
ছবি : সংগৃহীত
সম্প্রতি দীপ্ত টিভির ‘দেশ ভাবনা’ টকশোতে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল। তার কাছ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোতে গণতন্ত্রের চর্চা কতটুকু, গণতন্ত্র চর্চায় রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান সর্ম্পকে জানতে চাওয়া হয়।
মাসুল কামালের কাছে প্রশ্ন ছিল, এই যে সেকেন্ড রিপাবলিক, গণপরিষদ নির্বাচন বা ইনকিলাব জিন্দাবাদের প্রসঙ্গ নিয়ে আপনি বলেছেন, কিন্তু একটি জিনিস মানুষ কিন্তু আমার মনে হয় বুঝতে পেরেছে, সেটা হচ্ছে যে, পরিবারতন্ত্রের কথা বলেছে, এরা বলেছে যে, কৃষকের ছেলে প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে, তাঁতির ছেলে হতে পারবে, এরকম একটা স্বপ্নের কথা তারা বলেছে। সেক্ষেত্রে সেটাকে আপনি এই বার্তাটাকে কিভাবে দেখেন? সাথে বাংলাদেশে পরিবারতন্ত্রের রাজনীতির কি কবর রচিত হতে যাচ্ছে বা হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা?
জবাবে সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, প্রথমত জিনিসটা হলো যে পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে তাদের যে আহ্বান, এটাকে আমি খুবই ইতিবাচকভাবে দেখি। আমি মনে করি, এটা হওয়া উচিত। মানুষ যদি জানে যে আমাকে সারাজীবন কর্মী হয়েই থাকতে হবে, স্লোগান দিয়েই চলতে হবে, তাহলে সেই রাজনীতিতে মানুষ আসবে কেন! তারাও তো আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে। আবার পরিবারতান্ত্রিক কিন্তু অন্য জিনিসও আছে একটা। আরেকটা জিনিস, পরিবারতান্ত্রিক ব্যাপারটা হলো যে, বাবার ছেলে হবে, সেই ছেলেই রাজা হবে। সেই প্রধানমন্ত্রী হবে, সেই এই দলের প্রধান হবে, এটা যে পরিবারতন্ত্র, এটা কি করে? এটা সাধারণ কর্মীকে নিৎসাহিত করে। তাকে বলেই দেয় যে, তুমি হলাম গিয়ে প্রজা, আর আমি হলাম গিয়ে রাজা। তোমার দায়িত্ব হলো আমাকে জিন্দাবাদ বলা। এটা ঠিক না, এটা গণতন্ত্রের মূল বক্তব্য নয়।
আমাদের এখানে আরেকটা পরিবারতান্ত্রিক না কিন্তু আরেকটা এরকম একটা ঘটনা আছে। সেটা হলো গিয়ে যত দল দেখবেন, আপনি দলের যারা প্রধান হন, উনারা প্রধানের পথ ছাড়তে চান না, কেউ না। দেখেন আমরা যখন স্টুডেন্ট ছিলাম, তখন দেখতাম, এই রাশেদ খান মেনন, তখন থেকে ওয়ার্কারস পার্টি মনে হলো যে, উনার একটা প্রত্যেক সম্পত্তি আর কি। পাইছে, ওইটা উনি জীবনে ছাড়বে না। ওইটা নিয়ে সে আছে। এই পার্টি কিভাবে সম্ভব! এবং একই জিনিস জাসদের শেষের দিকে হাসানুল হক ইনুর পৈতৃক সম্পত্তি হয়ে গেছিল, ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছিল। এরা কিন্তু কেউ ছাড়ে না, ছাড়ার কোন ইতিহাস নাই। দিনের পর দিন ইলেকশন করে, ইলেকশনে মিজারেবল রেজাল্ট করে, পথ ছাড়ে না।
সেই থাকবে আবার। বিএনপিতেও একই জিনিস, আওয়ামী লীগেরও একই জিনিস, সমস্ত পলিটিক্যাল পার্টিতে। খালি যেন জামায়াতটাতে আমি একটু চেঞ্জ দেখি। এরা আমার মনে হয় যে তুলনামূলকভাবে গণতান্ত্রিক। বিদেশে দেখবেন, নির্বাচনে দল হেরে গেছে, দলীয় প্রধানের পক্ষ থেকে তাকে সরে যেতে হচ্ছে, ইংল্যান্ডে দেখেন।
তিনি বলেন, আপনি এটা কিন্তু এতটুকু সৌজন্যতাবোধ আমাদের দেশে নাই। আমাদের দেশে ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে দলীয় প্রধান কখনো পথ ছাড়বেন না। এটা কিন্তু পরিবারের চেয়ে খুব বেশি কিছু ভালো তাও আমি মনে করি না। এই ব্যাপারে ওদের যে বক্তব্যগুলি, আমি হাসনাত আব্দুল্লাহ বক্তব্য শুনেছি, আমার কাছে খুবই ভালো লাগছে।
আমি মনে করি, এই ধরনের একটা পলিটিক্যাল পার্টি আসা উচিত। যারা নাকি এই চেঞ্জটা এবং আমি এখানে আরেকটা চেঞ্জ দেখছি, নাহিদ ইসলাম, যে দল থেকে আসছে, সেই দলের মূল লোক ছিল আক্তার হোসেন। মূল দলটা তো সেই করছে, এই নূরদের ওখান থেকে বেরিয়ে যেয়ে, ছাত্রশক্তি। এবং সেই দলের তার সদস্য সচিব ছিল নাহিদ ইসলাম, এখন নাহিদ ইসলাম হয়ে গেছেন দলের প্রধান চেহারা। এবং এটা তো আশ্চর্য, মেনে নিছে।
আবার দেখেন, নাগরিক কমিটি যেটা ছিল, সেটার মূল লোক ছিল পাটোয়ারি। পাটোয়ারি যখন সিরিয়াল অনেক পিছনে বেড়ে গেছে, কিন্তু পাটোয়ারি কিন্তু নতুন একটা দল করে নাই, সে তাদের সঙ্গে আছে।
তিনি আরো বলেন, এই যে মেনে নেওয়ার যে মানসিকতাটা, যে সময়ের প্রয়োজনে কেউ এগিয়ে যাবে, কেউ পিছিয়ে আসবে এবং এগিয়ে যাওয়াটা নিজের ব্যক্তিগত পরাজয় নয়, বরং দলের প্রয়োজনে এটা ভালো। এই যে মেনে নেওয়াটা, এই যে স্পোর্টিং অ্যাটিটিউডটা, আমি এটাকে প্রশংসা করি। খুব ভালো একটা তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তারা এটা ভালো কাজ করেছে।
আমি মনে করি বাংলাদেশের যারা সিনিয়র পলিটিশিয়ান যারা আছেন, যারা অন্যান্য পার্টিতে আছেন, তাদের এখান থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। যে এই ছোট ছোট ছেলেটা পারছে দেখাইতে, তোমরা তো পারতেছো না। এটাকে আমি সাপোর্ট করি।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=bkKw5fy_fN8
মো. মহিউদ্দিন