাগ না হলে শাপলা হতো না।”
তাঁর বক্তব্য, “শাহবাগ হলো সেই জায়গা, যেখান থেকে গণহত্যাকে正িততা দেওয়া হয়েছে। আজকের জুলাই মাসের পক্ষে হাসিনার ‘বিকল্প নেই’ এই ন্যারেটিভ তৈরিতে শাহবাগই অগ্রণী ছিল।”
তিনি বলেন, “আমার ভাইবোনদেরকে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার পক্ষে কারা জিটিবিসি দিয়েছে? কারা ছিল সেই কালচারাল এলিট? গণমাধ্যমের ভূমিকাও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।”
শরিফ ওসমান হাদি দাবি করেন, “আমরা কোনও ব্যক্তির বিচার চাইনি। বলেছি—যদি কেউ অপরাধ করে প্রমাণ হয়, তবে তার বিচার হোক। কিন্তু শাহবাগে যে লাখ লাখ মানুষকে জোর করে অফিস থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তারা কি সবাই অপরাধী?”
তাঁর ভাষায়, “শাহবাগিতা হলো—আমরা কোনও আইন মানি না, রাষ্ট্র মানি না, আমরা বিচার চাই না, ফাঁসি চাই বলেই মব সন্ত্রাস কায়েম করব। এটা-ই শাহবাগিতা।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা দাবি করেছি—শাহবাগ ষড়যন্ত্রের একটি কমিশন গঠন করতে হবে। জানতে হবে কে টাকা দিয়েছে, কে এই প্রক্রিয়ায় ছিল। এটা অন্যায় নয়।”
পঞ্চম দফায় শরিফ ওসমান হাদি বলেন, “যারা শাহবাগের উসকানিদাতা যেমন লাকি আক্তার—তারা এখন পুলিশের উপরেও মব তৈরি করে নিজেদের ভিকটিম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমরা বলেছি, তাদের বিচার হোক। প্রমাণ থাকলে বিচার করুন, না থাকলে বিচার নয়।”
তিনি অভিযোগ করেন, “শাহবাগ বনাম বাংলাদেশ—এই দ্বন্দ্ব এখন স্পষ্ট। শাপলার সঙ্গে তুলনা করে অনেকেই বলে, ‘শাপলা বনাম শাহবাগ’। কিন্তু বাস্তবে এটি ছিল শাহবাগ বনাম গোটা বাংলাদেশ। শাহবাগ শুধু শাপলাকে নয়, বিএনপি, এমনকি আওয়ামী লীগের বিরোধী বামদেরও আক্রমণ করেছে।”
তাঁর ভাষায়, “তিনদিন আমরা রোজার মধ্যে অবস্থান করেছি। ইফতার করেছি, সেহরি করেছি। কোনও ক্রাউড ফান্ডিং করিনি, বরং মানুষ নিজেরাই সাহায্য করতে চেয়েছে। আমাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ, রিক্সাওয়ালা, ভ্যানওয়ালারা একাত্মতা প্রকাশ করেছে। নুরুল হক নূরও এসেছেন।”
তিনি জানান, “এই লড়াইয়ে আমরা থাকবো। আমরা পরবর্তীতে আরও কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। এখন দুই দফা কর্মসূচি নিয়ে এগোচ্ছি।”
সূত্র:https://tinyurl.com/29b8zjdr
আফরোজা