ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ৩০ মার্চ ২০২৫, ১৬ চৈত্র ১৪৩১

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মতামত পেশ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৬:৪২, ২৭ মার্চ ২০২৫

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মতামত পেশ

ছবি: সংগৃহীত

সংস্কার প্রস্তাবনার উপর আজ সকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে মতামত জমা দেয়া হয়েছে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ১৬৬ প্রস্তাবের মধ্যে ১২২ টিতে একমত, ২১ টিতে আংশিক একমত, আর ২৩ টি প্রস্তাবে একমত নয় বলে জানিয়েছে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি রাষ্ট্রের নাম ও সংবিধানের মূল নীতিমালা অক্ষুণ্ণ রাখার পক্ষে মত দিয়েছে। 

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি মতাদর্শিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, লিংগীয় ও সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের কারনে নাগরিকদের মধ্যে কোন বৈষম্য  না রাখার পক্ষে মত দিয়েছে। একইসাথে কোন যুক্তিতে নাগরিকদের স্বীকৃত  গণতান্ত্রিক ও মানবিক অধিকার খর্ব, সংকুচিত বা স্থগিত রাখার বিপক্ষে মত দিয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সকালে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে সংস্কার প্রস্তাবনার উপর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে স্পেডশীটে  পার্টির মতামত জমা দেয়া হয়েছে। জাতীয় সংসদ ভবনে কমিশন সচিবালয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে জনাব বদিউল আলম মজুমদার এসব মতামত গ্রহন করেন। 

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আনছার আলী দুলাল ও মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক মতামত  জমা দেন।

বিপ্লবী  ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে ১৬৬ টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে  ১২২ টি প্রস্তাবে একমত, ২১ টিতে আংশিক একমত, আর ২৩ টিতে একমত নয় বলে জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে পার্টির পক্ষ থেকে পরবর্তীতে বিস্তারিত মতামত জানানোর কথা বলা হয়েছে।

কমিশনে প্রদত্ত চিঠিতে পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক উল্লেখ করেন, স্প্রেডশিটে যেভাবে  উত্তর চাওয়া হয়েছে তা যথেষ্ট বিভ্রান্তি তৈরী করেছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী সম্পর্কে  যেভাবে মতামত দিতে বলা হয়েছে তাতে  অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রকৃত অবস্থান ব্যক্ত করা দুরুহ।

তিনি বলেন সংস্কারের মধ্য দিয়ে এটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন  যে,  রাষ্ট্র কোন নাগরিকের  মতাদর্শিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়,লিংগীয় পরিচয়  ও সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের জন্য  তার নাগরিকদের মধ্যে কোন বৈষম্য করবেনা।একইসাথে এই সংবিধান নাগরিকদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মৌলিক গণতান্ত্রিক ও মানবিক অধিকারের এমন সুরক্ষা নিশ্চিত করবে যা সাংবিধানিক বা প্রশাসনিক কোন আইন,বিধি বা অধ্যাদেশ দিয়ে বাতিল,সংকুচিত বা স্থগিত রাখতে পারবেনা।

তিনি বলেন, নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক পথে সরকার পরিবর্তনে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করাসহ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। অনেক দিন ধরেই গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থা টাকার খেলায় পর্যবসিত হয়েছে।ফলশ্রুতিতে জাতীয় সংসদও অনেকটা বিত্তবানদের ক্লাবে পরিনত হয়েছে। অথচ নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবে টাকার খেলা বন্ধে নির্দিষ্ট কোন প্রস্তাব নেই।

সাইফুল হক বলেন, আমরা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ও এক্তিয়ার কমানোর পক্ষে নই।স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে নির্বাচন কমিশন যাতে কার্যকরি ভূমিকা পালন করতে পারে তা নিশ্চিত করা দরকার। 

তিনি বলেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি  রাষ্ট্রের নাম ও সংবিধানের মূল নীতিমালা অক্ষুণ্ণ রাখার পক্ষেই মতামত দিয়েছে।বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি  স্বাধীনতার ঘোষণায় উল্লেখিত - সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারকেও যুক্ত করার প্রস্তাব রেখেছে।তিনি জানান,বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সসম্প্রসারণের পক্ষে মতামত দিয়েছে।

তিনি বলেন,  বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বয়স ২৫ বছর রাখার পক্ষেই মত দিয়েছে।বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সংসদের উচ্চতর কক্ষে ১৫০ আসন নির্ধারণ করে দলসমূহের সারাদেশে প্রাপ্ত মোট ভোটের সংখ্যানুপাতিক হারে আসন নির্ধারণের  পক্ষে মত দিয়েছে। 

সাইফুল হক বলেন,  এতগুলো কমিশন গঠিত হলেও সমাজে নির্মম বৈষম্য বিলোপে কেন  কোন কমিশন গঠিত হয়নি তা বোধগম্য নয়।তিনি বলেন, দূর্বৃত্ত  রাজনীতির সাথে দূর্বৃত্ত অর্থনীতির যে  অশুভ মেলবন্ধন তা অব্যাহত থাকলে প্রকট বৈষম্য দূর হবেনা এবং সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংস্কারও আখেরে টেকসই হবেন।

প্রদত্ত চিঠিতে সাইফুল হক বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের লক্ষ্যে  এখন জাতীয় সমঝোতা গড়ে তোলার এক অসাধারণ সুযোগ তৈরী হয়েছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল যেহেতু অনেক আগে থেকেই সংস্কারের কথা বলে আসছে সে কারণে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজ তুলনামূলক সহজ হয়েছে।বিশেষ কোন পক্ষ অবলম্বন না করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংস্কারের প্রশ্নে ন্যুনতম জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে এগুলে দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ সহজতর হবে।এক্ষেত্রে চাপাচাপি করতে গেলে যেটুকু অর্জন করা যেত তাও  হয়তো ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যেতে পারে। তিনি সংস্কার কমিশনের দায়িত্বশীল ভূমিকা  প্রত্যাশা করেন এবং সাফল্য অর্জনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের কথা জানান।

বিকাশ/শহীদ

×