ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১

এনজিও ব্যক্তিত্বের বৃদ্ধ আমলাদের দিয়ে দেশ একদমই ভালো চলছে না: রাশেদ খান

প্রকাশিত: ০১:০৪, ২১ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ০১:১৫, ২১ মার্চ ২০২৫

এনজিও ব্যক্তিত্বের বৃদ্ধ আমলাদের দিয়ে দেশ একদমই ভালো চলছে না: রাশেদ খান

ছবি : সংগৃহীত

সম্প্রতি যমুনা টিভি আয়োজিত টকশো ‘রাজনীতি’ শীর্ষক আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।

তার কাছে প্রশ্ন ছিল, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুইয়া ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি জানিয়েছেন আপনি নিজেই, অন্যথায় প্রধান উপদেষ্টা বাসভবন যমুনা ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আপনার অভিযোগ, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ইসলামী শক্তিকে সহ্য করতে পারছেন না। আলেম-ওলামা, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের নিয়ে তিনি কটাক্ষ করেছেন। মাহফুজ আলম জাতীয় ঐক্য-সংহতি পুরোপুরি ধ্বংস করেছেন। তিনি একজন বিতর্কিত ব্যক্তি। এরকম বিতর্কিত ব্যক্তি কোনভাবেই সরকারের উপদেষ্টা পদে বহাল থাকতে পারেন না। আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি। ইসলামী শক্তিকে সহ্য করতে না পারলে ইসলামী দলগুলো সেটার প্রতিবাদ জানাবে, কিন্তু আমরা তেমনটা কিন্তু দেখছি না মানে ইসলামী দলগুলোর চেয়ে গণঅধিকার পরিষদ মনে হচ্ছে একটু বেশি এ ব্যাপারে চিন্তিত?

জবাবে রাশেদ খান বলেন, ‘না। আমার মনে হয়, আপনি দেখবেন যে, আমি কিন্তু একই কথা বলেছি যে, সে বিএনপি এর বিরুদ্ধে বলছে, গণঅধিকার পরিষদের বিরুদ্ধে বলছে, এই কথাও বলেছি। এবং ইতিমধ্যে হেফাজতে ইসলাম, জামায়াত ইসলাম কিন্তু তার বক্তব্যের বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। দেখেন, তার দায়িত্ব কি? তার দায়িত্ব ছিল যে সবার ভিতরে ঐক্য-সংহতি ধরে রাখবে।’

প্রশ্নকর্তা জানতে চান, তার একার দায়িত্ব?

জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই তার একার দায়িত্ব না, কিন্তু তিনি অন্যতম। কারণ তিনি সরকারের মুখপাত্র, তথ্য মন্ত্রণালয় সরকারের মুখপাত্র। সেখান থেকে সরকারের বয়ান, সরকার কি চায়, সেগুলো আসে। কিন্তু তিনি এর বাইরে চলে গিয়েছেন অর্থাৎ তিনি যে সরকারে রয়েছেন, সেটি আসলে তিনি বুঝতে পারতেছেন না এবং তার যে দায়িত্ব, সেটা আমার মনে হয়, তিনি আসলে বুঝতে পারতেছেন না যে, তার করণীয় কি।’

রাশেদ খান বলেন, ‘সেই জায়গায় তিনি আসলে ফেসবুকে বেশি সময় দিচ্ছেন। তো এই কারণেই আমি বলেছি যে, আসলে যেহেতু তার লেখালেখি বা তার অনেক তাত্ত্বিক জ্ঞান রয়েছে, এগুলো তিনি বিতরণ করতে চান। তো একটি তাত্ত্বিক ভান্ডার খুলে সেখানে তিনি জ্ঞান বিতরণ করুক, এই কাজ তো তার না।’

তিনি বলেন, ‘তিনি সরকারে বসে একদিকে কখনো জামায়াতের বিরুদ্ধে, কখনো বিএনপির বিরুদ্ধে, কখনো আমাদের বিরুদ্ধে, এই একের পর এক বিষেদগার করছেন। দেখেন, আমাদের শিশির সাহেব যেটি বললেন যে, আপনার এই ইউনূস সরকার নাকি আসলে বিএনপিবাদী বা বিএনপি তুষ্ট করার জন্য সবসময় ব্যস্ত রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা তো দেখছি যে, এই সরকার এনসিপির সরকার। এই সরকার এনসিপির সরকার, এটি অস্বীকার আপনি কেন করছেন। আপনাদের যে দল হয়েছে, এটি কোথায় হয়েছে, কোথায় পরিকল্পনা হয়েছে, ওই যে হেয়ার রোডে হয়েছে, এটা কি অস্বীকার করতে পারবেন, যে এই দল গঠনের সাথে মাহফুজ এবং আসিফ নিজেও জড়িত, অস্বীকার করতে পারবেন না।’

