ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১

সেনাবাহিনীর সাথে কনফ্লিক্ট তৈরি করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, দুরভিসন্ধিমূলক কিনা খতিয়ে দেখতে হবে: নুর

প্রকাশিত: ০০:৫১, ২৫ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ০০:৫১, ২৫ মার্চ ২০২৫

সেনাবাহিনীর সাথে কনফ্লিক্ট তৈরি করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, দুরভিসন্ধিমূলক কিনা খতিয়ে দেখতে হবে: নুর

সেনাপ্রধানকে নিয়ে নতুন করে বিতর্কিত করা, কিংবা সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া, বা সেনাবাহিনীর সাথে একটা কনফ্লিক্ট তৈরি করা-এটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং এর পেছনে অন্য কোন দূরভিসন্ধি আছে কিনা, এই স্ট্যাটাস গুলো বা এই কথাগুলো যারা বলেছেন সেই বিষয়টা আমাদের পরিষ্কার হওয়া দরকার। বিশেষ করে আমাদের ছাত্রনেতা হাসনাত এবং সার্জিসের সাথে কি আলোচনা হয়েছিল, তারা কেন ওখানে গিয়েছিলেন সেই বিষয়টা তাদের কাছ থেকে জানা দরকার।


সোমবার (২৪ মার্চ) দুপুরে বরিশাল প্রেসক্লাব মিলনায়তনে গণ অধিকার পরিষদের নগর ও জেলা কমিটির কর্মিসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নুরুল হক নুর। এ উপলক্ষে তিনি সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং এসব বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।


তিনি আরও বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আওয়ামী লীগের নতুন করে অপতৎপরতা শুরু হয়েছে। গত জুলাই-আগস্টে একটি শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনে বহু মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, তাদের আহত করা হয়েছে, বহু মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, এবং গত ১৬ বছরে বাংলাদেশকে যে এক নরকে পরিণত করা হয়েছে, তাতে আওয়ামী লীগের কোনো অনুশোচনা নেই।”


তিনি আরও বলেন, "আওয়ামী লীগের প্রধান এবং পতিত স্বৈরাচার সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনারা দেখেছেন যে, দেশের বাইরে দিল্লি থেকে নানা ধরনের উস্কানিমূলক ষড়যন্ত্র বক্তব্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন এবং তার নেতাকর্মীদেরকে উত্তেজিত করে রাস্তায় নামিয়ে একটা নৈরাজ্য তৈরি করার চেষ্টা করছেন। শেখ হাসিনা যেহেতু ভারতে অবস্থিত, কাজেই শেখ হাসিনার এই অপতৎপরতার দায় দিল্লি এড়াতে পারে না। সেই জায়গা থেকে আমরা বারবার ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসকে তাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকেও ডেকে তলব করে জানিয়ে দিয়েছি যে, শেখ হাসিনার এই অপতৎপরতা বন্ধে যেন ভারত পদক্ষেপ নেয়।”


তিনি বলেছেন, "আজকে এই গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে একটি ঐক্য তৈরি হয়েছিল, সেটি নানা কারণে কিছুটা বিভক্তি এবং বিভাজনের দিকে চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে এই গণঅভ্যুত্থান, যা রাতারাতি হয়নি, এর জন্য বিরোধী দলসমূহ গত ১৬ বছর ধরে সংগ্রাম করেছে। হয়তো জুলাই-আল্টিমেটাম আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি সফল গণঅভ্যুত্থান হয়েছে।"


তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, "এই আন্দোলনের কারণে আমাদের ছাত্র-তরুণদের প্রতি মানুষের একটা অন্যরকমের আশা, ভরসা এবং প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। সেই আন্দোলনের নেতা হিসেবে এখানে অনেকেই আছেন যারা খুব পরিচিত মুখ। তাদেরকে তাদের একটি কথা মানুষ গুরুত্ব সহকারে শোনে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে বিশেষ করে নাগরিক পার্টির সংশ্লিষ্ট ছাত্র নেতাদের কিছু বক্তব্য শোনার পর, তা দেশের মধ্যে এক চরম উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা তৈরি করেছে। একেবারে সাধারণ মানুষ থেকে প্রশাসন পর্যন্ত এই বিষয়ে অস্থিরতা লক্ষ্য করেছি।"


তিনি বলেন, “অতএব, ছাত্র নেতৃবৃন্দ যেহেতু এখন একটি দল করেছেন, তাদের দায়িত্বশীল জায়গা থেকে এই নাগরিক পার্টি যেন এই ঘটনার তদন্ত করে এবং এর প্রকৃত রহস্য জাতির সামনে উন্মোচন করে। না হলে এটি মারাত্মক ক্ষত তৈরি করতে পারে। সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে এই ধরনের প্রোপাগান্ডা এবং বিশেষ করে এই মুহূর্তে, যেখানে পুলিশ কার্যকরভাবে কাজ করছে না, সামরিক বাহিনী না হলে গত সাত মাসে যে স্থিতিশীলতা আমরা দেখেছি, তা নষ্ট হতে পারত।”


তিনি আরও বলেন,"আজকের দিনেও সেনাপ্রধান তার বক্তব্যে জানিয়েছিলেন, ১৮ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। আমরা শুরুর দিকে এককথায় পরিষ্কার বক্তব্য দিয়েছিলাম যে, ক্ষমতার পরিবর্তন এবং নতুন সরকার গঠন করার জন্য সাধারণ মানুষ জীবন দেবে না, সংগ্রাম করবে না। তবে এই সংগ্রাম এবং ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কাঠামোর বিলোপের পর আমরা আশা করছি যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।”


শেষে, তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, "এখনও যদি কিছু অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়, তবে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য এবং অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের একটি জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি প্রয়োজন। সেখানে আপনি যদি সেনাবাহিনীকে এক্সক্লুড করতে চান, এবং একইভাবে কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবীও যদি সেনাবাহিনীকে নিশানা করেন, তা হতে পারে মারাত্মক।"


তিনি প্রধান উপদেষ্টা থেকে জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানিয়ে বলেন, "ঈদের আগে অথবা ঈদের পর, যাতে এই চলমান সংকটের বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়।"


তিনি বলেন, "দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি এবং রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেরকে অনুরোধ করছি, ছাত্রনেতাদের বক্তব্যে প্রভাবিত না হয়ে তাদের নিজেদের সংগঠনের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করার জন্য।"
 

আফরোজা

×