ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৪ মার্চ ২০২৫, ১০ চৈত্র ১৪৩১

বিরোধীদের দূর্বল করে ক্ষমতা ধরে রাখার নীতির অভিযোগ জিএম কাদেরের

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ২৩ মার্চ ২০২৫

বিরোধীদের দূর্বল করে ক্ষমতা ধরে রাখার নীতির অভিযোগ জিএম কাদেরের

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিসরে ক্ষমতার লোভ এবং তা ধরে রাখার নীতির কারণে বিরোধী দলগুলোকে পরিকল্পিতভাবে দুর্বল করার চেষ্টা চলছে। শনিবার (২২ মার্চ) সন্ধ্যায় রংপুর জেলা পরিষদ কমিউনিটি সেন্টারে মহানগর ও জেলা জাতীয় পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘তারা এখন একটা ক্ষমতায় এসে গেছে। ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছেন। ক্ষমতার উপভোগ করতে পেরেছেন। ক্ষমতার ব্যবহার করতে পেরেছেন। অপব্যবহার করতে পেরেছেন। এবং সেই জিনিসটি থেকে আর তারা নড়তে চান না। যেমন ইতিপূর্বে আমাদের দেশে প্রায় যারা রাষ্ট্র পরিচালনায় ছিলেন, একবার ক্ষমতায় বসলে আর ক্ষমতা থেকে উঠতে চান না। ক্ষমতা থেকে নামতে চান না। এটা আগে শেখ হাসিনার হয়েছিল এবং তার জন্য তারা নানান রকম পরিবেশ সৃষ্টি করেন।’

তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা, এই আমার তরুণ বন্ধুরা এই পলিসিতে গেছেন। উনাদের মধ্যে একটা সুন্দর বন্দোবস্ত চিন্তা করেছেন, আমরা একটা দল করব ক্ষমতায় কিভাবে থাকা যায়। একটা দল করব সরকারে থেকে, সরকারের সুযোগ সুবিধা নিয়ে আমরা একটা দল করব। এই দলকে ক্ষমতায় আনতে হবে। ক্ষমতায় আনতে আমাকে প্রতিযোগিতা কমাতে হবে। বন্ধু বাড়ানোর কথা আমি বলছি না, বন্ধু তো দরকার নাই। শত্রু বানিয়ে এদেরকে বের করে দাও, প্রতিযোগিতা কম হতে হবে।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রতিযোগী কে আছে, আওয়ামী লীগ, সে তো গর্তে ঢুকে গেছে। কিছুতেই যেন সে না বেরোতে পারে, গর্তের থেকে না বেরোতে পারে। আওয়ামী লীগের সব লোক দোষ করেনি, আওয়ামী লীগের অনেক লোক এই আন্দোলনের সক্রিয় না হলেও, নিষ্ক্রিয় হলেও সক্রিয়-নিষ্ক্রিয় সমর্থন দিয়েছে। তারা দেশের কল্যাণে কাজ করতে চায়। তারা ভালো কাজ করতে চায়। অন্যান্য দলের দায়িত্ব তাদেরকে বাদ দিয়ে গর্তে ঢুকাতে হবে। তারা যেন নির্বাচন না করতে পারে। আমার একটা প্রতিযোগী অফ।’

তিনি আরোও অভিযোগ করে বলেন, ‘সেকেন্ড প্রতিযোগী কে? জাতীয় পার্টি। একে তো কোন দিক দিয়ে কোন দিকে পেঁচানো যাচ্ছে না। কিসে পেঁচাও? ওই যে প্রচারণা চালিয়েছিল এতদিন, এরশাদ সাহেবের স্বৈরাচার। এখন আমাদের চালিয়েছে দোসর। দোসর, দোসর, দোসর করে এদেরকে বাদ দাও। তো বাদ দিলে কিভাবে বাদ দিতে হবে! এরা তো মাঠে আছে। মাঠে যেন না থাকতে পারে তার ব্যবস্থা করো। মাঠে যেন না থাকতে পারে। তাইলে দুইজন প্রতিযোগী হাইড, আউট হলো।’

