
ড. কামাল হোসেন
৭২ সালের সংবিধান নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে যে আলোচনা শুরু হয়েছে, সে বিষয়ে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেছেন, সংবিধানের সংস্কার প্রয়োজন হতে পারে, তবে সেটি সুপরিকল্পিত ও প্রয়োজনীয় যুক্তির ভিত্তিতে হওয়া উচিত। কিন্তু গোটা সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করার ধারণাটি ভুল এবং এটি সংবিধানকে ধ্বংস করার শামিল।
ড. কামাল হোসেন বলেন, "একটি সংবিধানের সংশোধনের প্রস্তাব আসতে পারে। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে কখনও কখনও এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, যেখানে কিছু সংস্কারের প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু পুরো সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান রচনা করা সংস্কার নয়, বরং এটি ধ্বংসের পথ।"
তিনি আরও বলেন, "যারা বলছেন যে পুরনো সংবিধান সম্পূর্ণ বাতিল করে নতুন করে রচনা করতে হবে, তারা একটি ভুল ধারণা পোষণ করছেন। আমাদের সংবিধানের মূল কাঠামো বজায় রেখেই সংস্কারের বিষয়গুলো আলোচনা করা উচিত। সংবিধান সংশোধনের যে প্রস্তাব আসবে, তা জনগণের সামনে উপস্থাপন করা উচিত এবং এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।"
সংবিধানের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও আনুগত্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, "যে সংবিধানের ভিত্তিতে এতদিন দেশ পরিচালিত হয়েছে, যার মাধ্যমে জনগণ তাদের অধিকার ও স্বাধীনতা পেয়েছে, সেটিকে হঠাৎ বাতিল করে দেওয়া যুক্তিসঙ্গত নয়। বরং, যদি কোনো বিশেষ কারণে সংস্কারের প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে তা সুসংহতভাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।"
তিনি জোর দিয়ে বলেন, "গোটা সংবিধান বাতিল করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের উচিত, সংবিধানের যে অংশগুলো সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে, তা চিহ্নিত করে সুনির্দিষ্টভাবে আলোচনা করা। জনগণের মতামত নিয়ে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে যদি প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়, তবেই তা যথাযথ হবে।"
সংবিধান সংস্কার প্রসঙ্গে আলোচনা শুরু হওয়া উচিত উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, "সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা কোথায় রয়েছে, সেটি যুক্তিসহকারে তুলে ধরা প্রয়োজন। যারা সংস্কারের পক্ষে প্রস্তাব তুলে ধরছেন, তাদের যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে হবে কেন এটি প্রয়োজন এবং জনগণের মতামত নিয়ে ঐক্যমতের ভিত্তিতে সংস্কারের প্রস্তাব গ্রহণ করা যেতে পারে। কিন্তু কোনোভাবেই পুরো সংবিধান বাতিল করে দেওয়া উচিত নয়।"
সংবিধান একটি রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো এবং জাতির পরিচয় বহন করে। তাই এটি রক্ষা করাই আমাদের দায়িত্ব। আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে যদি প্রয়োজনীয় সংস্কার করা যায়, তবে সেটি গণতান্ত্রিক ও যৌক্তিক হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
সূত্র ঃ https://www.youtube.com/watch?v=7YXZ7sHhDXo
রাজু