
ছবি: এস এম আল মামুন ও দিদারুল আলম।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পতনের পর সারাদেশে আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেতারা একে একে ধরাশায়ী হয়েছেন। তবে চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা সীতাকুণ্ডে এখনও গ্রেপ্তার এড়াচ্ছেন শীর্ষস্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
সরকার পতনের সাত মাস পরও এখানকার শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযানে দেশের অন্যান্য স্থানে উল্লেখযোগ্য গ্রেপ্তার হলেও সীতাকুণ্ডে তা দেখা যায়নি, যা স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সীতাকুণ্ডের নেতারা শহরে অবস্থান করলেও পুলিশ ব্যর্থতার কারণে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য জহুরুল আলম জহুর বলেন, "আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম না, তখন পুলিশ মাটির নিচের গর্ত থেকেও আমাদের বের করে আনতো। কিন্তু এখন উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। মামলা হচ্ছে, অভিযোগ আসছে, কিন্তু গ্রেপ্তার নেই। এর অর্থ—পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতাদের রক্ষা করতে ব্যস্ত।"
অপরদিকে, সীতাকুণ্ড থানার ওসি মো. মুজিবুর রহমান বলেন, "কাদের গ্রেপ্তার করব, সে বিষয়ে আমাদের তালিকা রয়েছে। অভিযুক্তদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। কেউ ব্যর্থতার অভিযোগ করলে, সেটি তাদের মতামত মাত্র।"
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষিত ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযানের পর সীতাকুণ্ডের রাজনৈতিক সচেতন মহল আশা করেছিল যে এবার অন্তত পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা গ্রেপ্তার হবেন। তবে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অভিযানেও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর ইউনিয়ন থেকে সলিমপুর পর্যন্ত ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব বিস্তৃত। এ অঞ্চলে ৯০টি ওয়ার্ডের ১২০ জন মেম্বার-কাউন্সিলর, ৯ জন চেয়ারম্যান, ১ সাবেক মেয়র, ২ জন সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান, ১ জন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, ২ জন সাবেক এমপি, শতাধিক উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতারা রয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা থাকলেও কেউ গ্রেপ্তার হননি।
শুধুমাত্র ২ মাস আগে বারবকুণ্ড ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরপর আর উল্লেখযোগ্য গ্রেপ্তার হয়নি।
স্থানীয়দের দাবি, অনেক নেতা দেশত্যাগ করেছেন বা নির্দিষ্ট জায়গায় আত্মগোপনে আছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া সরকার পতনের আগেই আমেরিকা চলে গেছেন।
সাবেক এমপি এস এম আল মামুন, যুবলীগ নেতা শাহজাহান, ছাত্রলীগ সভাপতি শিহাব উদ্দিনসহ অনেকে চট্টগ্রাম শহরে অবস্থান করছেন।
গুঞ্জন আছে, অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতা কক্সবাজারের পাঁচ তারকা ‘গ্রীন ন্যাচার রিসোর্টে’ আত্মগোপন করেছেন।
সোনাইছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনির আহমদ চট্টগ্রামের চকবাজারে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে থাকছেন এবং মাঝেমধ্যে সীতাকুণ্ডে আসছেন।
সরকার পতনের পরও সীতাকুণ্ড থানায় ও চট্টগ্রাম আদালতে অন্তত ১২টি মামলা দায়ের হয়েছে, যার অধিকাংশে আওয়ামী লীগের নেতারা অভিযুক্ত।
সাবেক এমপি দিদারুল আলম, এস এম আল মামুন, সাবেক এডিশনাল পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম, সাবেক ওসি ইফতেখারসহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।
এ মামলার আসামিদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী।
সীতাকুণ্ডের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে পুলিশের অনীহা ও গোপন সমঝোতা থাকতে পারে। অনেকের আশঙ্কা, ক্ষমতার পালাবদলের পরও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
তবে পুলিশ বলছে, অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে কবে নাগাদ উল্লেখযোগ্য গ্রেপ্তার হবে, সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি।
নুসরাত