
ছবি : জনকণ্ঠ
সংস্কার না করে যদি আপনি নির্বাচনে যান, তাহলে আপনি একটা অবৈধ সরকার বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার। তিনি বলেন, সংস্কার করলেই আপনার ভ্যালিডিটি থাকবে। আপনার ম্যান্ডেট থাকবে। এই সংস্কার আপনাকে করতে হবে। আর না করলে, আপনি অবৈধ সরকার। আমরা যদি কোনদিন ক্ষমতায় আসতে পারি, এই অবৈধ সরকার হওয়ার কারণে, আমরা আপনার বিচার করব।কথা পরিষ্কার।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আলোচনা সভায় তুষার এসব কথা বলেন।
আলাউদ্দীন মোহাম্মদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, সহ-মুখপাত্র সালেহ উদ্দীন সিফাতসহ অন্যান্যরা।
তিনি আরো বলেন, “এখন লাস্ট আমি যে কথাটা বলতে চাইবো সংবিধান সংস্কার কমিশনের উদ্দেশ্যে, আপনারাও কিন্তু গোজামিলের মধ্যে আছেন। এই যে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রফেসর আলী রিয়াজকে আমরা অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি, কিন্তু আপনারাও কিন্তু গোজামিলের মধ্যে আছেন, দয়া করে রাজনৈতিক দলগুলোর চাপে কোন ধরনের গোজামিল আমাদেরকে দিবেন না। কি লিখেছেন আপনারা প্রস্তাবনার মধ্যে, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে।
আপনারা লিখেছেন যে, জনগণের সম্মতি নিয়ে আমরা করে ফেলবো। আপনারা কারা! জনগণ করবে সংবিধান, তো জনগণ সংবিধান করতে হলে আপনাকে গণপরিষদ নির্বাচন দিতে হবে। সাহস করে কেন এই কথাটা বলতে পারলেন না যে, গণপরিষদের মধ্য দিয়ে সংবিধানের প্রণয়ন করা হবে, কিংবা সংস্কার করা হবে। এই কথাটা আপনাদেরকে বলতে হবে।
যেটা উচিত, ঐচিত্ব, যেটা ঠিক, যেটা করতে হবে, সেটাই আপনি বলবেন। রাজনৈতিক দলগুলো এটা কি প্রতিক্রিয়া দেখাবে, সেটা ভাবা আপনার কাজ না।”
সারোয়ার তুষার বলেন, “দ্বিতীয় ব্যাপার হচ্ছে, আপনারা এখনো দেখতেছি রাষ্ট্রভাষা ফ্যাটিসের মধ্যে ভুগতেছেন। রাষ্ট্রভাষা একটা খুবই সেকেলে এবং ফালতু ধারণা। কিসের রাষ্ট্রভাষা! আপনি এটাকে রাষ্ট্রভাষা না, বলেন যে, দাপ্তরিক ভাষা, হবে দাপ্তরিক ভাষা। রাষ্ট্রের কোন ভাষা থাকার দরকার নাই। দাপ্তরিক ভাষা হবে। আপনি কোন কোন ভাষা দিয়ে রাষ্ট্র চালাবেন, দপ্তরের ভাষাগুলো কি হবে, অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ গুলো কি হবে, সেইগুলো আপনি বলবেন এবং সেটা শুধু বাংলা হতে পারবে না।
আপনি বলছেন যে, রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা, বাকি ভাষাগুলো থাকবে মাতৃভাষা, তো যদি কোন ইনসেন্টিভ না থাকে, কেন সে তার ভাষা চর্চা করবে! আপনি চাকরির ক্ষেত্রে যে বাংলা পারবে, যে ইংরেজি পারবে, সে পাবে চাকরি। তাহলে ওই যে চাকমা লোকটা, ওই যে আমাদের সাওতাল, তারা কেন তার ভাষাটা, তার ভাষা শেখার তো চর্চা করার তো কোন ইনসেন্টিভ আপনি রাখতেছেন না। সেই কারণে দাপ্তরিক ভাষা করতে হবে। ঠিক আছে বাংলা থাকবে, আরো দুইটা ল্যাঙ্গুয়েজ করেন।”
তিনি বলেন, “ইন্ডিয়ায় অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ অন্তত ২৩ টা, ওটাকে তারা রাষ্ট্রভাষা বলে না। আমরা যেহেতু আপনারা এই অশিক্ষার গহবরে আমাদেরকে ডুবিয়ে রাখছেন, যে বাংলা হচ্ছে রাষ্ট্রভাষা আমাদের। এই কারণে আপনাদের মনে হয়, হিন্দিও বুঝি সেখানে রাষ্ট্রভাষা। হিন্দি ওখানে হিন্দি ভারতের রাষ্ট্রভাষা না, হিন্দি হচ্ছে অফিশিয়াল ভাষা।
সুতরাং আমি শেষ করবো আমার বক্তব্য আজকের এই দিবসের শেষে আমরা যেটা বলতে চাই যে, গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র না করলে, আমরা ২১ এর যে শহীদ এবং ২৪ এর আমাদের যারা শহীদ আছে, তাদের কারো প্রতি আমরা ইনসাফ করতে পারবো না।
এবং রাজনৈতিক দলগুলো বারবার বাংলাদেশের গুণগত পরিবর্তনের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে, এবারও তারা দাঁড়াচ্ছে আমরা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের পলিটিক্যাল এডুকেশনের মাত্রা, পলিটিক্যাল সচেতনতার মাত্রা এই পর্যায়ে গেছে, যে সিফাত বলে গেছেন, সংস্কার নাকি বুঝে না! এটা নাকি তারা বলতে চায়। আরে ভাই, একটু ঢাকা শহরে আপনাদের তো গাড়ি আছে, গাড়ি নিয়ে ঢাকা শহরে একদিন রাতের বেলা ঘুরেন, ঢাকা রাতের বেলা জ্যাম থাকে না, ঘুরেন, দেখেন, দেয়ালে কি কি লিখছে আমাদের তরুণরা। সংস্কার বুঝে না এই তরুণরা, আপনারা বলতে চান। তাহলে চেনেন না আপনারা। বাংলাদেশের যাদের ভোট চান, তাদেরকে আপনারা চিনতেই পারেন নাই এখনো পর্যন্ত।
