ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১

তিতাস জুড়ে সমালোচনার ঝড়

বিএনপির ইফতার মাহফিলে আ.লীগের নেতা-কর্মী, তৃণমূলে ক্ষোভ

নিজস্ব সংবাদদাতা, দাউদকান্দি

প্রকাশিত: ২২:০৩, ২৪ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ২২:০৬, ২৪ মার্চ ২০২৫

বিএনপির ইফতার মাহফিলে আ.লীগের নেতা-কর্মী, তৃণমূলে ক্ষোভ

ছবি সংগৃহীত

কুমিল্লার তিতাসে বিএনপির ব্যানারে আয়োজিত ইফতার মাহফিলের মঞ্চে আ.লীগের পদধারী নেতা ও তাদের দোসরদের উপস্থিতি নিয়ে উপজেলা জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এনিয়ে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজন ও ক্ষোভের সঞ্চার ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতাকর্মীদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

জানা যায়, শনিবার (২২ মার্চ) বিকালে উপজেলার ভিটিকান্দি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড বিএনপি কর্তৃক আয়োজিত "মানিককান্দি বিএনপি" লেখা নামে ব্যানারে এ ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, তিতাস উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম সরকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, তিতাস উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ডাঃ গোলাম মহিউদ্দিন জিলানী, ভিটিকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব মাজহারুল ইসলাম খোকা প্রমুখ।

তবে ইফতার মাহফিলের আগে আলোচনা সভার মঞ্চের প্রথম সারিতে ভিটিকান্দি ইউনিয়ন আ.লীগের সহ-সভাপতি করিম ভূইয়া, আ.লীগের দোসর লতিফ ভূইয়া ও মো. আলমসহ হাইব্রিড আ'লীগের একাধিক দোসররা ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠিত ইফতার মাহফিলে আ'লীগ নেতা ও তাদের দোসরদের এক সঙ্গে মঞ্চে বসা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা জুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয় এবং বিএনপির স্থানীয় তৃনমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজন ও ক্ষোভের সঞ্চার ঘটতে দেখা যায়।

এবিষয়ে ভিটিকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক ফরিদ সরকার বলেন, এইটা কিসের বিএনপির ইফতার মাহফিল? এইটা আ'লীগের ইফতার মাহফিল। বিএনপির ইফতার মাহফিল হলে দলের সিনিয়র নেতৃবৃৃন্দ ও ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি,সাধারন সম্পাদক সহ আমরা সবাই বিষয়টা জানতাম। কিন্তু এবিষয়ে তারা আমাদের কিছুই জানায়নি। বিএনপির ব্যানার ব্যবহার করে তারা কিভাবে আ'লীগের লোকজনকে সাথে নিয়ে এ ইফতার মাহফিল করে? ইফতার মাহফিলের আয়োজনকারী লতিফ বিএনপির কেউ না। সে আ'লীগের হাইব্রিড নেতা যার নেতৃত্বে পূর্বে আ'লীগের সংসদ সদস্যের নামে মেরী আপা ফ্রেন্ডস ক্লাব প্রতিষ্ঠাসহ আ'লীগের বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হয়। আমাদের দলীয় কিছু নেতার সাথে আঁতাত করে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার জন্য এই পাঁয়তারা করছে বলেও অভিযোগও তুলেন এই নেতা।

বিএনপির সদস্য সচিব মাজহারুল ইসলাম খোকা তিনি এবিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমাকের দাওয়াত দিয়েছিল ইফতার মাহফিলে এবং বলা হয়েছিল মানিককান্দি গ্রামবাসীর আয়োজনে এ ইফতার মাহফিল করা হবে আমি ঢাকা থাকায় অনুষ্ঠানের শেষ মুহুর্তে সেখানে অংশগ্রহণ করি। এছাড়া অন্য কোন বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

ভিটিকান্দি ইউনিয়ন ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আব্দুর রহিম, সাধারন সম্পাদক ডালিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক রমিজ মোল্লাও এ ইফতার মাহফিলের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন। বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক সালাম মেম্বার বলেন, আওয়ামী লীগের শরীরে ছাত্র-জনতার রক্তের দাগ। ছাত্র জনতার রক্তের ঘ্রাণ না যেতেই সেই আ'লীগের দোসররা অন্তত বিএনপির ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণ করতে পারে না। এই ইফতার মাহফিলের বিষয়ে আমরা কিছুই জানতাম না। এলাকার বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারি এবং ফেইবুকে ছবি দেখেছি সেখানে আ'লীগের তালিকাভুক্ত নেতা ও আ'লীগের দোসরদের উপস্থিতি দেখেছি বিষয়টি দুঃখজনক। বিএনপির নাম ব্যবহার করে আ'লীগের লোকজনের নেতৃত্বে আমাদের দলীয় কিছু নেতার যোগসাজশে এ ইফতার মাহফিল করা হয়েছে৷ আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করাই তাদের লক্ষ্যে সিনিয়র নেতৃবৃন্দের কাছে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আশা করি এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন।

ঘটনার বিষয়ে জানতে মো. লতিফ ভূইয়া'র মুঠোফোনে কল দিলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এবিষয়ে আমি ফোনে কোন বক্তব্য দিব না, আপনারা ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেন, বলে ফোন কেটে দেয়।

এবিষয়ে তিতাস উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মেহেদী হাসান সেলিম ভূঁইয়া হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ১৭ বছর যেই আ'লীগের বিভিন্ন হামলা-মামলায় জর্জরিত আমরা নেতাকর্মীরা আজ সেই দলের নেতারা বিএনপি নেতাদের পাশে বসে ইফতার মাহফিলে অংশ নিচ্ছেন এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জার। এবিষয়ে আমি বিএনপির হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

আশিক

×