
শনিবার (১৫ মার্চ), অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও জাতিসংঘের বাংলাদেশ অফিসের যৌথ আয়োজনে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশ সফরে এসে অংশ নেন। মতবিনিময় সভায় অংশ নেন এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারত জানান।ব্যারিস্টার ফুয়াদ আওয়ামী লীগকে "কিংস পার্টি" বলে আখ্যায়িত করেন।
ফুয়াদ আরো বলেন,“বিএনপি অথবা এনসিপি কাউকে কিংস পার্টি মনে করি না। মনে করি না এই কারণে কারণ হচ্ছে তারা লম্বা লড়াই, আন্দোলন, সংগ্রাম, ত্যাগ হাজার হাজার নেতাকর্মীদের জীবনের বিনিময়ে দিয়ে তারা আসলে তাদের রাজনৈতিক বৈধতা অর্জন করেছেন। অতএব যে রাজনৈতিক দল এবং নেতাদের রাজনৈতিক বৈধতা লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে তৈরি হয়, তাকে কিংস পার্টির তকমা দেওয়াটা নায্য না। তাই বিএনপিকে একসময়ে আওয়ামী লীগ কিংস পার্টির তকমা দিয়েছিল সেটা যেমন নায্য না, আজকে এনসিপি অথবা নাগরিক পার্টিকে যারা কিংস পার্টির দেবার চেষ্টা করছে, সেটার সাথেও আমরা একমত না।”
ফুয়াদ বলেন,“বাংলাদেশের কিংস পার্টি বললে বলতে হবে সেটা আওয়ামী লীগকে বলতে হবে। যারা বাংলাদেশে শেখ পরিবারের জমিদারী বন্দোবস্ত কায়েম করেছিল, ওরা হচ্ছে কিংস পার্টি। যারা ভোট ছাড়া, গণতন্ত্র ছাড়া, নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে, তারা হচ্ছে কিংস পার্টি। যারা বাংলাদেশে বসে এই রাষ্ট্র এবং এই জনগণের স্বার্থকে বিক্রি দিয়ে ভারতের দাসখত তৈরি করেছে, গোলামী তৈরি করেছে তারা হচ্ছে কিংস পার্টি।
কিংস পার্টি হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় পার্টি। যারা গত ৪০ বছর ধরে বাংলাদেশে দিল্লির রাজনীতি করেছে, আওয়ামী লীগের বিটিম হিসেবে কাজ করেছে, দিল্লির গোলামীর দাসখত তৈরি করেছে। অতএব এসেন্স দেখতে হবে, কোন রাজনৈতিক দল কোন প্রেক্ষাপটে দেশের জন্য কি ভূমিকা পালন করেছে, তার উপর নির্ধারিত হবে সেই দলগুলো কি আসলে জনগণের পক্ষে ছিল কিনা? রাষ্ট্রের পক্ষে ছিল কিনা? না তারা অন্য কারো গোলামী করেছে? এটাই হচ্ছে আমার কাছে কিংস ডেফিনেশন।”
ফুয়াদ আরও বলেন,“জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের অনেকগুলো যৌক্তিক জায়গা আছে। তার ভিতরে একটা জায়গা হচ্ছে আমাদের ইতিহাসে একমাত্র জায়গায় আমরা এখন আছি, যেখানে কেন্দ্র থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত কোন গ্রহণযোগ্য নির্বাচিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নাই। থাকবার কারণে যেটা হচ্ছে যে রাষ্ট্রের যে ন্যূনতম সেবার জায়গাটা আছে, সেই সেবাটা লঙ্ঘিত হচ্ছে। সেটা ডেলিভার করা যাচ্ছে না। উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা সিটি কর্পোরেশন অলরেডি ল্যাপস করে দিয়েছে, কলাপস করেছে। ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবাই পলাতক জীবনযাপন করছে, তো সেই বাস্তবতায় একটা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এই সেবাকে কোনভাবে এনসিওর করা যাবে না। কিন্তু এক্ষেত্রে একটা গ্রহণযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে, জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর একটা ঐক্যমত এখানে জরুরী তারা কোনটা চায়।”
ফুয়াদ আরও বলেন,“এটার আরেকটা ভালো দিক যেটা হবে নির্বাচন কমিশন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং আমাদের যে বোরোক্রেসি আছে, স্থানীয় প্রশাসন আছে, তাদের জাতীয় নির্বাচন তৈরি করার মানে ক্যাপাসিটি আছে কিনা, এটা একটা বিচার করার মাধ্যম আমরা পাবো, হচ্ছে স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে। তো সেই জায়গাটাও বিবেচনা করা যেতে পারে। কিন্তু এটায় আবার মানে ফ্লিপ সাইডও আছে যে ভোটার তালিকা হালনাগাত করার সময় সাফিশিয়েন্ট হবে কিনা। সাফিশিয়েন্ট ফান্ড আছে কিনা। ইভিএম মেশিন না ব্যালট, এই তর্ক আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর একমত হওয়ার একটা বিষয় আছে। সবকিছু মিলে আমার মনে হয় যে ঐক্যমত কমিশন এখানে একটা ইনিশিয়েটিভ নিতে পারে, তারা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবে। কোনটা আসলে হওয়া দেশের জন্য মানুষের জন্য কল্যাণকর।”
ফুয়াদ শেষ করেন,“আমার কাছে মনে হচ্ছে না যে শাপলা শাহবাগের কোন আসলে কোন নায্যতার ভিত্তিতে কোন সংকট আছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান যেটা দেখিয়েছে সেটা হচ্ছে আমরা কালেক্টিভলি একটা জয়েন্ট ফোর্সের অংশ। আমরা বাংলাদেশের পক্ষের মানুষ, আমাদের মধ্যে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আমাদের আত্মমর্যাদা, আমাদের জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে কোন দ্বিমত নাই। যেটা আছে সেটা হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আছে বিদেশনীতি, প্রতিরক্ষা বিষয়ে আমরা সবাই একমত।”
উল্লেখযোগ্য যে,এই মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এবং উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন, যেখানে জাতিসংঘের মহাসচিব তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
আফরোজা