ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১

ঐক্যমত্য কমিশনের যাত্রা শুরুতে অনৈক্য সৃষ্টি করা হয়েছে: রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া

প্রকাশিত: ২৩:৩২, ১৮ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ২৩:৩৪, ১৮ মার্চ ২০২৫

ঐক্যমত্য কমিশনের যাত্রা শুরুতে অনৈক্য সৃষ্টি করা হয়েছে: রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া সম্প্রতি এক টেলিভিশন টকশোতে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠার যে প্রচেষ্টা চলছে, ঐক্যমতের কমিশন এবং তাদের কার্যকলাপের বিভিন্ন আসঙ্গতি নিয়ে কথা বলেন।

জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, "মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রেস উইং থেকে বলা হয়েছে যে কিছু সংস্কার আছে যেগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের প্রয়োজন নেই। ১৬৬টি ইস্যু, যা দাঁড় করানো হয়েছে তার বাইরে রাজনৈতিক দলগুলোকে বলা হচ্ছে যে প্রয়োজন নেই আলোচনার, সেই সংস্কারগুলো তারা করতে চায়। তার মানে কি, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সাথে পুরোপুরি আস্থায় আনা হচ্ছে না?"

উপস্থাপকের এমন প্রশ্নে রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া আরও বলেন,"ঐক্যমতের কমিশন যেই যাত্রা শুরু করছে ১৬৬টি প্রশ্ন দিয়ে ৩৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে, সেখানে একটু অনৈক্যের সৃষ্টি করা হয়েছে আমি মনে করি। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে ৫০-এর উপর এই মুহূর্তে। সেই জায়গায় আপনি ৩৪টিকে নির্ধারণ করার মধ্য দিয়ে অনৈক্যের একটা ধারা সৃষ্টি করলেন। কাজেই ঐক্যমত যে জিনিসটা বুঝায় এবং জাতীয় ঐক্যমত মানে আপনি একটা অংশকে বাদ দিয়ে করবেন, এটা হওয়ার কোন সুযোগ নেই। জাতীয় ঐক্যমত করলে আপনি সর্ব মতামতকেই একটা সুযোগ দিতে হবে।"

রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন,"সেই ক্ষেত্রে যারা হত্যা, খুন, দুর্নীতির সাথে জড়িত আছে তাদের বিচারের জন্য একটা সেক্টর থাকতে পারে, সেটা ভিন্ন ব্যাখ্যা।জাতিসংঘের মহাসচিব আমরা সদস্য রাষ্ট্রের হিসেবে আমাদের এখন দেশের যে পরিস্থিতি, আমি মনে করি যে আমাদের সাথে রাজনীতিবিদদের সাথে এবং সুশীল সমাজের সাথে বসাটা এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু অতীতে যদি আমরা জাতিসংঘের কার্যকলাপ দেখি, আমাদের নির্বাচন নিয়ে বা আমাদের দেশের অন্য সমস্যা নিয়ে অতীতেও কিন্তু জাতিসংঘের প্রতিনিধি এখানে এসেছিল। খুব বেশি একটা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে বলে আমরা মনে করি না। কিন্তু এখন যেহেতু মহাসচিব নিজে এসেছেন, এটি একটু কার্যকর হবে, এটা সময় বলে দেবে। কিন্তু আমাদের দেশের সমস্যা আমাদেরকেই সমাধান করতে হবে এবং আমাদের যারা এই জায়গার স্টেকহোল্ডার, রাজনীতি করে সুশীল সমাজ, সাংবাদিক তাদেরকেই এই সমস্যার সমাধানের জন্য যেতে হবে।"

 

রেজাউল ইসলাম আরো বলেন,"মহাসচিবের বৈঠক হলো, রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আম পরিদর্শনের ক্ষেত্রে সেখানে এক লাখ লোকের ইফতার দেখলাম আমরা। সেখানে একটি বড় আয়োজন ছিল। সব মিলিয়ে আসলে রাজনীতিকে প্রবাহিত করার কোন প্রচেষ্টা আছে কিনা? আমি মনে করি যে রাজনীতিরে খুব বেশি একটা প্রভাবিত করার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু এই মুহূর্তে উনার এই সফর এবং আপনি এক লাখ লোক বলেন আর বেশি লোক বলেন, এই ইফতারটা এটা একটা পজিটিভ সাইড বলে আমি মনে করি।"

 

"এখন কমিশন নিয়ে যে আলোচনা হওয়া দরকার, এখন প্রশ্ন এমসিকিউ প্রশ্নের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইয়ে দিবে, এই প্রক্রিয়াটার সাথে আমি দ্বিমত পোষণ করি। বরং রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বসে, যদি কমিশনের সমস্ত কমিশনগুলো কি কি প্রস্তাবনা আনছে, সেগুলো আলোচনা করতো, তারপর একটা জায়গায় যাওয়া যেত। সেই জায়গাটার মধ্যে একটা পজিটিভ আসতো। এখন যে আসবে না, আমি এটা মনে করি না। কিন্তু এই প্রক্রিয়াটা টিক চিহ্নের যে প্রক্রিয়া, এই প্রক্রিয়াটা খুব বেশি একটা মানে কার্যকর প্রক্রিয়া হবে কিনা, আমি জানি না।"

