
ছবি: সংগৃহীত।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেন। ছবির ক্যাপশনে লেখা ছিল, ‘দুইজন বন্ধু, একজন ছোটভাই! জাতির প্রত্যাশার ভাষা আমাদের পাথেয় হোক।’ ছবিতে আখতার হোসেনের সঙ্গে ছিলেন নাহিদ ইসলাম ও মাহফুজ আলম। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পোস্টের মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে একটি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। দলটির আহ্বায়কের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন নাহিদ ইসলাম। সূত্রমতে, তিনি শীঘ্রই অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। তবে দলের দ্বিতীয় শীর্ষ পদ (সদস্যসচিব) কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে এতদিন মতবিরোধ থাকলেও আখতারের সাম্প্রতিক পোস্টের পর বিষয়টি অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গেছে।
গণ-অভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন নাহিদ ইসলাম। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলে তিনি উপদেষ্টা হন। অন্যদিকে, সরকার গঠনের তিন সপ্তাহ পর মাহফুজ আলম প্রথমে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পান এবং পরে, গত নভেম্বরে তিনি উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। গণ-অভ্যুত্থানের পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠিত হলে আখতার হোসেনকে এর সদস্যসচিব করা হয়।
মাহফুজ আলম ও আখতার হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন এবং সহপাঠী ছিলেন। মাহফুজ কোনো ছাত্রসংগঠনের সরাসরি নেতৃত্বে না থাকলেও তিনি ক্যাম্পাসের পাঠচক্র, পত্রিকা প্রকাশ এবং বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায় সক্রিয় ছিলেন। অন্যদিকে, আখতার ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আলোচনায় আসেন। ২০১৯ সালে তিনি ছাত্র অধিকার পরিষদের প্যানেল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সমাজসেবা সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং পরবর্তীতে ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
অন্যদিকে, নাহিদ ইসলাম ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্র অধিকার পরিষদের প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
২০২৩ সালের অক্টোবরে আখতার ও নাহিদের নেতৃত্বে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’ নামে একটি নতুন ছাত্রসংগঠন গঠিত হয়। এতে আখতার আহ্বায়ক এবং নাহিদ সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব নেন। ছাত্রশক্তির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে মাহফুজ আলমের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও তিনি সরাসরি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
গণ-অভ্যুত্থানের পর জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠনের পেছনে মাহফুজ আলম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বলে জানা গেছে। দলটির আত্মপ্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি। রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হতে পারে, তবে ওই দিন বড় পরিসরে জনসমাবেশের পরিকল্পনা নেই।
নতুন রাজনৈতিক দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার আগে আখতার হোসেনের ফেসবুক পোস্ট নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। জাতীয় নাগরিক কমিটির এক শীর্ষ নেতা গণমাধ্যমকে জানান, ‘ছবিটি দেখার পর আর কোনো সংশয় থাকার কথা নয় যে নাহিদ ও আখতারের নেতৃত্বেই নতুন দলের আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে। এই দুজনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও বোঝাপড়া সুদৃঢ়, ফলে এই নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ দেশকে ইতিবাচক দিকনির্দেশনা দিতে পারবে বলে আমরা আশাবাদী।’
সায়মা ইসলাম