
বরগুনায় আলোচিত মন্টু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বিএনপি ও তারেক রহমানকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “তারেক রহমান সাহেব, আমি একটি ভিডিও দেখেছি, যেখানে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এবং তার দলকেও দায়িত্ব দিয়েছেন। এটি একটি বিশাল কাজ। এই দায়িত্ব নেওয়ার মাধ্যমে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, আমরা এই পরিবারের সাথে প্রতি মাসে থাকবো, বিশেষ করে ছোট শিশুটি এবং নবজাতক ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত।”
আজ, সোমবার (১৭ মার্চ), সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনায় আলোচিত মন্টু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন জামায়াত আমির। এ সময় তিনি ভুক্তভোগী পরিবারের শিশুদের লেখাপড়া ও চিকিৎসা খরচসহ পরিবারের ব্যয়ভার জামায়াতে ইসলামী বহন করবে বলে ঘোষণা দেন।
পরে, বরগুনার টাউন হল মাঠে এক পথসভায় জামায়াতের আমির বলেন, “মেয়েটা আমার হলে আমার অনুভূতি কী হতো? আপনার মেয়ে হলে আপনার অনুভূতি কী হতো? পশুরা তো ও সমস্ত জ্ঞান রাখে না। এদেরকে আল্লাহর কোরআনের ভাষায় বলা হয়েছে বালহুমাদালু, এরা পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট। আসলে সেই আচরণই তারা করেছে। মেয়েটার উপর জুলুম করল, বাবাকেও খুন করল, একটা পরিবারকে একদম ধ্বংস করে দিল।”
তিনি আরও বলেন, “তারেক রহমান সাহেব, আমি দেখেছি একটা ভিডিও। তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন, তার দলকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এটা একটা বিশাল কাজ। এই যে কাজের দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন, আমি তাকে স্কুলের ছোট্ট শিশুটিকে, নবজাতককে, তার বয়স ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই পরিবারের সাথে প্রতি মাসে আছি।”
“এদের পড়ালেখার খরচ, এদের জীবনের ব্যয়নির্বাহ, একটা সাধারণ পরিবারের যেটা, সেটার জন্য আমরা পাশে থাকব। মামলার বিষয়ে আমরা অভিনন্দন জানাই। আমি বিশ্বাস করি আমার মতো আপনারাও ভালো নেই। আমি ঢাকা থেকে কয়েকদিন আগে এসেছি। এখানে অত্যন্ত অবুঝ একটি শিশুর সাথে পশুরা যে আচরণ করেছে, অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। তার বাবা এটার প্রতিকার চেয়ে একটা মামলা করেছে। এই মেয়েটার জীবনের সর্বনাশের প্রতিকার চেয়ে কিন্তু মামলা কেন করলো, ঝাল মিটানোর জন্য বাবাকেই খুন করে ফেলেছে। আমরা এর নিন্দা জানাই। আমরা এটাকে ঘৃণা করি এবং এর জন্য আমরা দুঃখ এবং সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যাকে খুন করা হয়েছে তার স্ত্রীর কাছে, উনি কি করতেন? বললেন যে উনি মুরগির দোকানের কর্মচারী। একটা মুরগির দোকানের কর্মচারী, তিনি কতটুকুই বা আয় রোজগার করতেন, এটা আপনারা বুঝতে পারছেন। তারপরেও তাদের সুখের সংসার ছিল। আয় যাই হোক কিন্তু সেই সংসারটাকে একদম শেষ করে দিল, তছনচ করে দিল।”
