
ধীরে ধীরে অবস্থান স্পষ্ট হচ্ছে জনরোষে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের অবস্থান। সম্প্রতি রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ কিংবা দলটির প্রত্যাবর্তন নিয়ে সমাজ পাতায় বেশ আলোচনা চলছে। দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে কিনা সেটি নিয়েও বাহাসের অন্ত নেই। অথচ দেশে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পিকেটিং খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। তৃণমূল নেতা ছাড়া বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের হাল ধরার মত কেউ নেই বললেই চলে।
আওয়ামী লীগের প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভের কারণে যে তিন-চার জনের নাম সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে তারাও নৌকার হাল ধরতে সাহস পাবে বলে মনে হয় না। বাকি যারা বিদেশে থেকে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের স্বপ্ন দেখিয়ে যাচ্ছেন, তারা দিন দিন হাস্যকর হয়ে উঠছেন।
আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য সংখ্যা ১৯। ৫
আগস্ট সরকার পতনের পর মতিয়া চৌধুরী মারা গেছেন। সভাপতি মণ্ডলীর উনিশ সদস্যের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, কাজী জাফরউল্লাহ, আব্দুল রাজ্জাক, ফারুক খান, শাজাহান খান, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও কামরুল ইসলাম গ্রেফতার হয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের মধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবান গোলাপ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাকিদের প্রায় সবাই বিদেশে অবস্থান করছেন। ইতিমধ্যে অনেকেই অনলাইন মাধ্যমে এবং নানা অনুষ্ঠানে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন।
বিভিন্ন সূত্র থেকে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই ও কানাডা এই পাঁচ দেশে পালিয়ে গিয়ে অবস্থান করছেন বেশিরভাগ নেতা। এর মধ্যে ভারতে রয়েছেন ২/৩ শত জনেরও বেশি। আবার কিছু নেতা আছেন অন্য দেশ থেকে ভারতে আসা-যাওয়া করেন। বিদেশে আত্মগোপনে থাকা নেতারা ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশে থাকা অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন। কেউ কেউ দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন।
শেখ হাসিনার দিল্লি অবস্থান বিষয়টি নিশ্চিত। একই শহরে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরেও আছেন বলে জানা গেছে। তবে ওবায়দুল কাদের সঙ্গে অন্যদের খুব একটা যোগাযোগ নেই, তিনি অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। অনেকেই তার রাজনীতি শেষ বলে মনে করেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সামরিক বেসামরিক প্রশাসনে চাকরি করা কিছু কর্মকর্তাও দিল্লিতে আছেন বলে ভারতীয়দের সমাজ পাতায় প্রায়ই দেখা যাচ্ছে।
জানা গেছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতা এবং সাবেক মন্ত্রীরা অবস্থান করছেন। এর মধ্যে জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ কলকাতায় বসে বেশ তৎপর রয়েছেন বলে জানা গেছে।
যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সাবেক মন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীসহ অনেকেই। এর মধ্যে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বিভিন্ন অনলাইন আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন এবং সর্বশেষ গত সোমবার লন্ডনে একটি কর্মীসভায়ও যোগ দেন তিনি।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. এ আরাফাত, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলামসহ আরো কিছু নেতা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় নেতৃত্বে তারা নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে দলে প্রচার রয়েছে।
এছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ কানাডায় এবং আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ বেলজিয়ামে রয়েছেন বলেও জানা গেছে।
দেশে নেই বড় কোন নেতা। বিদেশেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সিনিয়র আর হাইব্রিড নেতারা। যে যেই দেশেই অবস্থান করুক না কেন, সেখানেও গা ঢাকা দিয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। কেননা আওয়ামী বিরোধী প্রবাসী সব দেশেই রয়েছেন। সুযোগ পেলেই গণধোলাই বিদেশেও অপেক্ষা করছে এসব পলাতক নেতাদের জন্য। এমনটাই বলছেন অনেক প্রবাসী।
সুতরাং আওয়াজ যতটাই উঠুক আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ আর সম্ভাবনা আপাতত ক্ষীণ। আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ দিবার স্বপ্ন ছাড়া কিছুই না বলছেন রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা।
সজিব