
বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে জুলাই এখন এক ‘মধুর চাক’। সবাই যেন মধু আহরণের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তবে, এই মধু আহরণের পেছনের মূল কারণ কী? কার কৃতিত্বে এই পরিবর্তন এলো? এক টকশোতে উপস্থাপকের এই প্রশ্নে বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বললেন, "জুলাই কিন্তু আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।"
তাঁর মতে, যত লম্বা রাতই হোক, শেষ একসময় আসেই। পৃথিবীর প্রতিটি দেশে শাসনের পরিবর্তন ঘটে, বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু এই পরিবর্তনটা যে জুলাইতেই ঘটবে, তা কেউই ভাবেননি।
এমনকি জুন মাসেও কেউ অনুমান করতে পারেননি, জুলাইয়ের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহেও বিষয়টি এতটা স্পষ্ট ছিল না। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে ঘটনার মোড় বদলে যায়। এটা জনগণের বিজয়, এক ধরনের জনযুদ্ধ, যা মুক্তিযুদ্ধের মতোই জনগণের অংশগ্রহণে সম্পন্ন হয়েছে।
মাসুদ কামাল ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ভাত রান্নার সঙ্গে এই পরিবর্তনের তুলনা করেন।তিনি বলেন, “যখন ভাত রান্না করা হয়, তখন চাল পানিতে ভিজিয়ে আগুনে চড়ানো হয়। প্রথম কয়েক মিনিটে কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না। এরপর ধীরে ধীরে তাপের প্রভাবে চাল সেদ্ধ হতে থাকে, কিন্তু তাও দৃশ্যমান হয় না। ১৫ মিনিট পর যখন ঢাকনা তুলে দেখা হয়, তখন বোঝা যায় চাল ফুটেছে, ভাত তৈরি হয়েছে।"
তাঁর মতে, জুলাইয়ের ঘটনা হুট করে আসেনি। দীর্ঘদিন ধরে জনগণের ক্ষোভ, বঞ্চনা, দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ধীরে ধীরে জমে উঠছিল। ঠিক আগুনে চালের মতো, তাপ ছিল, চাপ ছিল, কিন্তু সেটা বোঝা যাচ্ছিল না।
কিন্তু যখন সব উপাদান একসঙ্গে কাজ করল, তখন জুলাইয়ে এসে পরিবর্তন দৃশ্যমান হলো। এখন অনেকে দাবি করছেন, তাঁরাই এই ভাত রান্না করেছেন, তিনিই মূল রাঁধুনি। অথচ এই রান্নার পেছনে বহু মানুষের শ্রম, ত্যাগ, সময় ও প্রক্রিয়া ছিল।
এ প্রসঙ্গে তিনি ১৯৭৫-এর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেন, যখন রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও ক্ষমতার লড়াই অব্যাহত ছিল। ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে একই পরিণতি হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি। তাঁর মতে, জনগণই এই পরিবর্তনের মূল শক্তি, তাই কৃতিত্ব নেওয়ার প্রতিযোগিতা একসময় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সূত্র:https://tinyurl.com/5n7t9u7y
আফরোজা