ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৬ মার্চ ২০২৫, ২১ ফাল্গুন ১৪৩১

সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার অভিশাপ: আওয়ামী লীগের জন্য স্থায়ী শঙ্কা?

প্রকাশিত: ০৮:৪৭, ৫ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ০৮:৪৮, ৫ মার্চ ২০২৫

সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার অভিশাপ: আওয়ামী লীগের জন্য স্থায়ী শঙ্কা?

গোলাম মাওলা রনি

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিদায়ের ঘটনা এক বিতর্কিত অধ্যায় হয়ে আছে। তাকে নিয়ে যেভাবে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল এবং দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল, তা আজও আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। এই ঘটনার প্রভাব শুধুমাত্র এস কে সিনহার জীবনেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং এটি দেশের বিচারব্যবস্থা ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে গভীর ছাপ ফেলেছে।

ধর্মের কল বাতাসে নড়ে

বাংলার একটি প্রবাদ আছে, ‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে’। মজলুমের দীর্ঘশ্বাস ও অভিশাপ কখনো বৃথা যায় না বলে ধারণা করা হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এস কে সিনহার প্রতি যে আচরণ করা হয়েছিল, তা আওয়ামী লীগের জন্য এক দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি থাকাকালে কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তের জন্য সমালোচিত হলেও, শেষ পর্যন্ত তাকে অপমানজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল।

ডিজিএফআই-এর ভূমিকা ও রাজনৈতিক ব্যবহার

ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স) বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা। এটি মূলত সামরিক বাহিনীর স্বার্থ দেখভাল করার জন্য তৈরি হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠী এটিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি ডিজিএফআই-এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা ও তার বাসায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযান নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অতীতে ক্ষমতার অপব্যবহার যারা করেছেন, তারা একে একে এর ফল ভোগ করতে শুরু করেছেন।

বিচারবিভাগের স্বাধীনতা ও এস কে সিনহার ভূমিকা

প্রধান বিচারপতি হিসেবে এস কে সিনহা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় ভূমিকা রাখতে চেয়েছিলেন বলে তার সমর্থকরা দাবি করেন। বিশেষ করে ২০১৭ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দেওয়ার পর তার বিরুদ্ধে নানা চাপ সৃষ্টি হয়। তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয় এবং পরে দেশত্যাগ করতে হয়।

তাকে নিয়ে সরকারের যে পদক্ষেপ ছিল, সেটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি নেতিবাচক দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। আজও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে অনেক বিচারক নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন না।

অভিশাপ কি সত্যিই কাজ করছে?

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এস কে সিনহার অপসারণের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তারা একে একে বিপদের সম্মুখীন হচ্ছেন। কেউ দুর্নীতির মামলায় পড়ছেন, কেউ রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হচ্ছেন। এটি অনেকের কাছে ‘প্রাকৃতিক বিচার’ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ আইন ও বিচার ব্যবস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার চেষ্টা করলেও, সাম্প্রতিক সময়ে আইন অঙ্গনে দলীয় সমর্থকরা নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।

এস কে সিনহার ঘটনাটি কেবলমাত্র একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতিচ্ছবি। তার প্রতি করা অবিচার আওয়ামী লীগের জন্য ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে আরও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া কেবল বর্তমান সময়েই নয়, ভবিষ্যতেও আওয়ামী লীগকে তাড়া করতে পারে।

সূত্র : https://www.youtube.com/watch?v=kqmANm1iSXI

রাজু

×