
ছবি: সংগৃহীত
রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মাহমুদুল হাসান মুন্না হত্যা মামলার এজাহারনামীয় গ্রেফতারকৃত আসামি নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনের সাবেক সাংসদ ও ডিমলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব উদ্দিন সরকারকে (৭৬) নীলফামারীর ডোমার থানায় দায়েরকৃত দুটি মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট করা হয়েছে।
নীলফামারীর জেলার আমলী আদালত-৫ এর বিচারক দেলোয়ার হোসেন ওই আদেশ প্রদান করে মামলা দুটির প্রধান আসামি আফতাব উদ্দিন সরকারকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশও দেন।
রবিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাকে প্রিজন ভ্যানে রংপুর জেলা কারাগার থেকে নীলফামারী আদালতে নিয়ে আসা হলে আদালতের বিচারক এই আদেশ প্রদান করেন। তবে এজলাস থেকে বের করে আনার সময় বিক্ষুব্ধ জনতা সাবেক এই এমপির উপর ছেঁড়া জুতা ও স্যান্ডেল নিক্ষেপ করে ও 'ভুয়া এমপি' বলে স্লোগান দিতে থাকে।
নীলফামারী জেলা জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট আল মাসুদ চৌধুরী ও নীলফামারী পুলিশ এবং আদালত সূত্রে জানা গেছে, সাবেক সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিনে যে সকল মামলায় নীলফামারীতে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়, তা হলো- ২০২৪ সালের ৫ আগষ্টের পরে জিআর মামলা ১৬৫/২৪, ডোমার থানার মামলা নম্বর ৩, তারিখ ৩ অক্টোবর/২০২৪।
দায়ের করা মামলায় বাদী ডোমারের পশ্চিম চিকনমাটি জুম্মাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ বিন আমিন। তিনি মামলায় উল্লেখ করেন, '২০১৫ সালের ১৪ মার্চ তার নিকট ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বাড়ি থেকে তুলে আনেন সাবেক এমপি আফতাব উদ্দিন সরকার ও তৎকালীন ডোমার থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। চাঁদা না দেয়ায় শারিরিক নির্যাতন করে রাজনৈতিক মামলায় তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়। সময়ের প্রেক্ষাপটে বিলম্বে তিনি এই মামলা দায়ের করেন।'
অপর মামলাটির জিআর নম্বর ১৮২/২৪। মামলার বাদী ডোমারের জোড়াবাড়ি ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির সভাপতি রবিউল ইসলাম। ডোমার থানার মামলা নম্বর ২০, তারিখ ২১ অক্টোবর/২০২৪। তিনি মামলায় উল্লেখ করেন, '২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আফতাব উদ্দিন সরকার আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন। বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সেন ও সাবেক প্রধান মন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় বোনের জামাতা অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। নির্বাচনের প্রচারণাকালে আফতাব উদ্দিন সরকার ও তার পক্ষের ২০০/৩০০ জন আসামি হামলা চালিয়ে ধানের শীষের প্রার্থীদের অসংখ্য যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দেয়। পাশাপাশি আসামিদের ধারালো অস্ত্রের হামলায় বিএনপির প্রার্থীর শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছিল।'
আফতাব উদ্দিন সরকার ডিমলা সদর উপজেলার বাবুরহাট এলাকার মৃত এমাজ উদ্দিন সরকার ছেলে। তিনি ২০১৪ ও ২০১৮ সালে টানা দুইবার ও ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সময় তিনি আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন। এ সময় তার ডিমলা শহরের বাড়ি ভাঙচুর ও পেট্রোল পাম্পে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।
উল্লেখ্য, আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় চলতি বছরের গত ৫ মার্চ রাতে রংপুর মহানগর পুলিশ তাকে মাহমুদুল হাসান মুন্না হত্যা মামলার ৬০ নম্বর আসামই হিসেবে রংপুর বিভাগীয় শহরের নিউ সেনপাড়ার স্কুলের পাশে ভাড়া বাসার তিনতলা থেকে গ্রেফতার করেছে।
তাহমিন হক ববী/রাকিব