ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১

নতুন ছাত্র সংগঠনের ঘোষণা আসতে পারে আজ

ছাত্র-জনতার নতুন দল বিষয়ে এখন ব্যাপক আলোচনা

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ছাত্র-জনতার নতুন দল বিষয়ে এখন ব্যাপক আলোচনা

ছাত্র-জনতার উদ্যোগে একটি নতুন রাজনৈতিক দল

জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-জনতার উদ্যোগে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব হতে যাচ্ছে। এখন চায়ের দোকান থেকে রাজনীতি, কূটনীতি সর্বত্র চলছে  সে বিষয়ে আলোচনা। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে নতুন রাজনৈতিক দলটির। ওইদিন বিকেল ৩টায় রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জাতীয় সংসদের সামনে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে নতুন এ রাজনৈতিক শক্তির সূচনা হবে। 
ইতোমধ্যে নতুন রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব নিতে মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন নাহিদ ইসলাম। পদত্যাগের পর এক দফার এই ঘোষককে নিয়ে দেশজুড়েই প্রশংসার হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া দলের সদস্য সচিবের পদে আখতার হোসেনের নাম অনেকটাই চূড়ান্ত বলে দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছেন। তিনি এখন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব। এ এছাড়া মুখ্য সংগঠক, মুখপাত্রসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে জুলাই বিপ্লবে অংশ নেওয়া, নেতৃত্ব দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ ছাত্রনেতারা আসছেন। 
নতুন রাজনৈতিক দলটির প্রধান টার্গেট থাকবে তারুণ্য ভোটাররা। যারা বিগত ১৬ বছর হাসিনার শাসনামলে ভোট দিতে পারেননি। দল ঘোষণার দিন দুই হাজার শহীদ পরিবার এবং ৩১ হাজার আহত ব্যক্তির চাওয়া-চাহিদা অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। শহীদ পরিবারকে সামনে রেখেই শপথ অনুষ্ঠান হবে। এবং সেখানে দুই হাজার শহীদের খুনিদের বিচারের প্রতিশ্রুতি থাকবে নতুন দলটির অন্যতম এজেন্ডা। তার আলোকে ১৫ দিনের বিশেষ কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে। 
জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ রংপুরের আবু সাঈদের বাড়ি থেকে লংমার্চ শুরু করে চট্টগ্রামের শহীদ ওয়াসিমের বাড়ি পর্যন্ত লংমার্চ করার প্রাথমিক কর্মসূচি দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ছাত্র নেতৃত্বদ্বয় বলছেন, নতুন রাজনৈতিক দল গঠন হলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবেই থাকবে। এই প্ল্যাটফর্ম স্বতন্ত্র হিসাবে থাকবে।  এই প্ল্যাটফর্ম প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে।

একই সঙ্গে চব্বিশের ছাত্র-জনতার সকল হত্যার বিচার বাস্তবায়ন পর্যন্ত এটি কাজ করবে। একই সঙ্গে আজ নতুন দলটির একটি ছাত্র সংগঠনের ঘোষণা হতে পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেখানে যারা জুলাইয়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন এখনো যাদের ছাত্রত্ব রয়েছে তারা অগ্রভাগে থাকবেন।  
ইতোমধ্যে দক্ষ ও অভিজ্ঞদের দ্বারা নতুন দলের জন্য দলীয় গঠনতন্ত্র তৈরি করা হয়েছে। ১৯৪৭,  ১৯৭১ এবং ২০২৪-এর চেতনার ওপর ভিত্তি করেই সব তৈরি হয়েছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞ, রাজনীতি, কূটনীতিতে অভিজ্ঞ এবং বিশ্বব্যাপী রাজনীতির গ্রহণযোগ্যতাকে প্রাধান্য দিয়েই দলের মূল ভিত্তি দাঁড় করানো হয়েছে। বিশেষ করে তরুণদের চাওয়া চাহিদা থাকবে বেশি অগ্রাধিকার।

নতুন দলে নেতৃত্বে আসছে এমন কয়েকজন জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, দুই রাজনৈতিক দলের ওপর দেশের মানুষ অনেকে বিরক্ত। এই দলগুলো নিজেদের সংস্কার করতে পারে না। তরুণদের বেশি অগ্রাধিকার দেন না। যার পেশিশক্তি রয়েছে, অবৈধ পথে সম্পদ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের জনপ্রতিনিধি বানানো হয়।