রাশেদ খান বলেন, ‘আপনি যে সরকারের আশীর্বাদপুষ্ঠ পার্টি স্বীকার করে নেন। আপনি বলেন যে, ডক্টর ইউনূসের আশীর্বাদ আছে। তিনি তো নিজেই আসলে স্বীকার করেছেন। এই যে তিনি বললেন যে, নাহিদ ইসলাম, উনি উত্তর দেননি কিন্তু। নাহিদ ইসলাম আসলে বিএনপি তুষ্ট করার জন্য সাত মাস কাজ করেছে কিনা, তিনি উত্তর দেননি। দেখেন, নাহিদ ইসলামের উপরে মানুষের যে আশা, বিশ্বাস, প্রত্যাশার জায়গাটা ছিল যে, তিনি রাষ্ট্র সংস্কার করবেন, গণহত্যার বিচার করবেন।’

তিনি বলেন, ‘আচ্ছা আমার কথা হলো যে, আপনি বলছেন যে, গণপরিষদ নির্বাচন মানে নতুন সংবিধান তৈরি করতে চান। তো আপনি যে সংবিধান মেনে শপথ নিলেন, সেই সংবিধান আপনি এখন পরিবর্তন কেন করতে চাচ্ছেন! কেন আপনি ওই সময় বলেননি যে, এই সংবিধান ভুয়া সংবিধান, এই সংবিধান ছুড়ে ফেলিয়ে দিলাম, বিপ্লব সরকার গঠন করতে হবে। মানে আপনি সাত মাস ভুল করে ফেলেছেন, এখন বলছেন যে আমার ভুল হয়ে গেছে, আমি তওবা করছি, আমাকে মাফ করে দাও। এটি কি হয়!’

তিনি আরো বলেন, ‘দেখেন, সাত মাস আগে যেটি সম্ভবপর ছিল, সাত মাস পরে সেটি সম্ভবপর নয়। আর আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের বিষয়টা বলব, দেখেন আওয়ামী লীগকে আসলে সরকার নিষিদ্ধ করছে না। কারণ আন্তর্জাতিক মহলে চাপ রয়েছে। সরকার মনে করছে যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে আমাদের লাভটা কি। আমরা কেন বিপদে পড়বো। আওয়ামী লীগ যদি পরবর্তীতে ক্ষমতায় চলে আসে তখন তো আমাদের পিঠের চামড়া থাকবে না। এই ভয়েই মূলত সরকার নিজে নিষিদ্ধ করছে না।’

রাশেদ খান বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা নিজে বলেছেন যে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিবে কি, নিবে না, সেটি আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত। এটি তিনি ভুল বলেছেন। আওয়ামী লীগ দল তো এক প্রকার মানে ভ্যানিশ হয়ে গেছে। তারা তো গণহত্যাকারী দল। গণহত্যার বিচার হওয়ার আগে আওয়ামী লীগ কিভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়। যে কারণে আমাদের পক্ষ থেকে আমরা বারবার বলছি যে, অবশ্যই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। ৭১ এর পরে একবার গণহত্যা, ২৪ এ তার মেয়ের নেতৃত্বে গণহত্যা, তৃতীয়বার আওয়ামী লীগের ব্যানারে সংঘটিত হয়ে আওয়ামী লীগ আপনার এইভাবে গণহত্যার সুযোগ পাক, সেটি আমরা চাই না।’

তিনি বলেন, ‘আরেকটি কথা, সেটি দেখেন, আজকে নাহিদ ইসলাম বলেছে যে, সমন্বয়কদের চরিত্র হনন করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র, একজন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবি করেছিল ৫০০০০ টাকা। আমার কাছে সেই ভুক্তভোগী আসলেন। তারপরে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন সমন্বয়করা যদি অন্যায় করে, তাহলে সে অন্যায় কি গণমাধ্যমে আসবে না! বিভিন্ন জায়গায় সমন্বয়কদের চাঁদাবাজি। শুধু সমন্বয়করা না, অন্যান্য দল বলেন, বিএনপি বলেন, আপনার জামায়াত বলেন, গণঅধিকার পরিষদ বলেন, সকল দলের নেতাদের বিরুদ্ধে কিন্তু বিভিন্ন চাঁদাবাজির অভিযোগ আসছে। কেন আসছে! কারণ এই রাষ্ট্রটা অরক্ষিত।’