তাদের ভোটে কিভাবে ক্ষমতায় আসবেন! এইজন্য যখন বলা হয়েছে যে, ১৭ বছর বয়স থেকে ভোটাধিকার দেওয়া হবে। তখন তারা কিন্তু কেঁপে গেছে। কারণ তারা জানে যে, এই তরুণদের ভোট তারা পাবে না।”
সারোয়ার তুষার বলেন, “আমি ইউনূস সাহেবের প্রতি লাস্ট একটা কথা বলতে চাই, আপনি যে আমরা আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ, যে আপনি বাংলাদেশে একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, খুবই ক্রিটিক্যাল সময়ে, বাংলাদেশের আপনি এসেছেন, দায়িত্ব নিয়েছেন এবং বিশ্ব সফল হবেন, যে সংস্কারের ওয়াদা আপনি করেছেন, সেই সংস্কার আপনাকে করতে হবে। আপনি শুধু বলে দেখেন, যে আমি সংস্কার করব। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি জনগণ আপনার পক্ষে থাকবে। আপনি সাহস করে বলেন। আপনি কেন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ভ্যালিডেশন চান! আপনি জনগণের কাছ থেকে ভ্যালিডেশন চাইবেন।
এবং দ্বিতীয় কথা হচ্ছে যে, আপনার সামনে দ্বিতীয় অপশন কি জানেন! আপনি একটা লুজার হবেন। এখন আপনি সিদ্ধান্ত নেন, আপনি কোনটা হবেন। আপনি যদি লুজার হন, তাহলে আপনার কি ক্ষতি হবে জানেন, আপনি যে ব্যক্তিগতভাবে আপনি যে নোবেল লরিয়েট হইছেন, ওইটাও হারায় যাবে ইতিহাসে। সুতরাং আপনার সামনে এখন হচ্ছে, আপনি নোবেল লরিয়েট, ইতিহাসের মাথায় আছেন।
এখন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংস্কার করার মধ্য দিয়ে, বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের সামনে আপনি এস্টাবলিশ করেন, আপনি ইতিহাসের মাথার উপরে থাকবেন। আর যদি এটা না করতে পারেন, তাহলে এই নোবেল লরিয়েট আছেন তো, এরপর পায়ে চলে যাবেন। কেউ লুজারকে মনে রাখে না। সুতরাং আমি আপনাদেরকে অনুরোধ করবো, অন্তর্বতী সরকারকে, একটা কাজ করে দেখান, একটা কাজ করে দেখান, তাহলে আমরা বুঝতে পারবো যে, আপনারা সরকার। এখনো মনে হয় না আপনাদেরকে সরকার, আমাদের মনে হয় না সরকার।
একটা কাজ করে দেখান, যেটা রাজনৈতিক দলগুলো চায় না। রাজনৈতিক দলগুলো চায় না, এমন একটা কাজ আপনি শক্ত থেকে বলেন যে, আমি এটা করব এবং জনগণ আমার পাশে আছে। আমি জনগণকে পাশে চাই, বলে দেখেন এটা, দেখেন তারপর কি ঘটে।”
তিনি আরো বলেন, “সুতরাং ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আমাদের কোন ক্ষোভ নাই। কিন্তু আমরা তার প্রতি আমাদের প্রত্যাশার মাত্রার পারদ এত বেশি, এত বড় যে, আমরা তার কাছ থেকে আরো ফার্মনেস, আরো ফোকাস আচরণ আশা করি।
তিনি যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কোন এক পত্রিকা সম্পাদককে, যে এটা যেন কপালে লাগলে লাগলো, না লাগলে নাই। ভাই বাংলাদেশে মানুষের জীবন নিয়ে এভাবে খেলাধুলা করতে পারবেন না আপনি। এটা এত সহজ ব্যাপার না, যে আমি আসছি, পরীক্ষা করে দেখতেছি। যদি লাইগা যায়। এটা যদি লাইগা যায় ব্যাপার না। আমাদের জীবন-মৃত্যুর ব্যাপার এটা।
প্রতিদিন মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে ঘুরতেছি আমরা ঢাকা শহরে। আমাদের পেছনে গুপ্তহন্তাকারকরা আমাদের পেছনে পেছনে ঘুরতেছে। সুযোগ পেলে আমাদেরকে মেরে ফেলবে। আর আপনি বলেন, যদি লাইগা যায়। এই যদি লাইগা যায় রাজনীতি আমরা আপনাকে করতে দেবো না। আপনি যে রাজনীতি আপনার করার কথা, যেটা আপনার ম্যান্ডেট, সংস্কার করবেন।
সংস্কার না করে যদি আপনি নির্বাচনে যান, তাহলে আপনি একটা অবৈধ সরকার। সংস্কার করলেই আপনার ভ্যালিডিটি থাকবে। আপনার ম্যান্ডেট থাকবে। এই সংস্কার আপনাকে করতে হবে। আর না করলে, আপনি অবৈধ সরকার। আমরা যদি কোনদিন ক্ষমতায় আসতে পারি, এই অবৈধ সরকার হওয়ার কারণে, আমরা আপনার বিচার করব। কথা পরিষ্কার। ”
মো. মহিউদ্দিন