
ছবি:সংগৃহীত
জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, "এনসিপি তাদের আজকে যে প্রস্তাবনা ও মতামত জমা দিয়েছে, সেটি বিএনপিও জমা দিয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে বিএনপির দ্বিমত বেশি দেখা গেছে।
প্রথমেই আমরা দেখছি, সংবিধানের ৭১ ও ২৪ ধারাকে গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে এক কাতারে নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়াও, গণপরিষদ নির্বাচন যেটি এনসিপি চায়, সেটিতেও বিএনপির আপত্তি আছে। বিএনপি বলছে, এসবের কোনো দরকার নেই। নির্বাচিত সরকারই এই কাজগুলো করবে। দেশ নতুন হয়নি যে নতুন করে সংবিধান লাগবে। বিদ্যমান সংবিধান গণতন্ত্রের চরিত্র হারিয়েছে বলে ব্যাপক সংশোধন দরকার।"
তিনি আরও বলেন, "আপনারা কেন নতুন সংবিধান হলে সমস্যাটা কি মনে করেন? নতুন সংবিধান হলে কোনো সমস্যা নেই। সংবিধান কি একটা লিখিত দলিল? সংবিধানের নিজস্ব কোনো শক্তি নেই। সংবিধান মানুষ নিয়ে কাজ করে। এই যে বিগত সংবিধান, এতে কোথায় লেখা ছিল যে রাতের বেলায় ভোট করা যাবে? এই সংবিধানে কোথায় লেখা ছিল যে ভোটের আগে ভোট হবে? এই সংবিধানে অনেক ভালো কথাও লেখা ছিল, আবার খারাপ কথাও লেখা ছিল। আমার বক্তব্য সেই জায়গায় না। আপনি যদি নতুন সংবিধান করেন, এই সংবিধানের অসংখ্য ধারা হয়তো পার্ক এদিক-ওদিক করে সংশোধন করবেন। এটাই তো স্বাভাবিক। দুনিয়ার যত সংবিধান আছে, সব সংবিধানেই ভালো কথা লেখা থাকে।
আমার বক্তব্য হলো, সংবিধান উল্টে-পাল্টে পরিবর্তন করা লাগে। বিএনপি তো এর মধ্যে ৬১ বা ৬৪ বার সংবিধান পরিবর্তন করেছে। এখন আপনি এই সংবিধানের কবর রচনা করে নতুন সংবিধান তৈরি করবেন, তার জন্য মাসকে মাস সময় ব্যয় করবেন। এটা তো দুর্ভাগ্যজনক। বিএনপি বলেছে, সংবিধানে গণবিরোধী যে ধারাগুলো আছে, সেগুলো প্রত্যাখ্যান করব। ভালো যেগুলো আছে, সেগুলো গ্রহণ করব। এর মধ্যে কোনো কনফ্লিক্ট হবার কারণ নেই। সংবিধানের মধ্যে ভালো থাকলে সেটা গ্রহণ করতে আপনার আপত্তি কি?"
শহিদুল ইসলাম বাবুল আরও বলেন, "বিএনপি যদি সংসদে বেশিরভাগ মেজরিটি পায় এবং সরকার গঠন করে, সেক্ষেত্রে অন্যান্য দলগুলোর সংস্কার প্রস্তাবকে কি গুরুত্ব দেবে? ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপির তিন জোটের রূপরেখায় তেমন গুরুত্ব দেয়নি, এমন অভিযোগ আছে। সেক্ষেত্রে বিএনপি পরেই বা অন্য দলগুলোর অভিমতকে কি গুরুত্ব দেবে? গণতন্ত্র একটা প্র্যাকটিসের ব্যাপার। এটা প্র্যাকটিসের মধ্য দিয়ে পরিচালিত হয়। বিএনপি ৩১ দফা সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। এটা ৯১ সালে বলেনি, ৯৬ সালে বলেনি, ২০০১ সালেও কোনো রাজনৈতিক দল বলেনি। আমরা পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের মধ্য দিয়ে দেখে শুনে বুঝে কোথায় দুর্বলতা আছে, কী প্রয়োজন, সেগুলো অনুধাবন করে কর্মসূচি প্রণয়ন করেছি। এখন ছাত্ররা নতুন রাজনৈতিক দল করেছে, জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে। তারাও নতুন প্রস্তাব দিক। তারা বলুক, আমরা পুরনো রাজনৈতিক দল করব না। আমি আমার নির্বাচনী ইশতেহারে বলি, আমি এই প্রস্তাবগুলো করব। আমাকে যদি মানুষ বিশ্বাস করে, তাহলে নিশ্চয়ই আমাকে ভোট দেবে। যারা বলছেন, করবে না, তারা মানুষকে বলুক, এই পুরনো রাজনৈতিক দল বিএনপি কথা রাখবে না। তোমরা আমাদেরকে ভোট দাও, আমাদের উপর আস্থা রাখো, আমরা সংস্কার করে দেব।
কিন্তু মানুষকে তারা ভয় পাচ্ছে, ভোটকে ভয় পাচ্ছে। এনসিপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা ভোটকে ভয় পাচ্ছে না। নির্বাচনের কথা বললে গণতন্ত্র বিরোধী বা সংস্কার বিরোধী কেন হবে? এই কথা আমার মাথায় ঢোকে না। বরং এই কথা বলে একটা ধোঁয়াশা তৈরি করা হচ্ছে, নির্বাচনের পরিবেশকে বিঘ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, বিলম্বিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশের মধ্যে নানান ধরনের অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে, আস্থাহীনতার পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। এই পরিবেশ কোনো গণতন্ত্র বা সংস্কারের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না।"
আঁখি