 

তিনি জানান,"এই মুহূর্তে সমস্যাটা হলো সংস্কার এবং নির্বাচন এক পক্ষ বলছে যে এবং বিচার ছাড়া নির্বাচন আমরা চাচ্ছি না। অর্থহীন হবে এখন এই অবস্থানে যদি বহাল থাকে আর অধিকাংশ রাজনৈতিক দল কিন্তু চাচ্ছে যে সংস্কার যতটুকু প্রয়োজনীয়, অতটুকু সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যে অথবা জানুয়ারির মধ্যে একটা নির্বাচন করা। এই জায়গার মধ্যে কিন্তু ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না।"

 

রেজাউল ইসলাম  বলেন," যে নতুন দল হলো নাগরিক পার্টি ,আহবায়ক নাহিদ যে বক্তব্য দিলেন যে, সংস্কার এবং বিচার করার পরে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। নির্বাচনের ব্যবস্থা কি কোন দল করে বাংলাদেশে? উনারা কিভাবে করবে? উনারা কোন জায়গায় আছে? এসব বক্তব্য যদি আসে তাহলে ঐক্যমতের ক্ষেত্রে বিচারের ক্ষেত্রে সব ক্ষেত্রে কিন্তু একটু দূরত্ব সৃষ্টি হয়। কোন রাজনৈতিক দল কি বিচার চায় না? এরকম তো আমি দেখি নাই। সংস্কারও চাই, বিচারও চাই পাশাপাশি নির্বাচনও চাই।"

 

আরো বলেন,"এখন আপনি শুধু বিচার কার্যক্রমটা সম্পন্ন করার পরে নির্বাচন চাচ্ছেন, বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হলে আপনাকে তো অনেকগুলো ধাপে যেতে হবে। ফৌজদারী কার্যবিধির কিছু নিয়ম আছে। একটা মার্ডার কেসে যদি আপনি নূন্যতম ভাবে বিচার করতে চান তাহলে এটা এফআইআর হওয়ার পরে তদন্তে যাবে, চার্জ গঠন হবে, চার্জ গঠন পরে সাক্ষী হবে, সাফাই সাক্ষী হবে, এরকম অনেকগুলো ধাপ আছে। মামলাগুলো যদি পর্যালোচনা করেন তাহলে দেখবেন, এটা একটা মামলার মধ্যে ১৫০, ২০০ এরকম আসামি। এখন তদন্ত কিন্তু খাতা কলমে লিখলে হবে না। প্রত্যেকটা আসামি জড়িত কি জড়িত না, ফৌজদারী কার্যবিধি অনুসারে আপনার তদন্তে যেতে হবে। আপনি এই প্রক্রিয়ায় তদন্ত গিয়ে কতদিন পরে এই বিচারের কাছে যাবেন।"

"আরেকটা প্রক্রিয়া হতে পারে যে ১৬৪ কাউরে দিয়ে নিল নিয়ে আসে না, এইটার ভিত্তিতে একটা বিচার করলো, কিন্তু এই জিনিসটা তো বিচারের ক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন তৈরি করবে। তারপরেও কিছু মামলা দুই একটা মামলাকে টার্গেট করে যদি এগিয়ে নেয়া যায় তাহলে একটা মামলার প্রক্রিয়া, বিচারের প্রক্রিয়া চলতে থাকলো, সংস্কারের প্রক্রিয়া চলতে থাকলো। যতটুকু সংস্কার হয়ে হলো, তারপরে নির্বাচিত যে সরকার আসবে, সেই সংস্কার এসে বিচারও করবে, সংস্কারও করবে, এর একটা কমিটমেন্টে সবার আসা দরকার। এর একটা চার্টার সব দলের মধ্যে আসা দরকার, যে আমরা এই বিচারগুলো, এই সংস্কারগুলো, যেই দলই নির্বাচনে আসি আমরা করব।"

"কিন্তু নির্বাচনকে আপনি একটা অনিশ্চিত সময়ের জন্য, একটা মানে নির্ধারিত কোন ডেট, তারিখ নাই। আপনি বলছেন যে বিচার হওয়ার পর, পরে নির্বাচন, সংস্কার হওয়ার পরে নির্বাচন, তাহলে এটা কতদিন থাকবেন? আপনি সরকারের যে ছয় মাসের বেশি সময় অতিক্রম হলো, সংস্কার, বিচারের কথা বলছিলেন, বা এটি হওয়ার পরে নির্বাচন, ছয় মাসে আসলে কতটা সংস্কার, কতটা বিচার, বিচারের ক্ষেত্রে কতটা অগ্রগতি, সেটি আসলে জনমনে কোন সংখ্যা উদ্বেগ তৈরি করবে কিনা।"

 

সূত্র:https://tinyurl.com/5fv46t9r

আফরোজা

×