ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫ ফাল্গুন ১৪৩১

এ বি এম মোশাররফ হোসেন

স্রোতের বাইরে গিয়ে নতুন দল গঠন করা চ্যালেঞ্জিং বিষয়

প্রকাশিত: ০০:৫৫, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

স্রোতের বাইরে গিয়ে নতুন দল গঠন করা চ্যালেঞ্জিং বিষয়

ছবি : সংগৃহীত

সম্প্রতি এসএটিভির টকশো লেট এডিশনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন। তার কাছ থেকে সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রসঙ্গ, ছাত্রদের নতুন দল গঠন, তাদের বর্তমান অবস্থান সর্ম্পকে জানতে চাওয়া হয়।

শুরুতেই জানতে চাওয়া হয়, রাজনীতিতে বেশ একটি আলোড়ন তুলতে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের নতুন দল, তার আগে শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্লাটফর্ম থেকে নতুন ছাত্র সংগঠনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে আজ। মধুর ক্যান্টিনে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ যেটি, মধুর ক্যান্টিন একটা ঐতিহাসিক জায়গা এবং আপনাদের ছাত্র রাজনীতির বলা যায় যে, একদমই আতুর ঘর বা সূতিকাগার আমরা যেটি বলি। সেখান থেকে নতুন এই সংগঠনের পথচলাকে আপনি কিভাবে দেখছেন এবং তাদের যাত্রাটা আসলে শুরু হলো সেটির মূল্যায়ন কি?

জবাবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন বলেছেন, “আসলে আমরা গণতান্ত্রিক রাজনীতি করি সুতরাং যেকোনো গণতান্ত্রিক সংগঠনকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে যেকোনো সংগঠন হতে পারে যেমন, বাংলাদেশে আপনার প্রায় ৭০-৮০ টা রাজনৈতিক দল আছে। অসংখ্য ছাত্র সংগঠন আছে। এখন দেখা যাবে যে, সাধারণ ছাত্রদেরকে কতটুকু তারা সম্পৃক্ত করতে পারে, কতটুকু তাদের সমর্থন আদায় করতে পারে, এটা হলো বড়। কারণ, ইতিমধ্যে বাংলাদেশে আপনার প্রতিষ্ঠিত বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠন আছে।

যারা ইতিমধ্যে সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে তাদের ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছে এবং সাংগঠনিক ভিত্তিও আছে তাদের। সুতরাং এই সংগঠনটা একটা নতুন সংগঠন এবং আমরা যতটুকু এর পরিচয় পেয়েছি যে, এটা একটা মিক্সড অর্গানাইজেশন। এখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে যেই জোটটা, ওইটা কিন্তু আসলে কোন সংগঠন না, একটা জোট। সেই জোটের কিছু এখানে রয়ে গেছে, এখানে ছাত্রশিবিরের আছে, ছাত্র ফেডারেশনের আছে, ছাত্র ইউনিয়নের আছে, এইভাবে নানা সংগঠনকে এনে একটা জায়গায় করা হয়েছে।

সুতরাং এদের আদর্শিক গাথুনিটা কতটুকু মজবুত হয়, এটা দেখার জন্য আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে। কারণ আপনার নানা পথ এবং মতকে, যেমন আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, আমরা কিন্তু একটা জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী। আমরা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী বিশ্বাসী। সুতরাং আমাদের মধ্যে কিন্তু ঐক্যের একটা নির্দিষ্ট জায়গা আছে। এখন এদের ম্যানিফেস্টোটা আমি দেখি নাই যে, এরা কি ম্যানিফেস্টো নিয়ে আগামী দিনে আগাবে। সেটা দেখলে হয়তো কিছুটা মন্তব্য করা যেত।” 

উপস্থাপক জানতে চান, একই অবস্থা কি যে নতুন রাজনৈতিক দল আসছে, জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়, যেটি আপনি জানেন যে, শুক্রবার তারা মানিক মিয়া এভিনিউতে সমাবেশের মাধ্যমে এটি ঘোষণা দেবে এবং এটি নিয়ে অনেক আলোচনা!

