
ছবি : সংগৃহীত
অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগের প্রশ্নে কোন ছাড় নয়। বরং ৭২, ৭৩, ৭৪ সালের আওয়ামী লীগের ক্ষমতার যেই অপব্যবহার সেটা আপনারা দেখেছেন। এখন কথা উঠছে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ বলতে একটা জিনিসের। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ কোন দুধে ধোয়া তুলসি পাতা না।
শুক্রবার (২১ মার্চ) নোফেল সোসাইটি আয়োজিত জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের স্মরণে দোয়া ও ইফতার মাহফিলে তিনি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ কোন দুধে ধোয়া তুলসি পাতা না। ওইটা হচ্ছে প্রথম বাকশাল। প্রথম মুজিববাদের প্রথম রাজনৈতিক যেই বিকাশ ঘটেছিল, এটা ঘটেছিল শেখ মুজিবের আমলে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম, খুন, ধর্ষণ করা হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে। এটা আমাদের বারবার বলে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ বলতে কোন শুদ্ধ, সহিশুদ্ধ আওয়ামী লীগ বলতে কিছু নেই।
মাহফুজ আলম বলেন, আওয়ামী লীগ মূলত একটি ফ্যাসিবাদী একটি অর্গান এবং আপনারা ইতিমধ্যে প্রমাণ পেয়েছেন আওয়ামী লীগ কোন দেশীয় শক্তি নয়। এটা মূলত এখানে বিদেশ থেকে ট্রান্সপ্লান্টেড একটা শক্তি। এখানে এই নাটাই ধরে রাখা হয়েছে দিল্লিতে, আর ঘুড়ি উড়ে বাংলাদেশে। এই ঘুড়ি আর এই বাংলাদেশে উঠতে দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, ফলে আমরা বলব যে, এই ৭২, ৭৫ এ যেইভাবে নিপীড়ন চালানো হয়েছে জনগণের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশকে দিল্লির পদাবনত করে রাখা হয়েছিল। গত ১৬ বছরে যে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে বারবার, আওয়ামী লীগ যখনই সুযোগ পাবে এই দেশের জনগণের বিরুদ্ধে যাবে। এই দেশের সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে যাবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছি। আমাদের মনে রাখতে হবে, এই বিজয় হয়েছিল একটি রাজনৈতিক এবং একটি সংঘবদ্ধ লড়াইয়ের মাধ্যমে। আমরা যদি সংঘবদ্ধ না থাকি এবং রাজনৈতিকভাবে লড়াই মোকাবেলা না করি, তাহলে আওয়ামী লীগ ফেরত আসবে। আর আওয়ামী লীগ ফেরত আসলে বাংলাদেশের তরুণ-তরুণী ছাত্রদের কারোরই স্বাধীনতা এবং ইভেন নিজের জানমালের নিরাপত্তা থাকবে না।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, আপনারা কেউ বিএনপি করতে পারেন, জামায়াত করতে পারেন, আলেম-ওলামাদের বিভিন্ন দল আছে, তা করতে পারেন, আপনারা ছাত্রদের সংগঠন করতে পারেন, যে যেই সংগঠনই করুন না কেন, অভ্যুত্থানের শক্তি হিসেবে আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে, ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকা, সংস্কারের প্রশ্ন ঐক্যবদ্ধ থাকা, বিচারের প্রশ্ন ঐক্যবদ্ধ থাকা।
তিনি বলেন, নির্বাচন হবে সঠিক সময়ে, যেটা ডক্টর ইউনুস বলেছেন। এই বছরের শেষে ডিসেম্বর মাসে একটি টাইমলাইন দেওয়া আছে। এই ডিসেম্বর টাইমলাইনের ভিতরে নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনের জন্য সবাই প্রস্তুতি নিন। ১৬ বছর পরে বাংলাদেশের নির্বাচন হবে। জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে, তারা যাকে মনোনয়ন দিতে চান, তারা যাকে নির্বাচিত করতে চান, তাদেরকে সংসদে পাঠাবেন।
মাহফুজ আলম বলেন, ফলে আমি মনে করি, নির্বাচন নিয়ে কোন দোনোমনার দরকার নেই। নির্বাচন ও সংস্কারকে মুখোমুখি করার কোন দরকার নেই। বরং নির্বাচন প্রশ্ন মোটামুটি একটি ঐক্যমত্ত্বের জায়গায় এসে পৌঁছেছে। যদি রাজনৈতিক দলগুলো দায়িত্বশীল আচরণ করে এবং রাষ্ট্রের যে অর্গান গুলো আছে তারা যদি দায়িত্বশীল আচরণ করে, সহযোগিতামূলক আচরণ করে এবং সেভোটেজ বন্ধ করে, আমরা আশা করি, সঠিক সময়ে নির্বাচন সংঘটিত হবে এবং নির্বাচন সংঘটিত হওয়ার আগেই বিচার এবং সংস্কারের কাজ দৃশ্যমান হবে।
সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের রাষ্ট্র গঠনের প্রশ্নে যতবার ডাক আসবে ছাত্রদের পক্ষ থেকে, দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে, প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক নেতৃত্বের পক্ষ থেকে, আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সংস্কার ও বিচারের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াবেন।
মো. মহিউদ্দিন