ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৩ চৈত্র ১৪৩১

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিএনপির আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল

পাকিস্তানের সহযোগীরা এখন বুক ফুলিয়ে কথা বলছেন

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৩৯, ২৬ মার্চ ২০২৫

পাকিস্তানের সহযোগীরা এখন বুক ফুলিয়ে কথা বলছেন

মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

পাকিস্তানের সহযোগীরা এখন বুক ফুলিয়ে কথা বলছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, যারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তাদের নিতে চাই না, তিক্ততা সৃষ্টি করতে চাই না। মঙ্গলবার দুপুরে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 
নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, ওরা গাড়িবহর নিয়ে যাক আর যাই করুক, সমস্যা নেই। আমরা জানি ওরা কী করতে পারবে। আগামীতে বিএনপিই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে, ইনশাআল্লাহ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ আমাদের কাছে অত্যন্ত আবেগের। এটি আমরা ভুলতে পারি না। মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার অবদান ভুলে যাওয়ার নয়। তিনি বলেন, পাকিস্তান একাত্তরের বর্বরতার জন্য এখনো ক্ষমা চায়নি। কিন্তু এখন অনেকে বিশেষ করে কোনো কোনো দল বলার চেষ্টা করছে, একাত্তরে কিছু হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের অবস্থা আমরা ভুলে যাচ্ছি বা ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। 
দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নিয়ে কোনো ধরনের বিতর্ক না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা মেনে নিতে পারি না। দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, এমন কোনো কথা যেন না শুনতে হয় যে বিএনপি খারাপ কিছু করছে। যারা ১০০ গাড়ি নিয়ে শোডাউন করে তারা কী করবে তা বোঝা যাচ্ছে। তাই নিজেরা সতর্ক থাকুন।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ভিত্তি তো বিএনপি তৈরি করেছে। হঠাৎ করেই একটা বিপ্লব হয়নি, বিএনপির নেতাকর্মীদের আন্দোলনের মধ্যে উঠে এসেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে এদেশীয় যারা হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার সহযোগী ছিল, বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধী ছিল, তারা এখন বুক ফুলিয়ে কথা বলছেন। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান-অবজ্ঞা প্রদর্শন না করা ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে তাগিদ দেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের মধ্যে কারও কারও ধৃষ্টতা তারা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে প্রশ্ন করে। যারা ইতিহাস জানে না, তারা জনগণের কোনো উপকার করতে পারবে না।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ দুঃসহ সময় ছিল। আওয়ামী লীগ কখনোই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। সুতরাং তাদের আর কোনো গণতন্ত্রের সুবিধা দেওয়ার কারণ নেই। তিনি বলেন, সংস্কারের কথা অনেকেই বলেছে, তবে দেশে মৌলিক সংস্কার হয়েছে বিএনপির হাত ধরে। 
৩১ দফা সংস্কার বিএনপি দিয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার সংস্কারের নামে বিশাল পাহাড় নিয়ে এসেছে। যেগুলো অনেক কিছুই জনগণ বোঝে না।

বিএনপি পরিষ্কার করে বলেছে জনগণের জন্য যা উপকারী সেই সংস্কার করতে হবে। তবে এই গণতন্ত্রের যাত্রার পথে একমাত্র পথ হলো নির্বাচন। কিন্তু নতুন করে ষড়যন্ত্র ও সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন নতুন কুতুব তৈরি হয়েছে, যারা বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের পথে নিতে চায় না। 

মির্জা ফখরুল বলেন, যেসব দল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে হত্যাযজ্ঞে সহযোগিতা করেছিল তারা এখন গলা উঠিয়ে কথা বলার চেষ্টা করছে। ওই সময় কিছু হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন তারা। তারা বোঝানোর চেষ্টা করছেন, ১৯৭১  সালের মুক্তিযুদ্ধ কোনো ঘটনাই ছিল না। তিনি বলেন, ২৫ মার্চের কালো দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এই দেশের মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। হত্যা করেছিল লাখো নিরীহ মানুষ। কিন্তু সেই গণহত্যার জন্য পাকিস্তান এখনো ক্ষমা চায়নি। এ কথাগুলো এখন কেন বলছি, কারণ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। 
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের যে আন্দোলন, লাখ-লাখ মানুষের যে আত্মত্যাগ, ৯ মাস ধরে বাড়িঘর ছেড়ে কোটি কোটি মানুষ যে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল, সেই অবস্থা যেন আমরা ভুলে যাচ্ছি। যারা সরাসরি হত্যাযজ্ঞে সহযোগিতা করেছে, তারা এখন গলা উঁচিয়ে-ফুলিয়ে কথা বলছে। তবে ইতিহাস তো ইতিহাসই, কেউ বিকৃত করতে পারবে না। 
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী না, তারা গণতন্ত্র ধ্বংসকারী। তাই আওয়ামী লীগকে গণতন্ত্রের সুবিধা দেওয়ার কথা চিন্তা করতে পারি না। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছে, এটাই তাদের চরিত্র।  ওরা দেখে, জনগণ যখন ক্ষেপে ওঠে, তখন ওরা এভাবে কর্মীদের অরক্ষিত রেখে পালিয়ে যায়। এবারও তাই করেছে, জনতার বিক্ষোভে ভারতে পালিয়ে গেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মহীয়সী নারী বেগম খালেদা প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয় ৯ মাস জেলে ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সংস্কার প্রথম শুরু হয়েছে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত দিয়ে, পরে করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। দেশের মৌলিক সংস্কার কিন্তু বিএনপির হাতে দিয়েই। এখন ৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের প্রস্তাব দিয়েছে তো বিএনপি। 
২০১৬ সালে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ২০৩০ ভিশন দিয়েছে। সংস্কার কোনো নতুন বিষয় নয়। অথচ অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের পাহাড় এনেছে। আমরা সংস্কারের প্রস্তাবনায় মতামত দিয়েছি, পক্ষে-বিপক্ষে। আমরা বলেছি, দ্রুত নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্যকে আমরা সফল করতে পারিনি। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও বারবার হোঁচট খেয়েছি। শুধু কি তাই, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে অস্বীকার করেছিল স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ। জিয়ার অবদানকে অস্বীকার করতে গিয়ে বারবার আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। অথচ জিয়াউর রহমান দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাতা করেছিলেন। 
ড. মোশাররফ বলেন, দেশের মানুষ বার বার প্রমাণ করেছে, ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে সরকার পরিবর্তন করতে পারে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তা দেখিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, জনগণের আকাক্সিক্ষত ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টির পাঁয়তারা করা হচ্ছে, উছিলা সামনে আনার চেষ্টা করছে। জনগণ সন্দেহ পোষণ করছে, আমরা কিন্তু বুঝি। কেউ বলছে, সংস্কার আবার কেউ বলছে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এগুলো বলে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিলম্বিত করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। 
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু প্রমুখ।

×