ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

গণভবন ঘেরাওয়ের সিদ্ধান্ত জনগণের, আমরা কেবল সঙ্গে থেকেছি: নাহিদ

প্রকাশিত: ০০:৫৪, ১৬ মার্চ ২০২৫

গণভবন ঘেরাওয়ের সিদ্ধান্ত জনগণের, আমরা কেবল সঙ্গে থেকেছি: নাহিদ

ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে জনগণের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, "গণভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি আমাদের ছিল না। ঢাকায় এসে জনগণ সিদ্ধান্ত নেয় কী করতে হবে, আর আমরা কেবল তাদের সঙ্গে থেকেছি।"

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রলীগের বিদ্রোহী অংশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে মন্তব্য করেছেন নাহিদ। তিনি বলেন, "ছাত্রলীগের যে অংশটি বিদ্রোহ করেছে, তারা যদি না বের হতো, তাহলে হলে থাকা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত করাটা অনেক কঠিন হতো।"

আন্দোলনের নেতৃত্ব ও সংগঠন সম্পর্কে নাহিদ বলেন, "আমাদের বেশিরভাগ আন্দোলন নেতৃত্বের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে ব্যর্থ হয়। কিন্তু এবার আমরা শুরু থেকেই সচেতন ছিলাম। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে বোঝাপড়া ছিল, যার ফলে তারা নিজ নিজ জায়গা থেকে লোকবল পাঠিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও অলিখিত সমঝোতা ছিল। বিএনপি শুরু থেকেই এই আন্দোলনকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন হিসেবে দেখেছে এবং নৈতিক সমর্থন দিলেও এটিকে নিজেদের আন্দোলন বলে দাবি করেনি।"

আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, "এই আন্দোলনের কর্মসূচি ধাপে ধাপে এগিয়েছে। তিন তারিখে শহীদ মিনারে এক দফার বাইরে অন্য কিছু বলার সুযোগ ছিল না, কারণ জনগণের চাওয়া তখন একটাই ছিল—সরকার পতন। পাঁচ তারিখের গণভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে ছিল না, কর্মসূচি ছিল ‘লং মার্চ টু ঢাকা’। তবে ঢাকায় এসে জনগণ সিদ্ধান্ত নেয় কী করতে হবে, আমরা কেবল তাদের সঙ্গে থেকেছি।"

নাহিদ মনে করেন, আন্দোলনকে ‘মনসুন রেভুলেশন’ বলা হলেও প্রকৃতি সহায় ছিল। তিনি বলেন, "বৃষ্টির মৌসুম হলেও এমন বৃষ্টি হয়নি যে, মানুষ রাস্তায় নামতে পারবে না। এটা অলৌকিক মনে হয়েছে।"

আন্দোলনের নেতৃত্ব কাঠামো নিয়ে নাহিদ বলেন, "আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কোনো নির্দিষ্ট নেতৃত্ব নির্ধারণ করব না। প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নজনকে সামনে রাখা হবে। তবে বাস্তবতার কারণে একসময় আমাকে মিডিয়ার মুখোমুখি হতে হয়েছে এবং কর্মসূচি ঘোষণা করতে হয়েছে। কিন্তু অনেক তথ্য থেকে নিজেকে সচেতনভাবেই দূরে রেখেছিলাম, যাতে ধরপাকড়ের ক্ষেত্রে আন্দোলন নিরাপদ থাকে।"

সরকার গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, "আসিফ খুব জোরালোভাবে বলেছিল, ছাত্রদেরকে সরকারের প্রতিনিধি হতে হবে, যাতে দাবিগুলো বাস্তবায়নের সম্ভাবনা থাকে। আমি তখন কিছুটা দ্বিধায় ছিলাম, কারণ আমাদের জন্য মাঠটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পরে তিন বাহিনীর সঙ্গে আলোচনার সময়ও আসিফ সাহসী ভূমিকা রাখে।"

আন্দোলনের সময় নানা ঘটনা ঘটলেও নেতৃত্ব ও কৌশলের কারণে এটি টিকে ছিল বলে মনে করেন নাহিদ।

তিনি বলেন, "যখন আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়, তখন তদন্তকারীরা হতাশ হয়ে যায়, কারণ আমার কাছে আন্দোলন সংক্রান্ত অনেক তথ্যই ছিল না। আন্দোলনের সময় বিএনপি বা ছাত্রদলের নেতাদের সঙ্গেও আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি। মূল যোগাযোগ করেছিল আসিফ, পরে তাকেও তুলে নেওয়া হয়। তবে মূল লক্ষ্য ছিল আমাকে আটক করা, কারণ আমি দৃশ্যমান ছিলাম।"

ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/LxfKAMTfksE?si=fr7BYogJKWsP3smq

এম.কে.

×