তিনি আরো বলেন, ‘আরেকটা বিষয় আমার কাছে মনে হয়েছে যে, সরকার নিজেই চাচ্ছে যে রাজনৈতিক দলগুলো বিতর্কিত হয়ে যাক। এইজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে ফাংশন করাচ্ছে না। আজকে রাষ্ট্রের যে অবস্থা দেখেন, গ্রামগঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় কিন্তু মানুষ ব্যাপকভাবে মারামারি করছে। এক বংশের সাথে আরেক বংশের হানাহানি চলছে। সরকার চাইলে তো এগুলো বন্ধ করতে পারতো। পুলিশ কিন্তু ফাংশন করছে না। আমাদের আইন উপদেষ্টা নিজে বলেছেন যে, পুলিশের মধ্যে ৮০ শতাংশ আওয়ামী পরিবারের। তো আপনি এই পুলিশ কেন রেখেছেন!’

রাশেদ খান বলেন, ‘আমরা দাবি করেছি যে, আপনার এক লাখ ছাত্রজনতা, যারা বিপ্লবে ভূমিকা রেখেছে এরা তো প্রশিক্ষিত। এরা এই ফ্যাসিস্ট পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। এদের এক মাসের শর্ট প্রশিক্ষণ দিয়ে আপনারা পুলিশের নিয়োগ দিন। সেই কাজ তো করছেন না। আপনারা বলছেন যে সংস্কার ও গণহত্যার বিচারের আগে কোন ইলেকশন না। হাসিনা তো বাংলাদেশে ফিরবে না। হাসিনাকে আপনারা কোনভাবে ফেরাতে পারবেন না। আপনারা ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ যখন চোরগুলো সব ভারতে পালিয়ে গেছে, গণহত্যার মাস্টারমাইন্ডরা পালিয়ে গেছে, তখন ঘোষণা করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘এখন যদি হাসিনা বা ওবায়দুল কাদেররা বাংলাদেশে ফেরত না আসে বা তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে আপনি ১০ বছরেও না পারেন, ১০ বছর কি আপনি বাংলাদেশে ইলেকশন দিবেন না। আমরা মনে করি, ইলেকশন যত দেরিতে হবে, বাংলাদেশকে নিয়ে তত ষড়যন্ত্র তৈরি করা হবে। ১/১১ এর ইতিহাস কিন্তু আমরা ভুলে যাইনি। এ ধরনের সরকার সাধারণত যেটি করে, জনতুষ্ট করে। কিন্তু একটা সময় বোঝা যায় যে, এই সরকারের সবকিছুই ভুয়া।’

রাশেদ খান বলেন, ‘দেখেন আমরা এখন যেটা দেখছি যে, এই সরকার টাকা ছাপিয়ে দেশ চালাচ্ছে। মানে বিষয়টা এরকম যে, আপনি আমার কাছ থেকে ছয় মাসের জন্য এক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন, এখন এই ছয় মাস আপনি ভালোভাবে চলতে পারবেন, ছয় মাস পরে যখন আমার টাকা ফেরত দিতে হবে, তখন কি করবেন! সরকার এই মুহূর্তে টাকা চাপিয়ে দেশ চালাচ্ছে, এগুলো কি জানে। ব্যবসায়ীরা আজকে কতটা লোকসানের মধ্যে, আজকে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকগুলো চলতে পারতেছে না। প্রধান উপদেষ্টা কি এগুলো জানে!’

তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বলছেন যে, আইন-শৃঙ্খলা খুব ভালো চলছে। আমার তো মনে হয় যে, এনজিও ব্যক্তিত্বের এই বৃদ্ধ আমলাদের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হয়েছে, তাদের মাধ্যমে দেশ একদমই ভালো চলছে না। তারা যত দ্রুত ইলেকশন দেবে বিশেষ করে, রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ডিসেম্বরের মধ্যে ইলেকশন এর বাইরে যদি এই সরকার যায়, তাহলে আমি মনে করি সরকারের অবস্থা কিন্তু ফখরুদ্দীন আহমদের মতো হবে।’ 

মো. মহিউদ্দিন

আরো পড়ুন  

×