ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১

‘বিএনপি নেতা’ পরিচয়ে মেঘনার খাল থেকে অবাধে বালু উত্তোলন

গিয়াস উদ্দিন ফরহাদ

প্রকাশিত: ১৯:৩৬, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২২:৪২, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

‘বিএনপি নেতা’ পরিচয়ে মেঘনার খাল থেকে অবাধে বালু উত্তোলন

নোয়াখালীর সর্ব দক্ষিণের সুবর্ণচর ও বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় মেঘনা নদীর ভরাট হয়ে যাওয়া চরে দুই একর জমি বন্দোবস্ত পেয়েছিলেন ভূমিহীন বিবি মরিয়ম (৫০)। জমির এক পাশে লাগিয়েছেন কলাগাছ। লক্ষ্য ছিল জমিটি ভরাট করে সেখানে বসতি গড়বেন। তবে চরের সঙ্গে লাগোয়া মেঘনার খাল থেকে ড্রেজার দিয়ে অবাধে তোলা হচ্ছে বালু। এতে মরিয়মের বসতি গড়ার স্বপ্ন এখন ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে মেঘনার এই খাল থেকে অবাধে বালু তুলছে ১৪ থেকে ১৫ জনের একটি চক্র। তাঁরা নিজেদের বিএনপির নেতা পরিচয় দেন। যদিও কারও কোনো পদ-পদবি নেই বলে স্থানীয় বিএনপির নেতারা নিশ্চিত করেছেন।

বিবি মরিয়ম বলেন, তাঁর বন্দোবস্ত পাওয়া চর থেকেও বালু তোলার খবর পেয়ে তিনি বাধা দিয়েছিলেন। এ সময় তাঁর ওপর হামলা করেন বালু তোলায় জড়িত ব্যক্তিরা। পরে বালু তুলবেন না জানিয়ে তাঁর কাছ থেকে টাকাও আদায় করা হয়েছে; তবু বালু তোলা বন্ধ হয়নি। এ বিষয়ে নানা জায়গায় অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা মিলছে না। এ ঘটনায় সাতজনের বিরুদ্ধে হাতিয়া থানা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলেও জানান বিবি মরিয়ম।

শনিবার সরেজমিনে হাতিয়ার এ পাড়ে হরণী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন লেংড়ার দোকান এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দুটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে মরিয়মের বন্দোবস্ত পাওয়া জমিসহ আশপাশের এলাকায় মেঘনার ওই খাল থেকে বালু তোলা হচ্ছে। সাংবাদিক এসেছেন খবর পেয়ে আরিফ নামের এক ব্যক্তি বালু তোলায় ব্যবহৃত ড্রেজারের পাম্পটি বন্ধ করে দেন। খালে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলায় ব্যস্ত থাকা মো. বেলায়েত ও দ্রুত তীরে উঠে যান। তাঁদের কাছে বালু তোলার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে দুজনই উত্তর না দিয়ে কৌশলে সটকে পড়েন।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দারা জানান, শুধু লেংড়ার দোকান এলাকা নয়, পার্শ্ববর্তী টিনের মসজিদ, কাঠের পোল এলাকাসহ অন্তত ১০টি স্পট থেকে বালু তুলে বিক্রি করছে চক্রটি। স্থানীয় প্রশাসনের নজর এড়াতে কিছুদিন ধরে রাতে বালু তোলা হচ্ছে। দিনে এসব বালু বিভিন্ন যানবাহনে করে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা হয়। ডোবা, পুকুর ভরাটসহ নানা কাজে এসব বালু বিক্রি হচ্ছে। বালু তোলার প্রতিবাদ করলে এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা নিজেদের বিএনপির লোক পরিচয় দিয়ে বাসিন্দাদের ভয় দেখান।

খালের পার্শ্ববর্তী হরণী উত্তর জোড়খালী এলাকার বাসিন্দা লোকমান হোসেন বলেন, বিগত সরকারের সময় আওয়ামী লীগের পরিচয়ে কিছু ব্যক্তি বালু তুলেছিলেন। তবে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের কারণে একপর্যায়ে ওই ব্যক্তিদের বালু তোলা বন্ধ হয়ে যায়। আরেক বাসিন্দা মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘যেভাবে খাল থেকে দিনরাত বালু তোলা হচ্ছে, ভয়ে থাকি কখন বাড়িটিই ধসে পড়ে। যাঁরা বালু তুলছেন, তাঁরা সবাই বিএনপির লোক। প্রতিবাদ করা দূরে থাক, উল্টো এসব ব্যক্তির হুমকিতে আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বালু তোলার সঙ্গে জড়িত আবুল হোসেন বলেন, তাঁরা ২০ হাজার ঘনফুট বালু তুলেছেন। তবে এখন আর বালু তুলছেন না। বালু তোলায় ব্যবহৃত ড্রেজারসহ যন্ত্রপাতি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তাঁদের বালু তোলার বিষয়টি স্থানীয় বিএনপির নেতারা জানেন। বিবি মরিয়মের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মেরাথল বলেন, অভিযোগ সত্য নয়। টাকা নেওয়ার কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারবেন না।

এদিকে সরেজমিনে জনকন্ঠের সঙ্গে কথা বলা বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গেল সোমবার বাড়িতে গিয়ে তাঁদের হুমকি দিয়েছেন বালু তোলায় জড়িত ব্যক্তিরা। 

বিএনপির পরিচয় ব্যবহার করে অবৈধভাবে বালু তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে হাতিয়ার হরণী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আক্তার হোসেন ওরফে দোলন বলেন, হরণী ইউনিয়নের ১ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় বঙ্গোপ সাগরের বুকে জেগে উঠা মেঘনার খাল থেকে কিছু লোক বিএনপির নাম ভাঙিয়ে বালু তুলছেন—এমন খবর তিনিও শুনেছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বালু তুলতে নিষেধ করা হয়েছে। তবু তাঁর কথা ওই ব্যক্তিরা শুনছেন না।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী শামীম বলেন, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। বালু তোলার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। 

 

ফয়সাল

×