ক্ষমতায় থাকার অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আর কে আছে প্রতিযোগী? আর আছে বিএনপি। না, বিএনপিকে ধাক্কা দিলে এত সহজে হয়তো পড়বে না। এখন আবার অনেকদিন পরে তারা আসছে। তাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা আছে, জনগণের সমর্থন আছে। আর জামায়াত মোটামুটি তাদের বন্ধুভাবাপন্ন। তাদের পলিসি হলো, এই তিনটি দল থাকবো আমরা। বাকিগুলো যাকে রাখবো আমাদের ব্যবহার করার জন্য। এবং তারা হয়তো এর থেকে উচ্চিষ্ট ভোট কিছু হতে পারে। এটা আমার এনালাইসিস, আমি ভুল হতে পারি। দুটো দল, মেইন যেটা, আওয়ামী লীগ একটা বড় পার্টি, বাদ। জাতীয় পার্টি বড় পার্টি, বাদ। অর্ধেক লোক বাদ, হয়ে গেল। বাকি অর্ধেক লোকের মধ্যে আমার জিতার সুবিধা। আমি হয় বিএনপির সঙ্গে লাইন করব, হয় তাদের সঙ্গে পাওয়ার শেয়ার করব অথবা বিএনপি যদি না নেয়, আমি জামায়াতের সঙ্গে লাইন করে পাওয়ারের কাছাকাছি থাকবো। ক্ষমতার কাছাকাছি অথবা ক্ষমতায় থাকার জন্য এই পলিসি শুরু করা হয়েছে।’

জাতীয় পার্টিকে কোণঠাসা করার অভিযোগ করে জিএম কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে মাইনাস করার পলিসি হলো এই ধরনের পলিসির একটি অংশ বলে আমি বিশ্বাস করি। এরশাদ সাহেবকে স্বৈরাচার বলা হয়, এটা একটা স্টাইলের মত হয়ে গেছে, ফ্যাশন। এরশাদ সাহেবকে স্বৈরাচার বলা হয়, এটাকে নিয়ে আমরা কোন সময় মাথা ঘামাইনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরের থেকে অধ্যাবধি যে কয়েকটি সরকার এসছে, সরকার প্রধান এসছে, সবাই স্বৈরাচার ছিলেন কম আর বেশি। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পদ্ধতির রাষ্ট্রনায়ক আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি, কম আর বেশি। এরশাদ সাহেব, আমি মনে করি, আমার বিবেচনায়, সবচেয়ে কম স্বৈরাচারী ছিলেন। সবচেয়ে বেশি গণতন্ত্রমনা ছিলেন এই সকলের মধ্যে।’

তিনি বলেন, ‘তারপরও স্বৈরাচার, সেই স্বৈরাচারের কথা কি দেশবাসী গ্রহণ করেছে! উনি কি নির্বাচনে কোনোদিন পরাজিত হয়েছে! কারণ সত্য সত্যই। সেজন্য আমরা যখন ব্যাপকভাবে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীতা, দোসর, দোসর প্রচার করা শুরু করেছিল, আমি মনে করি, সত্য জিনিস বেরিয়ে আসবে। এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। কিন্তু যেটা হয়েছে, সেটা হলো, এই দোসর নামটা দিয়ে প্রচারণা করে, এখন এটাকে ব্যবহার করে, আমাদেরকে রাজনীতি থেকে বের করে দেওয়ার একটা বন্দোবস্ত তৈরি করা হয়েছে জেনে শুনে। সবাই জানে যে, উনারা ছিল, আন্দোলনে সহযোগিতা করেছে। তারপরও কেন আমাদেরকে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না! আমাদের মিটিং মিছিল বাধা দেওয়া হবে! আমাদের পার্টি অফিসে হামলা করা হবে! আমাদের এই যে ইফতার মাহফিলে হামলা করা হবে! আমরা যেন জনগণের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। জনগণ যেন আমাদের ভুলে যায়। আমাদের নেতারা যেন হতাশ হয়ে যায়। এটা ছিল উদ্দেশ্য, এখনো এই উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছেন তারা।’

মো. মহিউদ্দিন

×