
ছবি:সংগৃহীত
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত বছরের আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ফিরে একটি ভীষণ বিধ্বস্ত পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। তখন রাস্তাগুলো রক্তে ভেজা ছিল, পুলিশের গুলিতে এক হাজারেরও বেশি প্রতিবাদকারী ও শিশুর মরদেহ মর্গে ছিল। ছাত্রদের নেতৃত্বে তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হন এবং ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসন অবসান হয়। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে যান, এরপর তার বাসভবনে বেসামরিক লোকজন হামলা করে লুটপাট চালায়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ান এ তথ্য তুলে ধরে।
৮৪ বছর বয়সী অধ্যাপক ইউনূস, যিনি দরিদ্রদের জন্য ক্ষুদ্রঋণের ধারণা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করেছেন এবং নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে শেখ হাসিনার শাসনকালে রাজনৈতিক হুমকি ও নির্যাতনের শিকার ছিলেন। বেশিরভাগ সময় বিদেশে থাকলেও তিনি কোনো রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করতেন না। তবে যখন ছাত্র আন্দোলনকারীরা তাকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেন, তখন তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেন।
অধ্যাপক ইউনূস *দ্য গার্ডিয়ান*কে জানান, "শেখ হাসিনা যে ক্ষতি করেছেন, তা বিশাল।" তিনি বাংলাদেশে তার দায়িত্ব গ্রহণের সময় দেশটির অবস্থা বর্ণনা করে বলেন, "এটি ছিল সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি দেশ, যেন আরেকটি গাজা। তবে গাজার মতো ভবনগুলোর ক্ষতি না হলেও, দেশটির সব প্রতিষ্ঠান, নীতি, মানুষ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।"
শেখ হাসিনার শাসনকালে অত্যাচার, সহিংসতা এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে প্রতিবাদে দমন-পীড়নের ফলে ১,৪০০ এরও বেশি মানুষ নিহত হয়। জাতিসংঘের মতে, পুলিশের সহিংস দমন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ছিল। তবে শেখ হাসিনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অধ্যাপক ইউনূসের ফিরে আসা বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা হিসেবে দেখায়, তার শাসনামলে শেখ হাসিনার সমালোচকদের বিরুদ্ধে অবৈধ বন্দিশালা খালি করা হয়, মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বেশ কিছু সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হন।
অধ্যাপক ইউনূস চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো হতে যাচ্ছে। তবে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ এখনো সঙ্কটময়। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে, আর ছাত্ররা নিজেদের রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। অধ্যাপক ইউনূস দাবি করেছেন, "শেখ হাসিনার শাসন ছিল একটি দুর্নীতিগ্রস্ত শাসন, যেখানে সরকার ছিল না, একদল ডাকাত পরিবারের মতো কাজ করছিল।"
শেখ হাসিনার শাসনকালে ব্যাংকিং ব্যবস্থার দুর্নীতি দেশটির অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলেছিল। অভিযোগ রয়েছে, তার আত্মীয়রা আর্থিক কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত ছিল এবং তহবিল পাচারের মাধ্যমে দেশে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় এই অর্থ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে, তবে সফলতার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
এদিকে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন তিনি ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেছিলেন। এখন শেখ হাসিনা ভারতেই অবস্থান করছেন, এবং অধ্যাপক ইউনূস জানিয়েছেন, "ভারত যদি তাকে আশ্রয় দেয়, তা সহ্য করা যেতে পারে, কিন্তু সেখানে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো প্রচারণা চালানোর অনুমতি দেওয়া বিপজ্জনক।"
সম্প্রতি অধ্যাপক ইউনূস ইলন মাস্ককে বাংলাদেশে তার স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক নিয়ে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, এবং মাস্কের সফর আগামী এপ্রিল মাসে হতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ইউনূস আশা করেন, ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশকে "একটি ভালো বিনিয়োগের সুযোগ" হিসেবে দেখতে পারে এবং মাস্কের সফরের সময় তিনি এই বিষয়ে আলোচনা করবেন।
আঁখি