
দীর্ঘ ৬ বছর পর বিএনপি’র বর্ধিত সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দমন পীড়ননীতির শিকার হওয়া গণহত্যার শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বেগম খালেদা জিয়া বক্তব্য শুরু করেন। আন্দোলনে আহতদের প্রতি সমবেদনা জানান বেগম খালেদা জিয়া।
বেগম জিয়া বলেন চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে অবস্থান করলেও তিনি দেশের মানুষের পাশেই আছেন।
দীর্ঘ ১৫ বছর গণতন্ত্রের জন্য, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য জনগণ যে নিরন্তর সংগ্রাম করেছেন এবং অসংখ্য সহকর্মী প্রাণ দিয়েছেন,জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়েছে, এখনও আদালতের বারান্দায় ন্যায়বিচারের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন,এতে শুধু দল নয়, জাতি চিরকাল স্মরণ রাখবে বলে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন,“দেশ আজ এক সঙ্কটময় সময়ে অতিক্রম করছে।আপনাদের এবং ছাত্রদের সমন্বিত আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিস্ট শাসকেরা বিদায় নিয়েছে। একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। তাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা রাষ্ট্র মেরামতের ন্যূনতম সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা “
বেগম জিয়া আরো বলেন,“ আমার অবর্তমানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং আপনাদের সকলকে সাথে সঙ্গে নিয়ে নিরন্তর কাজ করে দলকে সুসংহত করেছেন৷।আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
খালেদা জিয়া বিশ্বাস করেন,কর্মীরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে আরও উজ্জীবিত হয়ে আগামী নির্বাচনে সাফল্যের জন্য ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করবেন।এমন কোনও কাজ করবেন না যাতে আপনাদের এত দিনকার সংগ্রাম আত্মত্যাগ বিফলে যায়।
তিনি বলেন,“আমাদের সবসময় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সেই উক্তি মনে রাখা দরকার-ব্যক্তির চেয়ে দল বড় দলের চেয়ে দেশ।”বেগম খালেদা জিয়া বলেন,“বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ, বিশেষ করে তরুণ সমাজ আজ এক ইতিবাচক গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংকীর্ণতা ভুলে গিয়ে একটা জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের কাজ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন,“এখনও ফ্যাসিস্টের দোসররা এবং বাংলাদেশের শত্রুরা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্জনকে নস্যাৎ করার জন্য গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে।ইস্পাত কঠিন ঐক্যের মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এবং চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দিতে হবে।”
গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে বলে জানান খালেদা জিয়া।তিনি আহ্বান করেন,“আসুন আমরা আগামী দিনগুলোতে শহীদ জিয়াউর রহমানের স্বপ্নের আধুনিক, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করি এবং এত ত্যাগের বিনিময়ে প্রাপ্ত এ অর্জনকে সুসংগত এবং ঐক্যকে আরও বেগবান করি।”
বেগম জিয়া বলেন,“আমি যুক্তরাজ্য থেকে অসুস্থ অবস্থায় আপনাদের আহ্বান জানাতে চাই ,আসুন জনগণকে সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কে পূর্বের ন্যায় আন্দোলন, সংগ্রাম ও রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব প্রদানে আরও ঐক্যবদ্ধ এবং সুসঙ্গতভাবে গড়ে তুলি।আপনাদের মাধ্যমে ছাত্র যুবক সহ দেশবাসীর কাছে আহ্বান রাখতে চাই, আসুন প্রতিহিংসা প্রতিশোধ নয়,পারস্পরিক ভালোবাসা ও ভাতৃত্বের মাধ্যমেই আমরা সকলে মিলে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটি বাসযোগ্য উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করি। আল্লাহ পেয়েছে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।”
সারা দেশ থেকে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছেন। বিএনপি’র সর্বশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ‘লো মেরিডিয়ানে’। ওই সভায় দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বক্তব্য দিয়েছিলেন।
আফরোজা