
ছবি:সংগৃহীত
নুরুল হক নুর, গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি)-এর সভাপতি, সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টক শোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো, বিচারব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ গত ৫০ বছরেও একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি, কারণ একটি রাষ্ট্র টিকে থাকে তার প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তির উপর।
তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ টেনে বলেন, সেখানে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছেলের বিরুদ্ধেও মামলা করা যায়, তাকে আদালতে তোলা যায় এবং বিচার করা যায়। এটি সম্ভব হয় আইনের শাসনের কারণে, যেখানে বিচারব্যবস্থায় হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। বাংলাদেশেও এমন শক্তিশালী ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে হবে। এমপি, মন্ত্রী বা যেকোনো রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে যেন কারও ইশারার উপর নির্ভর করতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। গত ১৬ বছরে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভরশীল। তিনি বলেন, গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের জনগণ সত্যিকার অর্থে ভোট দিতে পারেনি। একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন, যেখানে রাষ্ট্র নাগরিকদের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে এবং তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করবে।
নুরুল হক নুর বলেন, একটি ভালো ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যেতে হবে এবং মানুষের মতামতের ভিত্তিতে সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব। তিনি জোর দিয়ে বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত প্রভাবের কথা উল্লেখ করে বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিবের আগমনকে অস্বীকার করার উপায় নেই, কিন্তু একটি রাষ্ট্র শুধুমাত্র ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তা দ্বারা পরিচালিত হতে পারে না। এর জন্য সামগ্রিক চিন্তা ও পরিকল্পনা প্রয়োজন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের কাঠামোকে সচল রাখতে নির্বাচন অপরিহার্য। নির্বাচন না হলে ষড়যন্ত্র ও জটিলতা আরও বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, রাজনীতিতে সরলভাবে চিন্তা করার সুযোগ নেই। রাজনৈতিক দলগুলোকে বাইরে রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে ক্ষোভ ও জটিলতা তৈরি হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, প্রথম দিকে ড. ইউনূসের সরকার গঠনের প্রশ্নে বাম, ডান, বিএনপি, জামায়াতসহ সবাই সমর্থন দিয়েছিল, কিন্তু তখন নির্বাচনের কথা কেউ বলেনি। এখন কেন নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে? তিনি বলেন, সংস্কারের জন্য সময় প্রয়োজন, কিন্তু গত ৭ মাসের অভিজ্ঞতায় আমরা ব্যর্থতা ও ষড়যন্ত্র দেখতে পাচ্ছি।
নুরুল হক নুরের বক্তব্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা এবং একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান প্রতিফলিত হয়েছে।
আঁখি