
জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পাশে জামায়াত
শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ঈদের আনন্দ হারিয়ে যায় জামায়াত নেতাকর্মীদের ঘরে। গত ১৬ বছর ধরে জামায়াতে ইসলামীসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতাদের ঈদ কেটেছে নানা শঙ্কা আর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পতন হয়েছে হাসিনা সরকারের। যার মাধ্যমে মুক্ত পরিবেশে এবার ঈদ উদযাপন করার প্রস্তুতি জামায়াত নেতাকর্মীদের।
পটপরিবর্তনে দীর্ঘ সময় পর বেশিরভাগ নেতারাই ঈদ পালন করবেন নিজ নির্বাচনী এলাকায়। ঢাকায় যারা ঈদ করবেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার ঈদের নামাজ শেষে যাবেন এলাকায়। এবারের ঈদ জামায়াত নেতাদের মুক্ত পরিবেশ দিলেও অস্বস্তি রয়েছে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে অনেক নেতাকর্মীর মৃত্যু ও দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম মুক্ত না হওয়ায় নিয়ে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে সূরার একাধিক সদস্য জানান, আমরা এমন একটি সময় অতিক্রম করছি যখন সবাই এক সঙ্গে ঈদ উদযাপন করার কথা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বলতে হচ্ছে আমাদের দলের সহকারী সেক্রেটারি কারাগারে বন্দি। আমাদের অনেকসহকর্মী যাদের সঙ্গে গত ঈদে কথা বলেছি দেখা করেছি তাদের অনেকেই জুলাই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন। অনেকের সন্তান হারিয়েছেন। আমরা মুক্ত পরিবেশ পেলেও মনে শান্তি পাইনি। আমাদের অস্বস্তি এখনো রয়ে গেছে। যতদ্রুত সম্ভব আমাদের এটিএম আজহারের মুক্তি চাই।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আমিরে জামায়াতের নির্দেশনায় জামায়াতের সব নেতাকর্মীরা জুলাইয়ের আন্দোলনে শহিদ পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালন করবে। একইসঙ্গে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি এটিএম আজহারুলের মুক্তি আমরা ঈদের আগে দাবি করেছি। আদালত এখন বন্ধ রয়েছে। আমরা আশা করছি খুব দ্রুত এটিএম আজহারুল ইসলাম মুক্ত হবেন।’
জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছে জামায়াতের কয়েকশ’ নেতাকর্মী। এবারের ঈদুল ফিতরে নিজ দলের নেতাকর্মীসহ সব শহীদ পরিবারের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াত। গত ৩ মার্চ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত, পঙ্গু ও শহীদ পরিবারের সম্মানে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামীর এবারের ঈদ হবে শহীদ পরিবারের সঙ্গে। শহীদরা আমাদের পরিবারের সদস্য।’
ঈদকে সামনে রেখে গত কয়েক দিনে সারাদেশে প্রায় দেড় হাজার শহীদ পরিবারের কাছে ঈদ উপহার পাঠিয়েছে জামায়াত। একই সঙ্গে আহত ছাত্রজনাতার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পরিবারের পাশে থাকছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ২৭ মার্চ ময়মনসিংহে শহীদ আব্দুল্লাহ আল মাহিন ও শহীদ মো. রিদওয়ান হোসেন সাগরের পরিবারের কাছে ঈদ উপহার ও নগদ টাকা পৌঁছে দেন ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াত।
এ সময় ঈদ উপহার পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে শহীদ সাগরের বাবা মো. আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, জামায়াতে ইসলামের সদস্যরা প্রতিনিয়ত যেভাবে আমাদের পরিবারের খোঁজ নেন, আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
জামায়াত নেতাদের ঈদ ॥ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতাদের অধিকাংশই ঈদ করবেন নিজ নির্বাচনী এলাকায়। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানা যায়, দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান ঈদ করবেন ঢাকায়, নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান মক্কায়, নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের কুমিল্লার নিজ এলাকায় ঈদ করবেন। আরেক নায়েবে আমির মাওলানা শামসুল ইসলাম চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার খুলনার নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করবেন।