ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

৪৫% তরুণ ভোটার, বিএনপির বার্তা যুক্তি ও তর্ক দিয়ে উপস্থাপন করতে হবে : তারেক রহমান

প্রকাশিত: ২১:৫৬, ১৭ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ২২:৫৫, ১৭ মার্চ ২০২৫

৪৫% তরুণ ভোটার, বিএনপির বার্তা যুক্তি ও তর্ক দিয়ে উপস্থাপন করতে হবে : তারেক রহমান

ছবি : সংগৃহীত

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অভিযোগ করেছেন যে, দেশের অধিকাংশ জনগণ বিএনপির প্রতি সমর্থন জানাতে শুরু করায় দলটির বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে মিডিয়া ট্রায়াল পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্র ও বিএনপির বিরুদ্ধে একটি গভীর ষড়যন্ত্র ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে, যা মোকাবিলায় দলের অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের ভূমিকা এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

সোমবার (১৭ মার্চ) বিএনপির অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এই বক্তব্য দেন। তিনি অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের সাহসিকতার প্রশংসা করে বলেন, “যে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আপনারা আজ এখানে এসেছেন, সেই পরিস্থিতি সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আপনারা যে যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন, যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।”

তারেক রহমান বলেন, “যে ষড়যন্ত্র দেশের জনগণের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে, বিএনপির বিরুদ্ধে শুরু হয়েছিল, তা এখন আরও গভীরভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের অস্তিত্ব, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে।”

তিনি বলেন, “আপনারা যারা অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আছেন, নিশ্চয়ই এই ষড়যন্ত্রের বিষয়টি অনুধাবন করতে পারছেন। আপনাদের ভূমিকা এখন আগের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জনগণ এখন বিএনপির পক্ষে সমর্থন প্রকাশ করছে। আগামীতে যদি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে দেশের অধিকাংশ ভোটার বিএনপিকে সমর্থন করবেন – এই বাস্তবতা যতই স্পষ্ট হচ্ছে, ততই বিএনপিকে মিডিয়া ট্রায়ালের মুখে পড়তে হচ্ছে।”

তারেক রহমান উদাহরণ দিয়ে বলেন, “আজ সকালে দেশের কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনে প্রকৃত ঘটনা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ঘটনা ঘটেছে এক রকম, কিন্তু পত্রিকার পাতায় তা উপস্থাপন করা হয়েছে অন্যভাবে। এটি ষড়যন্ত্রেরই অংশ। ঠিক ১/১১-র সময় যেভাবে বিএনপিকে মিডিয়া ট্রায়ালের মুখে ফেলা হয়েছিল, এখন আবার সেই একই পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা চলছে।”

তারেক রহমান নতুন ভোটারদের গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “বর্তমানে দেশের মোট ভোটারের প্রায় ৪৫% নতুন ভোটার। তারা কখনোই ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি। কিন্তু তারা যুক্তি ও তর্ক বোঝে। বিএনপির উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এবং সাফল্য সম্পর্কে যুক্তি ও তথ্য দিয়ে তাদের বোঝাতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বিএনপি জনগণের কল্যাণে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে। স্বাস্থ্য খাত, কৃষি, খাদ্য উৎপাদন, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, বিদেশি শ্রমবাজার, স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণসহ প্রতিটি খাতে বিএনপির অবদান সুস্পষ্ট। যুক্তি ও তথ্য দিয়ে এটি নতুন ভোটারদের বোঝাতে হবে।”

তারেক রহমান বলেন, “আমরা ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছি, যেখানে বিএনপি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, কিভাবে দেশকে মেরামত করা হবে। এই মুহূর্তে বিএনপিই একমাত্র রাজনৈতিক দল, যারা দেশের ভবিষ্যতের জন্য সুস্পষ্ট রূপরেখা দিয়েছে। জনগণ এখন তা অনুধাবন করতে শুরু করেছে।”

তারেক রহমান বলেন, “বিএনপি সব সময় গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা বলেছি, একজন ব্যক্তি পরপর দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনর্বহাল চাই। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বিএনপি লড়াই করছে।”

তিনি আরও বলেন, “২০০১ সালে বিএনপির হাতে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। কিন্তু আমরা তখনও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করিনি। কারণ আমাদের উদ্দেশ্য ছিল সঠিক ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের মতামত প্রতিফলিত করা।”

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্পর্কে তারেক রহমান বলেন, “আমাদের সরকার দুর্নীতি দমন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে স্বৈরাচারী সরকার দুদককে সরকারের অনুমতির ভিত্তিতে কাজ করার বিধান চালু করে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে। বিএনপির ইচ্ছা ছিল – দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করুক এবং দেশের দুর্নীতি দূর হোক। এটি আমাদের আন্তরিক ইচ্ছা ছিল।”

তারেক রহমান বলেন, “বিএনপি ইতিমধ্যে রাষ্ট্র মেরামতের পরিকল্পনা দিয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন-শৃঙ্খলা, প্রশাসন, শিল্প, কৃষি, বাণিজ্য – প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা কীভাবে দেশকে এগিয়ে নেব, তার একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা দিয়েছি।”

তিনি বলেন, “স্বৈরাচারের পতন অবশ্যম্ভাবী। বিএনপিই একমাত্র দল, যারা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে পারবে। এজন্য অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে এবং জনগণের সামনে বিএনপির উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনা তুলে ধরতে হবে।”

তারেক রহমান বলেন, “এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের ইচ্ছা, আমাদের পরিকল্পনা সঠিক। বিএনপি সব সময় জনগণের পাশে ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এই কঠিন সময়ে দলের অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকলে ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হবে না।”

তিনি বলেন, “জনগণ এখন বিএনপির পক্ষে। আগামী নির্বাচনেই জনগণ বিএনপিকে জয়ী করবে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশে গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।”

তিনি শেষ বক্তব্যে বলেন, “বিএনপি জনগণের দল। জনগণের ইচ্ছাই বিএনপির শক্তি। ঐক্যবদ্ধ থেকে জনগণের সমর্থনে বিএনপি আবারও ক্ষমতায় ফিরবে।”

 

মো. মহিউদ্দিন

×