
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান
একজন নেতার নেতৃত্ব শুধু তাঁর শক্তিতে নয়, বরং তাঁর ন্যায়বোধ আর মানসিকতায়। নেতা হয়ে ওঠেন তাঁর প্রজ্ঞায়, তাঁর আদর্শের মহিমায়। নেতা তো তিনিই যাকে অনেক অনেক দূর থেকেও ছোঁয়া যায়, অনুভব করা যায়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের চিন্তা ভাবনার গণ্ডি পেরিয়ে এমন এক মোহনীয় অধ্যায়ে প্রবেশ করেছেন যা তাঁকে রূপ দিয়েছে অপ্রতিরোধ্য এক নেতায়।
নেতা তো তাঁকেই বলা যায় যিনি তাঁর কর্মীদেরকে বিপদে আগলে রাখেন, মানুষের বিপদে আগ বাড়িয়ে প্রবেশ করেন, মুখ ফুটে বলে ফেলেন, এ কষ্ট শুধু তোমার একার নয়। এ ব্যাথায় ব্যথিত আমিও কিংবা আমরা সবাই। অতি সম্প্রতি তিনটি ঘটনা আমাদের হৃদয়ে দাগ লাগিয়েছে, আমাদের মনে শত দুঃখের মাঝেও কিছুটা আশার আলো জাগিয়েছে।
এইতো কদিন হলো, মাগুরায় ছোট্ট শিশু আছিয়া ধর্ষণের শিকার হলেন। পাশবিক নির্যাতনের যন্ত্রণা সইতে না পেরে আছিয়া আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন পরপারে। শত প্রচেষ্টাও আমাদের আছিয়াকে আমাদের মাঝে আর থাকতে দেয়নি৷ আছিয়াকে হারানোর ক্ষতি অপূরণীয়। এই ক্ষতিকে কোনো কিছু দিয়েই প্রতিস্থাপিত করা যাবে না। কিন্তু এই ক্ষতির মাঝে একটি দিক আমাদের আলোকপাত করতেই হয়। আছিয়ার ঘটনার প্রথম দিন থেকেই সোচ্চার ছিলেন বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন ছিলেন সর্বাগ্রে!
হাসপাতালে বিএনপির একটি দল পৌঁছে যায় চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে। কিন্তু সেই খবরটা কেউ কল্পনায়ও আনতে পারেনি, সেটা হলো স্বয়ং আছিয়ার মায়ের সাথে তারেক রহমানের কথোপকথন। আমরা যা ভাবি না, তাই করেন তিনি। আমরা যা ভেবে ফেলি তার চেয়েও বেশি করে ফেলেন তিনি, তিনিই নেতা, তিনিই তারেক রহমান। বিএনপির পক্ষ থেকে চিকিৎসার দায়িত্ব তো নেওয়া হয়ই, আছিয়ার পক্ষে আইনি লড়াই করার জন্য গঠন করা হয় বিশেষ আইনজীবী প্যানেল। শত চেষ্টা করেও আমরা রুখতে পারিনি আছিয়ার অন্তিম যাত্রা। তবে আছিয়ার লাশ বাড়িতে পৌঁছানো থেকে শুরু করে দাফন পর্যন্ত সকল কাজেই নিরলস দায়িত্ব পালন করেছেন তারেক রহমানের সৈনিকেরা। নেতা যাদের এতটা সোচ্চার, কর্মীরা কী আর বসে থাকতে পারে! নেতার দেখানো পথেই কর্মীরা দৌড়ে যায় পাহাড়ের চূড়ায় কিংবা সাগরের কিনারে!