জামায়াত আমির বলেন,“আমরা মানবিক দায়িত্বের জায়গা থেকে এখানে এসেছি। আমরা তাদেরকে সম্মান দেখাতে এসেছি। এজন্য আমরা খুবই দুঃখিত। ঘরের ভিতরে আমরা আপনাদের অনেককে ঢুকতে দিতে পারিনি। আপনারা লক্ষ্য করেছেন আমার কিছু কনিষ্ঠ সহকর্মী ঢুকেছিলেন, একটা পর্যায়ে আমরা তাদেরকে অনুরোধ করে বাইরে দিয়ে দিয়েছি। কারণ আমাদের কাছে মা-বোনদের ইজ্জতের মূল্য অত্যন্ত বেশি। আমি চাইনি যে ওই মেয়েটা, যে মেয়েটা মজলুম, তার মুখকে দেখাতে। মেয়েটা আমার হলে আমার অনুভূতি কী হতো? আপনার মেয়ে হলে আপনার অনুভূতি কী হতো? পশুরা তো সমস্ত জ্ঞান রাখে না। এদেরকে আল্লাহর কোরআনের ভাষায় বলা হয়েছে বালহুমাদালু, এরা পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট। আসলে সেই আচরণই তারা করেছে মেয়েটার উপর। জুলুম করল, বাবাকেও খুন করল, একটা পরিবারকে একদম ধ্বংস করে দিল।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা তাদেরকে আশ্বস্ত করেছি যে আমরা তাদের পাশে থাকব, আমি খুঁটে-খুঁটে জিজ্ঞেস করেছি এ পর্যন্ত কে কে তাদেরকে সহানুভূতি দেখাতে এসেছেন। তারা সবগুলো খুলে বলেছেন, যারাই সহানুভূতি এবং দেখিয়েছেন, সাহায্য করেছেন, আমি তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই, অভিনন্দন জানাই এবং কৃতজ্ঞতা আদায় করি। সামাজিকভাবে এইভাবে যদি সবাই আমরা মজলুমের পাশে ছুটে আসি, তাহলে আলহামদুলিল্লাহ আমরা আশা করি যে মজলুমরা শক্তি পাবে এবং জালিমরা ভয় পাবে।
জালিমদেরকে ভয় দেখাতে হবে, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আর মজলুমের পাশে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হবে এই অনুভূতি নিয়ে যে সেই মজলুম ব্যক্তিটি আমিও হতে পারতাম। তখন আমার সমাজের কাছে আমি কী আশা করতাম। আমাদের কাছে দল, ধর্মের কোন ব্যবধান নাই। আমাদের কাছে মানবতা। মানবতা যেখানেই বিপন্ন হবে, আমরা চেষ্টা করি সেখানেই গিয়ে হাজিরা দেওয়ার জন্য। মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে আমরা তাদেরকে আশ্বস্ত করে এসেছি, আমরা প্রতি মাসে এই পরিবারের সাথে থাকব।”
“তারা এই বাচ্চারা তাদের বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় যেভাবে চলেছে, এখন যেন তার চাইতে কমপক্ষে একটু ভালো চলতে পারে সেদিকে আমরা যাব। আমরা এও বলেছি, কোলের ছোট্ট শিশুটি নবজাতক, তার বয়স ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই পরিবারের সাথে প্রতি মাসে আছি ইনশাল্লাহ।”
“এদের পড়ালেখার খরচ, এদের জীবনের ব্যয়নির্বাহ, একটা সাধারণ পরিবারের যেটা, সেটার জন্য আমরা পাশে থাকি। মামলার বিষয়ে আমরা অভিনন্দন জানাই তারেক রহমান সাহেব। আমি দেখেছি একটা ভিডিও, তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন, তার দলকে দায়িত্ব দিয়েছেন, এটা একটা বিশাল কাজ। এই যে কাজের দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন, আমি তাকে ধন্যবাদ। এর পাশাপাশি আমাদেরও যারা সংগঠনের আইনজীবী যারা আছেন, তারা পাশে থাকবেন, একসাথে লড়াই করব ইনশাল্লাহ। এদের শাস্তি যাতে নিশ্চিত হয়, এরা কোনভাবে বেরিয়ে যেতে না পারে, আমরা সেই দাবি জানাবো প্রশাসনের কাছে, বিচার বিভাগের কাছে।”
তিনি আরও বলেন, “সম্মানিত ভাইয়েরা, কষ্ট করে আপনারা এসেছেন আমাদেরকে কাভার করার জন্য, আমরা আশিয়ারের ক্ষেত্রে বলেছি ৯০ দিনের ভিতরে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এখানে দুটি মামলা, একটা নির্যাতনের মামলা- একটা খুনের মামলা। এই ক্ষেত্রেও আমরা সরকার এবং বিচার বিভাগের কাছে আহ্বান জানাবো, এই মামলাটাও যেন দ্রুত বিচার আদালতে নিয়ে সম্পন্ন করা হয় এবং যেভাবে ওই মামলার ক্ষেত্রে ৯০ দিনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, এই মামলাটাও যেন ৯০ দিনের ভিতরেই নিষ্পত্তি হয়। আর যেন পারপিটেটর যারা, অপরাধী যারা তাদের শাস্তি যেন নিশ্চিত হয়। আমাদের বার্তা খুবই পরিষ্কার, আমরা জালিমের বিরুদ্ধে এবং মজলুমের পক্ষে এই যাত্রায় অভিযাত্রায় আপনাদেরকে আমরা পাশে পেয়ে আনন্দিত।”
আফরোজা