জবাবে এ বি এম মোশাররফ হোসেন বলেন, “এটাই তো চাই। এই যে ছাত্র সংগঠন, ওদের চ্যালেঞ্জটা আরো বড় বেশি। কারণ আপনি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলি রয়ে গেছে, যেগুলি মানুষের আস্থা। আপনি দেখেন এই আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায়, এখানে কিন্তু পারিবারিক একটা ট্রেডিশন আছে, আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না এখন, আপনি দেখেন পাকিস্তানে ওই যে নেওয়াজ শরীফরা অথবা ভুট্টু পরিবার, এখনো কিন্তু অনেক রাজনীতিতে প্রভাবশালী। আপনি ভারতের দিকে তাকান, সেখানে এখনো গান্ধী পরিবার খুব ইম্পর্টেন্ট রোল প্লে করছে। তারপর এই যে শ্রীলঙ্কা থেকে শুরু সব জায়গায় এরকম কিন্তু একটা প্রভাব আছে। আমাদের বাংলাদেশে তো এর প্রভাব আমরা লক্ষ্যই করি।

এই স্রোতের বাইরে গিয়ে আরেকটি রাজনৈতিক দল দাঁড় করানো, এটা সত্যি আমার মনে হচ্ছে খুবই এক চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয়। সুতরাং এই চ্যালেঞ্জ তারা গ্রহণ করছে, দেখি আমরা আগামী দিনে কি হয়।”

উপস্থাপক আরো জানতে চান, আপনি কি মনে করেন যে তাদের আদর্শিক ভিত্তি মজবুত বা দুর্বল, যেটাই আমরা বলি কিনা?

জবাবে তিনি বলেন, আদর্শিক ভিত্তিটা, এরা এদের কোন কোন বিষয়টাকে সামনে নিয়ে এসে দলটাকে, সেটা ম্যানিফেস্টোটা কি হবে, এটা হলো ইম্পর্টেন্ট ব্যাপার। কারণ আপনি দেখবেন, অনেক সময় আমাদের দেশে হয় কি, যেমন, আমরা জাতীয়তাবাদী দল। আরেকটি দেখা যায় যে, অন্য একটা দেশ ঘেষা একটি রাজনৈতিক দল। আবার অন্য একটা দলকে বিরোধিতা করেও কেউ রাজনীতি করে। সুতরাং এই সামগ্রিকভাবে কি আপনার ঘোষণাপত্রটা আসে, তার উপর ডিপেন্ড করে আপনার মন্তব্য করা যাবে। তবে আমরা মনে করি যে, যেকোনো সংগঠন আগামী দিনে দাঁড়ানো এটা খুব চ্যালেঞ্জিং।

উপস্থাপক জানতে চান, উপদেষ্টা পরিষদের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করে নাহিদ ইসলাম এই যে নতুন দলের দায়িত্ব নিচ্ছেন, অনেকেই তাকে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনীতির বেশ প্রথম সারিতে দেখতে চান। অনেকে ভবিষ্যৎ সরকার প্রধান হিসেবেও দেখতেছেন, এরকম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক মন্তব্য আসছে, আপনি কি মনে করেন যে, এই সিচুয়েশনে বা এখনকার যে রাজনৈতিক, বাংলাদেশের রাজনীতির যে পরিসর যা বিস্তৃতি আপনি যেটা উল্লেখ করলেন, যে বিভিন্ন প্রভাব থাকে, সেই প্রভাবের মধ্যে এরা আসলে কিভাবে নিজেদের প্রভাব তৈরি করবে, প্রভাব-বলয় তৈরি করবে, সেটা  তাদের জন্য কতটা চ্যালেঞ্জের?