দুই অবুঝ শিশু, জন্মের পর থেকেই দুঃখ আর অনিশ্চয়তার সঙ্গী তারা। পিতা পৃথিবী ছেড়ে গেছেন জন্মের আগেই, জন্মের দিনই মা ফেলে চলে গেছেন অন্যত্র। পাবনা জেলার আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা ইউনিয়নের সঞ্জয়পুর গ্রামে এভাবেই মানবেতর জীবনযাপন করছিল দুই ভাই। দয়ার দান আর কষ্টের রুটিই ছিল তাদের একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু এই করুণ বাস্তবতা যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, তখন শুধু সহানুভূতি নয়—দায়িত্ব নিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ভিডিওটি দেখার পরই তিনি দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন, দ্রুত গিয়ে শিশু দুটির খোঁজ নিতে এবং তাদের সার্বিক দায়িত্ব গ্রহণ করতে। এরপর গত শনিবার ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর পক্ষ থেকে তার অনুদান তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়, পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে মাসিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়।
এটাই প্রকৃত নেতৃত্ব, যেখানে ক্ষমতা নয়, হৃদয় বড় হয়। যেখানে শাসন নয়, সেবাই মুখ্য হয়ে ওঠে। তারেক রহমান শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা নন, তিনি অসহায়দের আশ্রয়, অবহেলিতদের শক্তি হয়ে দাঁড়াতে চান। পাবনার এই দুই শিশু আজ জানে, তাঁরা একা নয়—কেউ একজন দূর থেকেও তাঁদের জন্য ভাবেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ান। এই ভালোবাসা, এই দায়িত্ববোধই প্রমাণ করে, তারেক রহমান মানুষের হৃদয়ে কেন এত গভীরভাবে স্থান করে নিয়েছেন।
পরের ঘটনাটাও হৃদয় স্পর্শ করে যায়। বাবার সমাধির পাশে দাঁড়িয়ে আছে এক অসহায় ধর্ষিতা কন্যা। মেয়ের ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বাবা। এমন এক ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, সেই ছবি সবার হৃদয় ছুঁয়েছে, আর এক হাত দুই করে সেই ছবিটা পৌঁছে গেছে এই জনপদের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা তারেক রহমানের কাছেও। এরপরের ঘটনাটা আপনারা সবাই জানেন। কী ঘটেছে সেখানে, তা দেখেছে পুরো বাংলাদেশ। রবিবার বিকেলে বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা এবং ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমানকে তারেক রহমান পাঠান সেই বাড়িতে। ঠিক আছিয়ার মায়ের মতোই ওই মেয়ের মায়ের সাথেও কথা বলেন। "বোন" বলে যেভাবে তিনি সম্বোধন করেছেন তাতে হৃদয় ছুঁয়ে গেছে উপস্থিত সবারই এমনকি পুরো দেশের। ওই দুই নেতার নেতৃত্বে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ওই বাড়িতে এসে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষে বিশেষ অনুদানের সামগ্রী তুলে দেন। এ বিশেষ অনুদানে চাল, ডাল, তেল, আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং নিহতের পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড় উপহার হিসেবে দেওয়া হয়।
নিহতের স্ত্রীকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে যেটি হয়েছে তা বাংলাদেশের সব মানুষ জেনেছে ও শুনেছে। আপনাদের পরিবারের পাশে আমাদের দল (বিএনপি) থাকবে। যতটুকু সম্ভব আপনারা যাতে ন্যায়বিচার পান আমরা তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের যদি আরও কোনও সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, তাহলে ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমানকে জানাবেন, আমরা যতটুকু পারি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। আপনি ঘাবড়াবেন না, দেশের মানুষ আপনার পাশে আছে, বিএনপি আপনার পাশে আছে।’
নেতৃত্ব মানে শুধু স্লোগান দেওয়া নয়, দায়িত্ব নেওয়া। নেতা মানে শুধু ভাষণ নয়, নির্যাতিতের কাঁধে হাত রাখা। আজকের সংকটময় সময়ে যখন চারিদিকে হাহাকার, তখন এক জনতার নেতা চুপচাপ, নিরলসভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। মাগুরার আছিয়ার আর্তনাদ হোক, পাবনার দুই অসহায় শিশুর বঞ্চনা, কিংবা বরগুনায় ধর্ষণের শিকার কিশোরীর বাবার রক্তে ভিজে যাওয়া মাটি—সবখানেই তারেক রহমান ছুঁয়ে যাচ্ছেন মানুষের হৃদয়। দূর থেকেও তিনি যে কতটা কাছে, তা অনুভব করছেন নিপীড়িতেরা। বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে যে প্যারাডাইম শিফট তারেক রহমান এনেছেন তা এ জাতিকে গভীর থেকে গভীরতর আশা দেখায়, অগ্রগতির মহিসোপানে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখায়।
নুসরাত