ফলে দেশের জনগণ অধিকার এবং সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। তরুণরা কী চায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলো অগ্রাধিকার দেন না। দলের ভাবনাকেই তারা সব সময় গুরুত্ব দেন। তাই এই নতুন দলটি নতুন রাজনীতির  বন্দোবস্ত হবে বলে মনে করছেন তারা। 
নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব জনকণ্ঠকে বলেছেন, আমাদের সবারই প্রত্যাশা অনুযায়ী নাহিদ ভাই ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। তিনি রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক হোক এটা সবারই চাওয়া। এর পাশাপাশি সদস্য সচিব হিসেবে আখতার হোসেন ভাই সবারই পছন্দের।

পাশাপাশি নাছির উদ্দিন পাটওয়ারী, সারজিস ভাই, হাসনাত ভাইসহ অনেকে আলোচনায় রয়েছেন। তবে এ বিষয়গুলো এখনো আলোচনার মধ্যে রয়েছে। যারা ২৪ এর আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন সবারই মতামত নেওয়া হচ্ছে, অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সবাইকে নিয়ে দল ঘোষণা করা হবে। 
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম জানিয়েছেন, বিগত দিনে মহান জাতীয় সংসদে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। সেখানে ব্যক্তিস্বার্থ ও আশা-আকাক্সক্ষা  প্রাধান্য পেয়েছে। যার মাধ্যমে এ দেশে স্বৈরতন্ত্র কায়েম হয়েছে। তাই আমরা সেই জাতীয় সংসদকে সামনে রেখে  শপথ গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছি।

আমরা চাই নতুন বাংলাদেশে ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জনগণের স্বার্থ প্রাধান্য পাবে। আমাদের দলের আত্মপ্রকাশের দিনে বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, জুলাই বিপ্লবের আহত, শহীদ পরিবারের সদস্য, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী, ধর্মীয় প্রতিনিধি, প্রবাসী ও বিগত সময়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে লড়াই-সংগ্রামে থাকা ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত থাকবেন। আমরা আশা করছি এর মাধ্যমে বাংলাদেশে নবদিগন্তের আরেকটি দ্বারের সূচনা হবে।
নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমরা আত্মপ্রকাশের দিন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করব। যেটি আমাদের সর্বোচ্চ ফোরামে আলাপ-আলোচনা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আগামী দিনে আমাদের নেতৃত্ব নির্ধারণ হবে পার্টির গঠনতন্ত্রের আলোকে নির্বাচনের মাধ্যমে। তিনি জানান, এ পর্যন্ত জনতার দলসহ ৩০টি নাম প্রস্তাবনা এসেছে নতুন রাজনৈতিক দলের জন্য।

দলের জন্য কয়েকটি নাম প্রস্তাব এসেছে, সেগুলো হলো- জনতার দল, নতুন বাংলাদেশ পার্টি, বিপ্লবী দল, নাগরিক শক্তি, ছাত্র-জনতা পার্টি, বাংলাদেশ বিপ্লবী পার্টি, রিপাবলিক পার্টিসহ ৩০টি নাম। আমরা এই নামগুলো পর্যালোচেনা করেছি। আখতার বলেন,পরিবারতন্ত্র থেকে দেশের জনগণ মুক্তি চায়, দখলদারিত্ব মাফিয়া নীতিও দেশের জনগণ দেখতে চায় না। জনগণ চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে নতুন রাজনৈতিক দলের ভূমিকা দেখতে চায়। 
দল গঠনে যুক্ত থাকা নেতারা জানিয়েছেন, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটওয়ারী, প্রধান সংগঠক সারজিস আলম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, প্রধান সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ ও সমন্বয়ক মাহিন সরকার, নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন ও সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা এবং জুলাই অভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখা রাফে সালমান রিফাত, আলী আহসান জোনায়েদ ও আরিফিন মোহাম্মদ হিজবুল্লাহসহ বেশ কয়েকজনের নাম গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

মুখপাত্র পদটি নারীদের ভেতর থেকে নেওয়া হচ্ছে। সামান্তা শারমিন অথবা উমামা ফাতেমা- এ দুজনের একজন মুখপাত্র চূড়ান্ত হবেন।  ছাত্র ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার যারা জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের বড় একটি অংশকেও দলে যুক্ত রাখা হচ্ছে।

×