
ছবি:সংগৃহীত
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-এর সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টক শোতে আওয়ামী লীগের শাসনামল ও রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধকরণ প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তার বক্তব্যে উঠে এসেছে রাজনৈতিক নিপীড়ন, দুর্নীতি, এবং রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধকরণের মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলো।
রতন বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিভিন্ন দলের উপর নিপীড়ন চালানো হয়েছে। তবে কোনো অপরাধকে আড়াল করা উচিত নয়, আবার কোনো অপরাধ থেকে কাউকে শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেওয়াও উচিত নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তোলার জন্য ঢালাও সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে কিছু কারণ ও পদ্ধতি রয়েছে, যা যথাযথভাবে অনুসরণ করা প্রয়োজন।
রতন প্রশ্ন তোলেন, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করবে কে? নির্বাচন কমিশন, সরকার, নাকি আদালত? সরকার যদি নিষিদ্ধ করে, তাহলে তা কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে? নির্বাচন কমিশন যদি নিষিদ্ধ করতে চায়, তাহলে তাদের প্রক্রিয়া কী হবে? এই প্রশ্নগুলো মাথায় রাখতে হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধকরণ একটি সংবেদনশীল বিষয়, এবং এটি যেন রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল না করে।
রতন আওয়ামী লীগের শাসনামলের সমালোচনা করে বলেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে দুর্নীতি, টাকা পাচার, বিরোধী দলের উপর দমন-পীড়ন এবং নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার অভিযোগ উঠেছে। জনগণ সরাসরি এই কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেছে। তবে এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট মামলা হওয়া উচিত। কিছু মামলা হয়েছে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে মনে হয় এসব মামলা যথাযথভাবে করা হয়নি। ফলে, এসব ক্ষেত্রে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
রতন বলেন, আওয়ামী লীগ নিপীড়নের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে চেয়েছে, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। তিনি মুসলিম লীগের উদাহরণ দেন, যারা পাকিস্তান আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল, কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজ তারা প্রায় অকার্যকর। রাজনৈতিক দল কীভাবে জনসমর্থন হারায় এবং অকার্যকর হয়ে যায়, তা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। রাজনৈতিকভাবে একটি দলকে প্রাসঙ্গিক বা অপ্রাসঙ্গিক করার চেয়ে প্রশাসনিকভাবে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বিপজ্জনক হতে পারে। এটি একটি দুর্বল প্রজন্ম তৈরি করতে পারে, যেখানে ক্ষমতায় থাকা দল প্রতিপক্ষকে আইনগতভাবে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করবে।
রতন জোর দিয়ে বলেন, অপরাধের জন্য সুনির্দিষ্ট মামলা ও বিচার হওয়া প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, নিউ মার্কেটে একজন হকারের মৃত্যু খুবই দুঃখজনক এবং এর বিচার হওয়া উচিত। তবে আইনমন্ত্রীকে এই ঘটনার জন্য আসামি করা কতটা যুক্তিসঙ্গত? আইনমন্ত্রী হিসেবে তিনি আইনের রক্ষক হওয়ার বদলে আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে দেশকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু তা সঠিক প্রক্রিয়ায় হওয়া প্রয়োজন।
আঁখি