
সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশরাফ কায়সার এক টকশোতে মন্তব্য করেছেন, “যারা ভোটের প্রচলিত বিন্যাস নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে আছেন, তারা হতাশ হবেন এবং তাদের জন্য বড় চমক অপেক্ষা করছে।”
তিনি বলেছেন, “আমি ধরে নিচ্ছি, ২০২৫ সালের শেষে কিংবা ২০২৬ সালের শুরুতে যদি নির্বাচন হয়, এটি আমাদের ইতিহাসের অত্যন্ত নিরপেক্ষ, গুরুত্বপূর্ণ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে, যা আমরা গত ১৭-১৮ বছরে দেখতে পাইনি।”
আশরাফ কায়সার আরও বলেন, “যারা শেখ হাসিনার পতন ঘটাতে পেরেছে, তারা রাজনীতিতেও ভালো করবে এবং নির্বাচনেও ভালো করবে। কারণ আমাদের রাজনীতিতে একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে, যা শুধু ভোটের অংক দিয়ে বিশ্লেষণ করা যাবে না।”
তিনি বলেন, “ভোট পানির মতো স্থির কিছু নয়, এটি প্রবাহমান। এটি প্রতিদিন বদলায়, ব্যবহারের ওপর, কথার ওপর। রাজনীতির কবিদের কথাই আমরা বলি, কারণ তারা মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করতে পারেন।”
আশরাফ কায়সার আরও যোগ করেন, “৫ই আগস্টের পটভূমিতে এবার ভোটের নতুন একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এখানে গণঅভ্যুত্থানের নায়করা থাকবেন, নতুন রাজনৈতিক বয়ান থাকবে। একইসঙ্গে, রাজনৈতিক দুর্নীতি, দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি ভোটের সমীকরণে বড় প্রভাব ফেলবে।”
তিনি বলেন, “আপনি অনেক বড় দল হতে পারেন, ১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকতে পারেন, কিন্তু তা মানে এই নয় যে, আপনি নিশ্চিতভাবেই ক্ষমতায় ফিরবেন। যদি রাজনীতির সংস্কার না করা হয়, তবে ভোটে বড় চমক অপেক্ষা করছে।”
আশরাফ কায়সার বলেন, “কোনো দলের জনসভায় এত মানুষের উপস্থিতি আমি আগে দেখিনি। যদি আরও সময় নিয়ে আয়োজন করতো, তাহলে মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ-তিন গুণ হতে পারতো।” তিনি উল্লেখ করেন, “নাহিদদের পাশে নতুন প্রজন্মের মানুষ রয়েছেন, যারা শুধু ভোটে দাঁড়াবেন না, বরং প্রচলিত দলের নেতা হওয়ারও ইচ্ছা প্রকাশ করবেন না। কিন্তু তারা রাজনীতিতে নতুন শক্তি হয়ে উঠতে পারেন।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতিতে নাহিদ আখতারদের অন্তর্ভুক্তি গুণগত পরিবর্তন আনবে। যারা পুরনো ধারার রাজনীতি করছিলেন, তাদের দিন শেষ। নতুন প্রজন্মের ভোটারদের বয়স এখন ২৬ থেকে ৪০-এর মধ্যে। তারা আওয়ামী লীগ বা বিএনপিকে চিনেন না, বরং এমন একটি শক্তিকে ক্ষমতায় দেখেছেন, যার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই।”
আশরাফ কায়সার আরও বলেন, “নাহিদ গতকাল তার ঘোষণায় ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। অর্থনীতির কথা বলেছেন, কীভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করবে, তরুণদের জন্য কী পরিকল্পনা রয়েছে-এসব বিষয় স্পষ্ট করেছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ শুধু নামকাওয়াস্তে নয়, বরং তরুণদের কর্মসংস্থানের বাস্তব দিক নিয়ে কথা বলেছেন। এসব বিষয়ে ভোটের গুরুত্ব রয়েছে।”
তিনি বলেন, “নেতার বডি ল্যাঙ্গুয়েজও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের নেতারা যখন কর্মীদের পরিবেষ্টিত হয়ে চলাফেরা করেন, জনগণ তা পছন্দ করে না। নাহিদ আখতার তার কর্মীদের মঞ্চে বসিয়ে একা কথা বলেছেন। এটি পরিশীলিত নেতৃত্বের চিত্র তুলে ধরে, যা দীর্ঘদিন পর রাজনীতিতে দেখা গেলো।”
আশরাফ কায়সার বলেন, “রাজনীতির খেলায় অনেক কিছু করতে হয়। অভ্যুত্থানের ক্ষেত্রেও তাই হয়। তবে মূল সুর যদি হয় বিকল্প রাজনীতি, তাহলে এই নতুন শক্তির ভোট আছে এবং তা অবশ্যই গোনায় নিতে হবে।”
সূত্র:https://tinyurl.com/ywytj5xs
আফরোজা