জবাবে এ বি এম মোশাররফ হোসেন বলেন, “চ্যালেঞ্জিং তো অবশ্যই কারণ আপনি ধরেন, এখানে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত বহু রাজনৈতিক দলগুলি আছে। সেই রাজনৈতিক এই বলয়টাকে ভেঙে আপনার একটা নতুন রাজনৈতিক সেন্টিমেন্ট তৈরি করতে হবে। সুতরাং, অবশ্যই চ্যালেঞ্জ এক, আর পাশাপাশি হলো, আপনাকে এই নাহিদ ইসলাম, নাহিদ ইসলাম কিন্তু এই সরকারের উপদেষ্টা বলেন, না মন্ত্রী বলেন, ছিলেন।

সেখানে তার অ্যাক্টিভিটিস কতটুকু জনমতে প্রভাব ফেলতে পেরেছে, এটা কিন্তু আমরা খুব মূল্যায়নের সেই সুযোগটা আমরা পাই নাই। এবং এটা যদি আমার মনে হচ্ছে না, জনমতে খুব একটা ইতিবাচক ভূমিকা তারা পালন করতে পেরেছে। কারণ আপনি দেখবেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র, ৫ই আগস্টের যে জনপ্রিয়তা এবং আজকে জনপ্রিয়তার মধ্যে ব্যাপক ফারাক আমরা লক্ষ্য করি। কারণ জনগণের যে প্রত্যাশা ছিল, জনগণের যে আকাঙ্ক্ষাটা ছিল, এইভাবে একটা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আগামী দিনে এগিয়ে যাবে এই শক্তিটা, কিন্তু সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণে তারা ব্যর্থ হয়েছে।

যদি আপনি বলেন কেন! আজকে দেখেন, এই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থিত কিন্তু এই ডক্টর ইউনূসের সরকারটা। ইতিমধ্যে আমাদের দ্রব্যর্মূল্যের চরম উর্ধগতি, আইন-শৃঙ্খলা আমরা উন্নত করতে পারি নাই, আমরা ব্যাংকগুলিতে মারাত্মক তারল্য সংকট, তারপর আরেকটি, তাদের যে নির্দিষ্ট, যেই ছেলে প্রায় ২০০০ এর মত ছেলে মারা গেছে, তারা অনেকে আহত আছে, পঙ্গু আছে, অনেকে চক্ষু হারিয়ে রেখেছে, তাদের ট্রিটমেন্টটা পর্যন্ত তারা সুচারুভাবে করতে পারছে না এখনো পর্যন্ত। সুতরাং, জনমতে তারা সাফল্যের যেই গাঁথুনিটা, সেটা খুব শক্তিশালী না বরং অনেকটা দুর্বল।”

সর্বশেষ  তিনি জানতে চান, এটা কি এই সরকারের সাফল্যের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে কিনা, তাদের এই রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তা বা রাজনৈতিক দলের অবস্থান মজবুত করা?

জবাবে তিনি বলেন, এখানে দেখবেন একজন হয়তো পদত্যাগ করেছে, আজকে দেখেছি আরেকজন দপ্তরবিহীন ছিলেন মাহফুজ আলম। উনাকেই আবার তথ্য দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এই সরকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রের ছায়া তো এখানে পড়ছে প্রতিনিয়ত। সুতরাং চ্যালেঞ্জটা কিন্তু দুপক্ষেরই। বর্তমান গভমেন্টেরও আর এই ছাত্রদের নতুন সংগঠনেরই। কারণ এই এই ছাত্রদের সংগঠনের একটা প্রতিচ্ছবি কিন্তু আমরা ডক্টর ইউনূসের মধ্যে দেখতে পাই। তাদের চিন্তা-চেতনা, বক্তব্য এবং তারা এই সরকারকে ডমিনেটও করছে।

আপনি দেখবেন, অনেক সময় যেখানে আপনার যদি কোথাও ক্রাইসিস দেখা যায়, সরকার যতটুকু না অ্যাক্ট করে, তার চেয়ে বেশি দেখি এই যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এরা করে। সুতরাং এখানে এই দায়টা কিন্তু আমি মনে করি পারস্পরিক সম্পর্কিত।

 

সূত্র:  https://www.youtube.com/watch?v=82sxPgl5EJo

মো. মহিউদ্দিন

×