
ছবি : সংগৃহীত
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, এই জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে যারা রাজনীতি করতে চাচ্ছে, তাদের অনেকে আমাদের সহযোদ্ধা সহকর্মী ছিল। আমাদের কিছু নৈতিক জায়গা থেকে, আদর্শিক জায়গা থেকে, তাদেরকে আমরা সুপরামর্শ দিয়ে আসছি। আমরা ভবিষ্যতেও দিব। কিন্তু আমরা শেখ হাসিনাকে বলেছিলাম যে, সরকারে থেকে দলীয় সরকারের অধীনে শেখ হাসিনা নির্বাচন করতে চেয়েছিল। সেটি রুখে দেওয়ার জন্য আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিলাম। কারণ সরকারে থেকে সে নির্বাচন করলে নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে।
এখন এই সরকারের উপদেষ্টা থেকে যদি তারা দল গঠন করে, তাহলে তো এইটা সরকারি দল হবে। তাহলে আওয়ামী লীগের মধ্যে আর এই সরকারি দলের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়! গণঅভ্যুত্থানকে যেভাবে গুটি কয়েক ব্যক্তি কেন্দ্রিক গ্লোরিফাই করা হচ্ছে কিংবা কাউকে বিশেষ ভাবে ক্রেডিট দেওয়া হচ্ছে, সেটা তো বাস্তবতা না।
তিনি বলেন, এই গণঅভ্যুত্থানে বিএনপি জামায়াতসহ বিশেষ করে এই গণঅভ্যুত্থানের তরুণরা, যে ভূমিকা রেখেছিল, ২০১৮ থেকে যারা কোটা সংস্কার আন্দোলন করেছিল, তাদের কথা এভাবে কোন জায়গায় বলা হচ্ছে না। এখন সরকার আছে, সরকারের উপদেষ্টা হয়ে তারা সরকার, ব্যবসা-বাণিজ্য, সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। গণমাধ্যমকে নির্দেশনা দিচ্ছে, এইভাবে খবর দেখাবেন, এইভাবে প্রচার করবেন। তারা প্রচার করছে।
আওয়ামী মাফিয়া-দুর্বিত্তদের সাথে রাতের অন্ধকারে মিটিং করা হচ্ছে, তাদেরকে পুনর্বাসনের জন্য আশ্বস্ত করা হচ্ছে, আমলাতন্ত্র থেকে শুরু করে রাজনীতি সব জায়গায়, এগুলো তো আমরা মেনে নিতে পারি না।
নুর বলেন, শুধুমাত্র বিএনপি একটা বড় রাজনৈতিক দল, বিএনপির অনেক ঘটনা, দুই-একটি ঘটনা বাইরে আসায় আমরা শুধু বিএনপিকে সমালোচনা করছি। এই ছাত্র নেতৃবৃন্দ যা করছে, আপনারা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন থেকে যেদিন জানতে পারবেন, সেটিও আপনাদের গা শিউরে উঠবে।
অবশ্যই আমরা চাই, তারা ভালো রাজনীতি করুক। পরিশুদ্ধ রাজনীতি করুক। কিন্তু সরকারের থেকে তো সেটি সম্ভব না। এখন একজনে দল গঠন করেছে, একজন পদত্যাগ করেছে। বাকি দুজন তো সরকারে আছে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ছাত্র উপদেষ্টাদের তদারকি কমিটি আছে। সরকারের সাথে কাজ করায় স্বাভাবিকভাবে তিন উপদেষ্টার একটা ভালো নেক্সাস তৈরি হয়েছে। এখন তারা যদি একজন পদত্যাগ করে, দুজন তো আছে এবংএই আন্দোলন কেন্দ্রিক বিশেষ করে এইখানে যারা উপদেষ্টা গঠন হয়েছে, তাদের আমরা গত ছয় মাসের যে ভূমিকা দেখেছি, এটা নতজানু একটা ভূমিকা।
তিনি আরো বলেন, তারা ছাত্র নেতৃবৃন্দের কাছে জিম্মি ছিল অনেক ক্ষেত্রেই। কাজেই তারাও সক্রিয়ভাবে মেরুদণ্ড উঁচু করে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে, অনেক কাজ করতে পেরেছে বলে, এটা আমি মনে করি না। এটি যদি করতে পারতো, তাহলে দেশের এই আজকে পরিস্থিতি, ছয় মাস পরে এরকম হতো না। এবং ছয় মাস পরে সেনাপ্রধানের বলা লাগতো না পাবলিকলি, এনাফ ইজ এনাফ।
এবং আমরা মনে করি যে, সেনাপ্রধান যে স্পিডের জায়গা থেকে কথা বলেছেন সেটি যথার্থ। তিনি সংকটের আচ করতে পেরে কথা বলেছেন। আপনারা এগুলো বন্ধ করেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দিকে হাটতে হবে। এছাড়া এখন আর গতি নাই। দেশী-বিদেশী নানান ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ ধরনের একটা খোলা অবস্থায়, বিভিন্ন গোষ্ঠীকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
নুরুল হক নুর বলেন, সেই জায়গা থেকে ছাত্র নেতৃবৃন্দ সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল, আমরা ৪২ টি রাজনৈতিক দল, হাসিনার বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছিলাম একসাথে। এখন অনেকে গিয়েছে, তারা সরকারে আছে শুভেচ্ছা জানাতে, আমরাও জানাই। এটা তো দোষের কিছু না।
তবে আমরা মনে করি যে, তাদের সরকার থেকে বেরিয়ে একটা সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে, গণঅধিকার পরিষদের তরুণরা যেভাবে সাত-আট বছরে উঠে এসেছে, সেইভাবে তৈরি হওয়া দরকার। এখন তারা যদি আমরা যেটা আওয়ামী লীগের আমলে বলেছিলাম না, আমাদেরকে কোটি কোটি টাকার অফার দেওয়া হয়েছে, সিটের অফার দেওয়া হয়েছিল, আমরা যাই নাই।
তিনি বলেন, সেখানে যখন ওই জেনারেল ইব্রাহিম সাহেব কিংবা আপনার ওই শাহজাহান ওমরের মত লোকেরা গিয়েছে, তখন আমরা বলেছিলাম যে, শেখ হাসিনার সরকার রাজনীতিতে কোরবানির পশুর মত কেনাবেচা করছে। এখনো তো তাই দেখছি।
অনেক মানুষকে, যে আমাদের দুজন নেতা বা দুই একজনের কথা বললেন, আরে তরুণ ছেলেকে যদি অফার দেওয়া হয়, ডিসি অফিসে সব তোমার এক্সেসে চলবে। তুমি কাজকর্ম করবা, তোমাকে এমপি বানানো হবে, দুই-চার কোটি টাকা দেওয়া হবে, তুমি আমাদের সাথে আসো। সরকারের পক্ষ থেকে যদি এই অফার দেয়া হয়, তাহলে তো তারা যাবে। যারা গিয়েছে, তারা আবার ফিরে আসবে। অতীতেও যারা গিয়েছে, তারাও অনেক এসেছে।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=QjfLdQWW7C0
মো. মহিউদ্দিন