
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও কোনো ঠিকানা নেই। যাদের ভারতে আর লন্ডনে দ্বিতীয় ঠিকানা আছে, তারাই যখন জামায়াতে ইসলামীকে স্বাধীনতা বিরোধী, দেশ বিরোধী বলে তখন এটি ভূতের মুখে রাম-রাম বলার মতো হয়ে যায়।
বুধবার (২৬ মার্চ) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক আয়োজিত ‘মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস’ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান কখনো চায়নি পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ হোক। তিনি দেশপ্রেমে নয়, ক্ষমতার মসনদে বসার লড়াই করেছেন। ৭ মার্চ যদি শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই থাকেন, তাহলে ৭ থেকে ২৩ মার্চ শেখ মুজিব পাকিস্তানের সঙ্গে মিটিংয়ে বসেছিলেন কেন? ওই মিটিংয়ের গোপন রহস্য হচ্ছে, তিনি বারবারই চেয়েছেন পাকিস্তানের ক্ষমতার মসনদে বসতে।
তিনি বলেন, ভারত আমাদের এই দেশকে নিয়ে স্বাধীনতার পর থেকেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এরই অংশ হিসেবে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার মিশনে নেমেছে ভারত। যার কারণে তারা আমাদের দেশ নিয়ে তাদের মিডিয়াতে নানা রকম গুজব ছড়াচ্ছে এবং প্রচার ও প্রকাশ করছে।
তিনি কোনো গুজবে কান না দিয়ে দেশবাসীকে জুলাই-আগস্টের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগের মত বিরোধী রাজনৈতিক দলকে ঘায়েল করার মিশনে না নেমে আদর্শিক রাজনীতি চর্চা করতে হবে। বিরোধিতা করার আগে আয়নায় নিজের চেহারা দেখার এবং পূর্বের ইতিহাস জানারও পরামর্শ দেন অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। জামায়াত সেক্রেটারি আরও বলেন, জামায়াত তাদের সঙ্গে থাকলে হয় সঙ্গী, আর সঙ্গে না থাকলে হয় জঙ্গি! যারা জামায়াতে ইসলামীকে স্বাধীনতা বিরোধী বলে, তাদের জামায়াতে ইসলামী গঠনতন্ত্র পড়ার আহ্বান জানান মিয়া গোলাম পরওয়ার।
জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, জামায়াত কাঁদা ছেড়াছুড়ির রাজনীতি করে না। জামায়াত মুখ খুলতে চায় না। যারা জামায়াতকে স্বাধীনতা বিরোধী বলে তাদের কোন কোন নেতার পরিবারের কারা-করা স্বাধীনতা বিরোধী ছিল, সেটা এদেশের জনগণ জানে। আজকে যারা আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ভাষায় কথা বলে, তারাও কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে স্বাধীনতা বিরোধীদের এমপি-মন্ত্রী এমনকি রাষ্ট্রপতিও বানিয়েছে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াতের বিরোধিতা করার আগে জামায়াতে ইসলামী অবদানের কথা স্মরণ করতে হবে। জামায়াতের সমর্থন ছাড়া সরকার গঠন করা সম্ভব হয়নি, রাজপথে আন্দোলন করা সম্ভব হয়নি। ক্ষমতায় গিয়ে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের হত্যা করার পরও জামায়াতে ইসলামী জাতীয় স্বার্থে সব কিছু ভুলে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ আন্দোলন করেছে। ওই আন্দোলনে আপনাদের দলের কয়জন নেতাকর্মী রাজপথে মার খেয়েছে, আর জামায়াত-শিবিরের কতজন মার খেয়েছে, রক্ত দিয়েছে, সেটা নিজের বিবেককে প্রশ্ন করে জানবেন।
তিনি সব ভেদাভেদ ভুলে জাতীয় স্বার্থে সকল দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মতের দ্বিমত থাকতে পারে, তবে দেশ ও জাতির সঙ্গে আমাদের এক হতে হবে। নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান ব্যাখ্যা করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে এবং গণহত্যার বিচার করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন নির্বাচন দেবে, জামায়াত তখনই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। জামায়াত শুধু নিয়ম রক্ষার একটি নির্বাচন চায় না, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হালিম, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন, মোহাম্মদ কামাল হোসেন এবং অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি শামছুর রহমান, কর্মপরিষদের সদস্য মাওলানা ফরিদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন, মাওলানা মোশাররফ হোসেন, কামরুল আহসান হাসান, শাহীন আহমেদ খান, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সহকারী সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমনসহ মহানগরীর নেতারা।
নুসরাত